চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা ৬ বছরে আটগুণ, প্রজনন করে সুন্দরবনে অবমুক্ত করার পরিকল্পনা
মাত্র ছয় বছরে বাঘের সংখ্যা আটগুণ করতে পেরেছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। কার্যকর প্রজনন কর্মসূচির মাধ্যমে চিড়িয়াখানাটিতে ৬ বছরে বাঘের সংখ্যা দুটি থেকে ১৬টি হয়েছে।
ছয় বছর আগে, ২০১৬ সালে দক্ষিণ অফ্রিকা থেকে ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে একজোড়া বাঘ আনে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। বাঘের নাম দেয়া হয় রাজ আর বাঘিনীর নাম পরী।
সেই রাজ-পরীর সংসারে গত ৬ বছরে ১৪ টি শাবকের জন্ম হওয়ায় চিড়িয়াখানায় এখন বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬টিতে, যার বাণিজ্যিক মূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রাজ-পরীর গায়ে কালো পশম ও কমলা ডোরাকাটা থাকলেও, তাদের ১৪টি শাবকের মধ্যে পাঁচটি শাবকের শরীরে সাদা পশম ও কালো ডোরাকাটা।
বাঘ প্রজননের সাফল্য ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ এখন নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাঘ প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা ভাবছে।
এ কেন্দ্রে প্রজনন করার পর তারা গবেষণার মাধ্যমে দেশের অন্যান্য চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কে সরবরাহের পাশাপাশি সুন্দরবনেও বাঘ অবমুক্ত করার পরিকল্পনা করছে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, 'প্রজনন কেন্দ্রটি চিড়িয়াখানার নিজস্ব অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। এ লক্ষ্যে নতুন বিশেষায়িত খাঁচা নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।'
ফখরুজ্জামান বলেন, চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রাণী বিনিময় কর্মসূচির আওতায় দুটি বাঘের বিনিময়ে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে দুটি জলহস্তী আনার চুক্তি হয়েছে।
আগামীতে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার বাঘ দেশের অন্যান্য চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কেও দেখা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ড. শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে প্রজনন কার্যক্রম এখন পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে।
তবে নতুন নির্মিত খাঁচায় আরও ১০-১২টি বাঘ থাকতে পারবে যা তাদের পুনরায় বাঘের প্রজনন শুরু করার সুযোগ করে দেবে বলে জানান ড. শাহাদাত।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া বাঘকে সুন্দরবনে অবমুক্ত করার লক্ষ্যে চিড়িয়াখানায় জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ চলছে।
ডেপুটি কিউরেটর আরও বলেন, 'গবেষণা শেষে সুন্দরবন ও চিড়িয়াখানার বাঘের একটি তুলনামূলক জিনোম স্টাডি পরিচালিত হবে। যদি কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্য না পাওয়া যায়, তবে বাঘগুলোকে বন্য পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের পরে বনে অবমুক্ত করা হবে।'
১৪টি বাঘের প্রজনন ও রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত শাহাদাত। তিনি মনে করেন, একটি বাঘও যদি সুন্দরবনে সফলভাবে অবমুক্ত করা যায় তবে এটি দেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ইতিহাসে এক নতুন দুয়ার উন্মোচন করবে।
এদিকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাকে আরও আকর্ষণীয় ও বাণিজ্যিকভাবে সফল করতে গত অক্টোবরে চিড়িয়াখানায় দুটি পুরুষ ও চারটি নারী লামা ও ক্যাঙ্গারু আনা হয়। এছাড়াও এ মাসের শুরুতে ছয়টি ম্যাকাও এসেছে।
১৯৮৯ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি বন্দর নগরীর ফয়'স লেক এলাকায় প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা এখন ১০ একর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
চিড়িয়াখানাটিতে সাদা বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, কুমির, বিভিন্ন ধরনের হরিণ ও বানর, শিম্পাঞ্জি, পেঁচা, সজারু, শেয়াল, জেব্রা, ময়ূর, উটপাখি, শকুন, টার্কি, বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর, অজগর সাপ, ইমুহ ৬৫ প্রজাতির ৬২০টি প্রাণী রয়েছে।
এ চিড়িয়াখানায় প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার দর্শনার্থী প্রাণী দেখতে আসে। টিকিট বিক্রি থেকে চিড়িয়াখানাটি বছরে ৫০ কোটি টাকা আয় করে।