এশিয়ার ২০ শীর্ষ ধনী পরিবার প্রায় ৪৮ হাজার কোটি ডলার সম্পদের অধিকারী
ভারতীয় বিলিয়নিয়ারদের দিনে দিনে আরো বিত্তশালী হওয়ার চমক যেন হঠাৎ করেই থমকে গেছে।
চলতি বছর নিউইয়র্ক ভিত্তিক শর্ট সেলার সংস্থা- হিন্ডেনবার্গের প্রবল আঘাতে গৌতম আদানির মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর বাজারমূল্য কমে যায় ১৫৩ বিলিয়ন ডলার। অবশ্য তার আগে থেকেই দেশটির অতি-অভিজাত এই ধনীদের সম্পদ যেভাবে ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করেছিল, সেই প্রবণতায় ভাটা পড়তে শুরু করে।
চার বছর আগে প্রথমবারের মতোন এশিয়ার সেরা ২০ ধনী পরিবারের তালিকা তৈরি করে মার্কিন গণমাধ্যম ও বাণিজ্যিক তথ্য পরিবেশক ব্লুমবার্গ। এই তালিকায় ভারতের পারিবারিকভাবে ধনীদের যুক্ত করা হয়। সে সময়ে তাদের মোট সম্পদমূল্য ছিল প্রায় ৮৭.৬ বিলিয়ন ডলারের। গঙ্গা-যমুনায় তারপর গড়িয়েছে অনেক পানি। ২০২২ সাল নাগাদ এশিয়া সেরাদের তালিকায় ভারতীয় ধনী পরিবারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচটিতে। তাদের অধিকারে থাকা মোট সম্পদমূল্য ছিল ১৬৮.৭ বিলিয়ন ডলার। ফলে সংখ্যার দিক থেকেও হংকংয়ের বিখ্যাত ধনী পরিবারগুলোর সাথে সমতা আনেন ভারতীয়রা।
অর্থাৎ, বিত্তবৈভবে তরতর করে উন্নতি করেছে ভারতের ধনী পরিবারগুলো। ছিল পরস্পরের সাথে এবং বৈশ্বিক প্রতিপক্ষদের সাথে কোমরভাঙ্গা প্রতিযোগীতা। চলতি বছর পুরো উল্টে গেছে বিকাশের এই তীব্র গতি। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুসারে, এ বছরে ভারতীয় পারিবারিক সাম্রাজ্যগুলো সম্মিলিতভাবে ১৭.১ বিলিয়ন ডলারের সম্পদমূল্য হারিয়েছে। এক্ষেত্রে শীর্ষে ছিল আম্বানি ও মিস্ত্রি পরিবার।
ভারতীয় ধনীদের এ মন্দদশার কারণেই এশিয়ার শীর্ষ ২০ ধনীর নিয়ন্ত্রিত সম্পদমূল্য সার্বিকভাবে ১৭.৭ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ কমেছে এবছরে। ২০১৯ সালে ব্লুমবার্গের বার্ষিক র্যাংকিং প্রকাশ শুরু হওয়ার পর যা তাদের সম্পদ কমার প্রথম ঘটনা।
প্রতিটি পরিবারের সম্পদ কমার পেছনে আলাদা আলাদা কারণ কাজ করেছে। যেমন উচ্চ জ্বালানি করের ফলে প্রভাবিত হয়েছে আম্বানিদের পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসা। তবে আদানি গ্রুপের সংকটই ভারতের শীর্ষ পুঁজিপতি পরিবারগুলোকে কমবেশি প্রভাবিত করেছে।
গৌতম আদানি তার পরিবার থেকে শীর্ষ ধনী হওয়া প্রথম ব্যক্তি, তাই ব্লুমবার্গের বংশানুক্রমিক সেরা ধনীর র্যাংকিংয়ে তিনি নেই। কিন্তু, তার কারণেই ভারতের বংশানুক্রমিক ধনীরা প্রভাবিত হয়েছেন।
কারণ, গৌতম আদানি হলেন ভারতের শীর্ষ স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী, যার সাথে কেন্দ্রীয় সরকারের সখ্যতা দীর্ঘদিনের। সরকারের দেশনির্মাণের বহু অবকাঠামো খাতে তিনিই অগ্রপথিক। তার বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গের আনা কর্পোরেট জালিয়াতির অভিযোগে, ভারতীয় কোম্পানিগুলোর প্রতিই সার্বিকভাবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যায়। আর তাতেই দেশটির বংশানুক্রমে শীর্ষ ধনীদের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর প্রভাবিত হয়। এ ঘটনায় পশ্চিমা আর্থিক কেন্দ্রগুলোর প্রত্যাশার তুলনায়- ভারতের পরিবার নিয়ন্ত্রিত গ্রুপগুলোর ব্যবসায়িক চর্চা নিয়েও সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এবিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের এশিয়া অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক জেমস ক্র্যাবট্রি বলেছেন, 'ভারতের ব্যবসাবাণিজ্যে আদানি ও তার সমকক্ষ ব্যবসায়ীদের চলমান আধিপত্য, এবং তাদের মন্দ পুঁজিবাদী চর্চাই ভারতের দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির টেকসইতা ও সাফল্য নিয়ে বেশকিছু জটিল প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে'।
গৌতম আদানি হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন তিনি। তাতে ভবি ভোলেনি। হিন্ডেনবার্গের আনীত কিছু অভিযোগের যথাযথ জবাব দিতে তিনি পারেননি। গ্রুপের নির্বাহী টিমে অধিকাংশক্ষেত্রেই পরিবারের সদস্যদের রাখা এবং গ্রুপের অধীন কোম্পানিগুলোর মধ্যে গোপনে অর্থপ্রবাহের অভিযোগ যারমধ্যে অন্যতম। যদিও ভারতে পরিবার-নিয়ন্ত্রিত ব্যবসাগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরনের চর্চা নতুন কিছু নয়।
পরিবার-নিয়ন্ত্রিত ব্যবসাগুলো ক্রমবর্ধমান এই ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলো ভারতে জ্বালানি, খাদ্য, অবকাঠামো থেকে শুরু করে বহু খাতকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এভাবেই তাদের ব্যবসা এতদিন চলে আসছে। কিন্তু, লন্ডন বা নিউইয়র্কের মতো আর্থিক কেন্দ্রের বিনিয়োগকারীদের কাছে এই চর্চাগুলো উদ্বেগজনক। এটা তাদের ভারতীয় কোম্পানিগুলোর বিষয়ে কিছুটা হলেও নিরুৎসাহিত করেছে। যার প্রভাব পড়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার দরে।
ব্যবসা পরিচালনে পারিবারিক আধিপত্য থাকায় কর্পোরেট সুশাসন শুধু ভারতের ক্ষেত্রে নয় বরং সমগ্র এশিয়া অঞ্চলেরই এক পরিচিত সমস্যা। এটি মোকাবিলায় এরমধ্যেই ভারসাম্য আনার কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হয়েছে স্যামসাং গ্রুপের নিয়ন্ত্রক লী পরিবারকে। কর্পোরেট কাঠামোকে সরলীকরণের পাশাপাশি এক বছর ধরে চলমান নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধেরও নিষ্পত্তি করেছে তারা। এর সুফলও মিলেছে, গত এক বছরে পরিবারটির সম্পদ বেড়েছে প্রায় ২২০ কোটি ডলার।
এশিয়ায় থাইল্যান্ডের ইয়োভিধ্যা পরিবারের সবচেয়ে বেশি সম্পদ বেড়েছে। ঋণগ্রহণের অনীহার জন্যও তাদের খ্যাতি আছে। জনপ্রিয় পানীয় রেড বুল বিক্রির মাধ্যমে তারা বিপুল বিত্ত গড়েছে। গত বছর জুড়ে তাদের সম্পদ বেড়েছে আরো ৭৮০ কোটি ডলার। করোনাভাইরাস লকডাউনের পর থেকেই ইউরোপীয় ভোক্তাদের মধ্যে এনার্জি ড্রিংকটির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসাও ফুলেফেঁপে উঠেছে তাদের।
মোদ্দা কথা, ভারতের বাইরের পারিবারিক সাম্রাজ্যগুলো তুলনামূলক স্থিতিশীলই ছিল। এসময়ে তাদের সম্মিলিত বিত্ত কমেছে মাত্র ১০০ কোটি ডলারেরও কম। অস্থিতিশীল পুঁজিবাজারও এক্ষেত্রে তেমন আঁচড় কাটেনি।
অর্থনীতির বিশ্বমঞ্চে দিন দিন গুরুত্ব বাড়ছে এশীয় কোম্পানিগুলোর। এই বাস্তবতায় ভারতের অতি-অভিজাতরা কীভাবে তাদের ব্যবসায়িক কাঠামোয় পশ্চিমা ধাঁচে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবেন– সেদিকেই বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার নজর থাকবে। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে ব্যবসা প্রসারে এবং বিদেশি বিনিয়োগ পেতে হলে যা খুবই জরুরি হবে আগামী দিনগুলোয়।
জেমস ক্র্যাবট্রি বলেন, 'উদীয়মান টাইকুন ও তাদের পরিবার নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোর আধিপত্য থাকা বিশ্বের একমাত্র উদীয়মান অর্থনীতি নয় ভারত। তবে এটা সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ'।
এক নজরে এশিয়ার শীর্ষ ১০ ধনী পরিবার...
১.
পরিবার: আম্বানি
দেশ: ভারত
প্রতিষ্ঠান: রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ
সম্পদ: ৭৯.৩ বিলিয়ন ডলার
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: মুকেশ ও অনীল আম্বানির বাবা ধীরুভাই আম্বানি ১৯৫০ এর দশকের শেষদিকে আজকের রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের সূচনাকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ২০০২ সালে মারা যান ধীরুভাই। মৃত্যুকালে তিনি কোনো উইল রেখে যাননি। তাই বাবার ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। পরে তাদের মায়ের মধ্যস্ততায় বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। বর্তমানে মুকেশ গ্রুপের মুম্বাই থেকে পরিচালিত ব্যবসাগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারই অধীনে আছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার কমপ্লেক্স। তিনি প্রযুক্তি, খুচরো ব্যবসা ও সবুজ জ্বালানির মতো অনেক খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করছেন। বিভিন্ন ব্যবসায়িক ইউনিটের ভার তুলে দিচ্ছেন তার সন্তানদের হাতে।
২.
পরিবার: হার্তানো
দেশ: ইন্দোনেশিয়া
প্রতিষ্ঠান: জারুম, ব্যাংক সেন্ট্রাল এশিয়া
সম্পদ: ৩৮.৮ বিলিয়ন ডলার
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ১৯৫০ এর দশকে একটি সিগারেট ব্র্যান্ড কিনে এর নাম পরিবর্তন করে জারুম রাখেন উদ্যোক্তা ওয়েই ওয়ে গুয়ান। কালক্রমে কোম্পানিটি ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম বৃহৎ সিগারেট প্রস্ততকারকে পরিণত হয়। ১৯৬৩ সালে ওয়েই এর মৃত্যুর পর তার সন্তানরা ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনার উদ্যোগ নেন এবং ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ করে ব্যাংক সেন্ট্রাল এশিয়া গড়ে তোলেন। বর্তমানে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সূত্রেই পরিবারটির অধিকাংশ ধনদৌলত।
৩.
