বরগুনায় অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সৃষ্ট জেলোচ্ছ্বাসে বরগুনার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ওইসব এলাকার ঘরবাড়ি। এছাড়াও জলোচ্ছ্বাসের পানিতে ভেসে গেছে মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে মুগডাল, চিনা বাদাম এবং ভুট্টার ক্ষেত।
বরগুনার বিভিন্ন স্থানের অধিবাসিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার পাথরঘাটা উপজেলার গাব্বাড়িয়া, পদ্মা, খলিফার হাট, মাছের খাল, কালমেঘা, কাঠালতলীসহ সদর উপজেলার আয়লা-পাতাকাটা, বুড়িররচর, ছোট লবনগোলা এলাকার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জলোচ্ছ্বাসের পানি পরিবেশের খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়াও বামনা উপজেলা রামনা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ, পূর্ব সফিপুর এবং বামনা লঞ্চঘাট, অযোদ্ধা, কলাছিয়া বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী কাঠালতলী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মনমথ রঞ্জন খরাতী বলেন, এই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে দুইটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে এই দুই গ্রামের মাছের ঘের প্লাবিত হয়ে অন্তত ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও দুই গ্রামের অন্তত দুইশ' একর জমির মুগডাল সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সোহেল রানা বলেন, এই ইউনিয়নের কুমিরমারা এলাকায় বেশকিছু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করার শুরু হয়েছে।
বরগুনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সদর উপজেলার তিন হাজারের অধিক একটি মুরগীর খামারের আটশটি মুরগি জলোচ্ছ্বাসের কারণে মারা গেছে। এতে এতে এক লাখ ২৬ হাজার টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। এছাড়াও তালতলী উপজেলার একটি গাভীর খামারের ক্ষতি হয়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকার। এছাড়াও দুইটি মুরগির খামারে ক্ষতি হয়েছে ছয় লাখ টাকার। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বরগুনায় ক্ষতি নিরুপনের তালিকা চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বরগুনা জেলা ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স এর উপ-পরিচালক দেওয়ান সোহেল রানা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর বরগুনা সদর উপজেলার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ নিশানবাড়িয়া এবং চালিতাতলা এলাকাসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখেছি। এছাড়াও বেতাগী উপজেলার বদনিখালী এলাকাসহ ঘুরে দেখেছি বিভিন্ন এলাকা।
তিনি বলেন, এসব এলাকায় কিছু গাছপালা ভেঙে এবং উপড়ে পড়েছিল, তা আমরা অপসারণ পরেছি। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে এসব এলাকায় তেমন কোনো ক্ষতিসাধন হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, অল্পকিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গতকাল রাতে বরগুনায় সাড়ে এগারো ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৫টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকা থেকে ইতোমধ্যেই পানি নেমেও গেছে। আমরা ভেঙে যাওয়া বাঁধ দ্রুত মেরামত করার জন্য কাজ শুরু করেছি।
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, আমরা আগে থেকেই সতর্ক থাকায় পাশাপাশি যথাযথ প্রস্তুতিগ্রহণ করায় জেলায় তেমন কোন ক্ষতিসাধন হয়নি। তারপরও আমরা জেলার ক্ষতির তালিকা নিরুপনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি।