‘জায়েদা খাতুন এবং জাহাঙ্গীর একটাই নাম’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এখন সবচেয়ে আলোচিত নাম জায়েদা খাতুন। আসন্ন নির্বাচনে স্বতন্ত্র এই প্রার্থী আলোচনার শীর্ষে থাকলেও, তাকে নিয়ে আলাদাভাবে খুব বেশি আগ্রহ নেই নগরবাসী ও ভোটারদের, কারণ তারা মনে করেন, জায়েদা খাতুন তার ছেলে সাবেক মেয়র (বরখাস্ত) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের আরেকটি নামমাত্র।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হারিকেন এলাকায় সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ির পাশেই নগরীর ৩২ নম্বর ওয়ার্ড। নূরজাহান নামে এই ওয়ার্ডের স্থানীয় এক বাসিন্দা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, 'জায়েদা খাতুনকে আমরা আলাদাভাবে চিনি না। তিনি তো আগে রাজনীতিও করতেন না, কিংবা বাসা থেকে বের হতেন না। তিনি ঘরের মানুষ এই প্রথম নির্বাচনে এলেন। মানুষ চেনে জাহাঙ্গীর আলমকে। এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নের জন্য মানুষের কাছে তার (জাহাঙ্গীর আলম) জনপ্রিয়তা আছে। জায়েদা খাতুনকে যারা ভোট দেবেন, তারা আসলে জাহাঙ্গীর আলমকেই ভোট দেবেন'।
জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ির পাশেই বাস করেন কালাম নামে স্থানীয় আরেক ব্যক্তি। প্রতিবেশী হয়েও 'জাহাঙ্গীর আলমের মা' এই পরিচয়ের বাইরে জায়েদা খাতুনকে আলাদাভাবে চেনেন না তিনি।
শুধু নূরজাহান কিংবা কালামই নন, গত ৩ দিন যাবত নগরীর বিভিন্ন এলাকার আরো অন্তত ২০ জন বাসিন্দার সাথে কথা বলেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। যাদের কেউই জায়েদা খাতুনকে আলাদাভাবে চেনেন না।
জায়েদা খাতুনের পক্ষে জাহাঙ্গীর আলম নিজেও মঙ্গলবার (৯ মে) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে একই কথা বলেছেন।
এদিন প্রার্থী হিসাবে জায়েদা খাতুনের কাছে কয়েকটি প্রশ্ন রাখে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। এসময় নিজেকে মা জায়েদা খাতুনের প্রধান সমন্বয়কারী দাবী করে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন জাহাঙ্গীর।
নগরবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, সাধারণ গৃহিণী থেকে সরাসরি নির্বাচনের মাঠে জায়েদা। তার নেই রাজনীতিক হিসেবে পরিচয়, পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া প্রথমবারের মতোন আসলেন রাজনীতি ও নির্বাচনের মাঠে। তাছাড়া নির্বাচিত হলে মেয়র হিসাবে বিশাল এক দায়িত্ব পালন করতে হবে।
কীভাবে জায়েদা খাতুন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবেন, তা নিয়ে কোন পরিকল্পনা আছে কিনা – এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'উনি নতুন না, পুরাতন মানুষ। তার বয়স ৭০ বছর, ৫০ বছর যাবত তিনি মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সরাসরি তিনি নিজে হয়তো করেননি, কিন্তু তার ছেলেকে দিয়ে কাজ করিয়েছেন। এছাড়াও তার ছেলে এই উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ছিল, উপজেলার চেয়ারম্যান ছিল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিল, মেয়র ছিলো। উনিই তো সব করেছে। মা তো আমার শিক্ষক। সেই শিক্ষক এখন মাঠে নামছেন, ছাত্র সাথে আছে- অসুবিধা কি'।
স্থানীয়দের বক্তব্য জায়েদা খাতুন এবং জাহাঙ্গীর একই নাম, এবিষয়ে তার মন্তব্য চাইলে জাহাঙ্গীর বলেন, 'এটা তো ঠিকই। মা তার সন্তানকে বাঁচানোর জন্য, শহর বাঁচানোর জন্য ভোটে নামছেন। ভোটে যারা দাঁড়ায়, তারা কি নিজের জন্য দাঁড়ায়? আমার মা বলেছে, এই শহর আমার। শহর যেমন রক্ষা করতে হবে, জানমালেরও রক্ষা করতে হবে। উন্নয়নটা যেন হয়। বলেছেন- ছেলে যা করে গেছে, ভবিষ্যতে আরও ভালো করে যেন করতে পারেন- সেজন্য নিজেই হাল ধরছেন'।
জায়েদা খাতুন ও জাহাঙ্গীর 'একটাই নাম, এটা অস্বীকার করি না' যোগ করেন তিনি।
এসময় জাহাঙ্গীর আলম আরো জানান, শহর নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন বাকী আছে, যা তিনি তার মায়ের মাধ্যমে পূরণ করতে চান।
নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত জায়েদা খাতুনের হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া।
হলফনামায় তার জন্ম তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬২ সাল। পিতার নাম সামছুল ইসলাম, মাতা আফাতুন। স্থায়ী ঠিকানা হিসাবে উল্লেখ রয়েছে কানাইয়া, গাজীপুর সদর, গাজীপুর।
শিক্ষাগত যোগ্যতা স্বশিক্ষিত, আর এখন পর্যন্ত কোন মামলার ইতিহাস নেই। পেশা হিসাবে উল্লেখ রয়েছে ব্যবসা, যা থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ৩,৪৫,০০০ টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসাবে নগদ টাকা দেখিয়েছেন ৩৫ লাখ টাকা; ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা। অনারেবল টেক্সটাইল কম্পোজিট লিমিটেডে শেয়ারমূল্য দেখিয়েছেন ২,৫০,০০০ টাকা, একই প্রতিষ্ঠানে জাহাঙ্গীর আলমের হলফনামায় শেয়ারমূল্য দেখানো হয়েছিল ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার। স্বর্ণালংকার দেখানো হয়েছে ৩০ তোলা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার, আসবাবপত্র ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার। স্থাবর সম্পদ কিংবা কোন ঋণের কথা উল্লেখ নেই।
আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন মোট ৮ জন প্রার্থী।
স্থানীয়রা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন ভোট যুদ্ধে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের বিপরীতে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাহাঙ্গীর আলম বাদ পড়ায় সেই স্থান নিয়েছেন তার মা জায়েদা খাতুন। জায়েদা খাতুন জাহাঙ্গীর আলমের আরেকটি নাম মাত্র। মেয়র হিসেবে স্বল্প মেয়াদের দায়িত্ব পালনকালে নগরের সড়কের ব্যাপক উন্নয়ন করেই নগরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন জাহাঙ্গীর। যা এই নির্বাচনে তার মা জায়েদা খাতুনকে এগিয়ে রাখতে বড় ভূমিকা পালন করবে।