পরিবার: কোক
দেশ: হংকং
প্রতিষ্ঠান: সুন হাং কাই প্রোপার্টিজ
সম্পদ: ৩৪.৮ বিলিয়ন ডলার
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ১৯৭২ সালে সুন হাং কাই প্রোপার্টিজের নিবন্ধন নেন কোক তাক সেং। তারপর শুধুই এগিয়ে চলা। কোম্পানিটি আজ পরিণত হয়েছে হংকংয়ের অন্যতম বৃহৎ আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে। এই ব্যবসাই কোক পরিবারের বিত্তের মূল উৎস। ১৯৯০ সালে কোক তাক সেং মারা যান। তখন ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন তার তিন ছেলে ওয়াল্টার, থমাস ও রেমন্ড। ২০০৮ সালে ভাইদের সাথে এক বিরোধে চেয়ারম্যান পদ হারান ওয়াল্টার। বর্তমানে রেমন্ড কোম্পানিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
৪.
পরিবার: মিস্ত্রি
দেশ: ভারত
প্রতিষ্ঠান: শাপোরজি পাল্লনজি গ্রুপ
সম্পদ: ২৮.৪ বিলিয়ন ডলার
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ভারতের এই ব্যবসায়িক পরিবারটির ব্যবসার ইতিহাস বেশ পুরোনো। ১৮৬৫ সালে এক ইংরেজের সাথে একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান গড়েন পাল্লনজি মিস্ত্রির দাদা। বর্তমানে প্রকৌশল ও নির্মাণসহ বিবিধ খাতে ব্যবসা রয়েছে শাপোরজি পাল্লনজি গ্রুপের। তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে টাটা সন্স– যা টাটা গ্রুপের মূল নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান। ২০২২ সালে ৯৩ বছর বয়সে প্রয়াণ হয় পাল্লনজির। তার কনিষ্ঠ ছেলে সাইরাস এর কিছুদিন পর এক কার দুর্ঘটনায় নিহত হন।
৫.
পরিবার: চেরাভানোত
দেশ: থাইল্যান্ড
প্রতিষ্ঠান: চেরয়েন পোকফান্ড গ্রুপ
সম্পদ: ২৮.২ বিলিয়ন ডলার
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: দক্ষিণ চীনের এক গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন চিয়ায়েক চর। প্রলয়ঙ্করী এক ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয় তার গ্রাম। রিক্ত চিয়ায়েক নতুন জীবন শুরুর আশায় আসেন থাইল্যান্ডে। ভাইকে সাথে নিয়ে ১৯২১ সালে শুরু করেন সবজির বীজ বিক্রির ব্যবসা। আজ এক শতক পর তার সন্তান ধানিন চেরাভানোত-ই হলেন চেরয়েন পোকফান্ড গ্রুপ চেয়ারম্যান। বহুমুখী এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর রয়েছে খাদ্য, খুচরো ব্যবসা ও টেলিকম ইউনিট।
৬.
পরিবার: ইয়োভিদ্যা
দেশ: থাইল্যান্ড
প্রতিষ্ঠান: টিসিপি গ্রুপ
সম্পদ: ২৭.৪ বিলিয়ন ডলার
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ১৯৫৬ সালে ওষুধ প্রস্তুতকারক টি.সি. ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠা করেন চালেও ইয়োভিদ্যা। পরে তিনি ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় আসেন। ১৯৭৫ সালে তিনি উদ্ভাবন করেন ক্রাটিন দায়েং নামক এনার্জি ড্রিংক (থাই ভাষায় যার অর্থ লাল ষাঁড় বা রেড বুল)। থাইল্যান্ডে এটি বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। এরপর এশিয়ায় এক সফরকালে পানীয়টির স্বাদ নিয়ে মুগ্ধ হয়ে যান অস্ট্রিয়ান বিপণনকারী দিয়াত্রিচ ম্যাতশিৎজ। চালেও এর সাথে যৌথভাবে পানীয়ের ফর্মুলায় কিছু পরিবর্তন এনে এটিকে বিশ্ব বাজারে 'রেড বুল' নামে বিক্রির উদ্যোগ নেন। এনার্জি ড্রিংকটির বিশ্ববাজার সফলতার ভিত্তিতেই আজ ইয়োভিদ্যা ও ম্যাতশিৎজ পরিবারের বিপুল বিত্ত-বৈভব।
৭.
পরিবার: চেং
দেশ: হংকং
প্রতিষ্ঠান: নিউ ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট, চৌ তাই ফুক
সম্পদ: ২৫.৯ বিলিয়ন ডলার
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: হংকং-ভিত্তিক অলঙ্কার ব্যবসা চৌ তাই ফুক জুয়েলারি যাত্রা শুরু করে চেং পরিবারের হাত ধরে। ১৯২৯ সালে এর প্রতিষ্ঠা। চেং পরিবারের সদস্যরা এখন হংকং শহরের অন্যতম বৃহৎ আবাসন প্রতিষ্ঠান নিউ ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্টকেও নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের আরো কিছু নির্মাণখাতের কোম্পানি রয়েছে।
৮.
পরিবার: পাও উ
দেশ: হংকং
প্রতিষ্ঠান: বিডব্লিউ গ্রুপ, হুইলক
সম্পদ: ২২.৬ বিলিয়ন ডলার
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ১৯৫৫ সালে প্রথম জাহাজ কেনার মাধ্যমে শিপিং ব্যবসায় নাম লেখান পাও ইয়ো-কং। ১৯৭৯ সাল নাগাদ তার কোম্পানির জাহাজের সংখ্যা ২০০টির বেশি ছাড়িয়ে যায়। হয়ে ওঠেন সেকালের সর্ববৃহৎ বেসরকারি বাল্ক-শিপিং বহরের অধিকারী। এরপর বাজার পরিস্থিতির সাথে তাল মেলাতে ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনেন পাও। যোগ দেন আবাসন খাতে। ১৯৯১ সালে তার মৃত্যুর পর ব্যবসার দায়িত্ব নেন তার চার কন্যা ও তাদের পরিবার। তাদের সম্পদের প্রধান উৎস হংকং-ভিত্তিক আবাসন কোম্পানি হুইলক।
৯.
পরিবার: সাই
অঞ্চল: তাইওয়ান
প্রতিষ্ঠান: ক্যাথে ফাইন্যান্সিয়াল, ফিউবন ফাইন্যান্সিয়াল
সম্পদ: ২১.৪ বিলিয়ন ডলার
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ১৯৬২ সালে ক্যাথে লাইফ ইনস্যুরেন্স প্রতিষ্ঠা করেন সাই ভাইয়েরা। এরপর পরিবারের সকলে মিলে ব্যবসা ভাগ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সাই ওয়ান লিন এবং সাই ওয়ান সাই যথাক্রমে ক্যাথে লাইফ ইনস্যুরেন্স ও ক্যাথে ইন্সুরেন্সের নিয়ন্ত্রণ নেন। পরবর্তীতে ক্যাথে ইন্সুরেন্সের নাম বদলে রাখা হয় ফিউবন ইনস্যুরেন্স। বর্তমানে হংকং এর দুটি বৃহৎ আর্থিক খাতের হোল্ডিং কোম্পানিতে শেয়ার মালিকানার অধিকারী এই পরিবারের সদস্যরা। আবাসন ও টেলিকম খাতেও তারা ব্যবসার প্রসার করেছেন।
১০.
পরিবার: লী
দেশ: দক্ষিণ কোরিয়া
প্রতিষ্ঠান: স্যামসাং
সম্পদ: ১৮.৫ বিলিয়ন ডলার
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ১৯৩৮ সালে ফল, সবজি ও মাছ রপ্তানির জন্য একটি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্যামসাং প্রতিষ্ঠা করেন লী বিয়ং চুল। ১৯৬৯ সালে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স গড়ে তোলার মাধহ্যমে প্রযুক্তি শিল্পে প্রবেশ করেন। এটি বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মেমোরি চিপস ও স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক। ২০২০ সালের অক্টোবরে বিয়ং চুল মারা যান। এরপর থেকে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীটির নিয়ন্ত্রণ লাভ করেন জে ওয়াই লী। তবে ঘুষের এক মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত হন। ২০২১ সালে তিনি প্যারোলে মুক্তি পান, এরপরের বছর তাকে সাজা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।