জ্বালানি তেলের এজেন্ট কমিশন বাড়ছে
দেশে প্রথমবারের মতো জ্বালানি তেল বিক্রির এজেন্ট কমিশন ও পরিবহন ভাড়া লিটার-ভিত্তিক হারের পরিবর্তে শতকরা হারে নির্ধারণ করা হচ্ছে। এতে বাড়ছে জ্বালানি তেল বিক্রয়কারী পেট্রোল পাম্প মালিকদের কমিশন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত এবং পেট্রোল পাম্প মালিকদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নে জ্বালানি বিভাগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জ্বালানি বিভাগ প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে ডিজেলের বিক্রয় মূল্যের ২.৮৫ শতাংশ, কেরোসিনে ২ শতাংশ, পেট্রোলে ৪.৩৪ শতাংশ এবং অকটেনে ৪.২৮ শতাংশ কমিশন নির্ধারণ করা হয়েছে।
এখন থেকে পেট্রোল পাম্প মালিকরা এই হারে এজেন্ট কমিশন পাবেন।
জ্বালানি তেলের বর্তমান দামের ওপর এই হারে কমিশন দেওয়া হলে এতে পাম্প মালিকদের আয় বাড়বে, কিন্তু কমিশন বাবদ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে (বিপিসি) বাড়তি খরচ করতে হবে ২২২ কোটি টাকা। এমন সময়েই এই বাড়তি খরচের হিসাব আসছে যখন ডলার সংকট ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ইতোমধ্যেই চাপের মাঝে আছে রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থাটি।
বর্তমানে পেট্রোল পাম্প মালিকরা প্রতি লিটারের বিপরীতে কমিশন পেয়ে থাকেন। এতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লেও তাদের কমিশন বাড়ে না। পাম্প মালিকরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সমপরিমাণ তেল উত্তোলন করতে আগের চেয়ে বেশি লগ্নি করতে হচ্ছে। অথচ তাদের আয় বাড়ছে না।
বর্তমানে পেট্রোল পাম্প মালিকরা প্রতি লিটার ডিজেলে ২.৭৩ টাকা, কেরোসিনে ১.৫৮ টাকা, পেট্রোলে ৪.৬৮ টাকা এবং অকটেনে ৪.৮২ টাকা কমিশন পেয়ে থাকেন।
গত বছর আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলেও এজেন্ট কমিশন বাড়ানো হয়নি। পাম্প মালিকরা কমিশন বাড়িয়ে তেলের দামের ৩ শতাংশ থেকে ৪.৫ শতাংশ পর্যন্ত করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
শতকরা হার অনুযায়ী, এজেন্ট কমিশন নির্ধারণ করায় প্রতি লিটার ডিজেলে পেট্রোল পাম্প মালিকরা কমিশন পাবেন ৩ টাকা। একইভাবে, প্রতি লিটার কেরোসিনে ২.১৬ টাকা, পেট্রোলে ৫.১৮ টাকা এবং অকটেনে ৫.৩২ টাকা কমিশন পাবেন।
জ্বালানি বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের ব্যবস্থা চালু করার বিষয়ে আইএমএফের শর্ত রয়েছে।
"ইতোমধ্যে এই স্বয়ংক্রিয় দাম নির্ধারণ ফর্মূলা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এই ফর্মূলা তৈরি করতে গেলে এজেন্ট কমিশন ও পরিবহন ভাড়ার একটি স্থায়ী রূপ থাকতে হবে," যোগ করেন তিনি।
বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবেলায় আইএমএফ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার। ঋণের প্রথম কিস্তি বাবদ ২ ফেব্রুয়ারি ৪৭৬.২৭ মিলিয়ন ডলার গত ছাড় হয়েছে।
পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন গত ২ সেপ্টেম্বর এজেন্ট কমিশন ও পরিবহন ভাড়া বাড়ানোসহ একাধিক দাবিতে ডিপো থেকে তেল উত্তোলন বন্ধ রাখে। পরের দিন বিপিসি পাম্প মালিকদের সাথে বৈঠক করে তাদের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়। ওইদিন পাম্প মালিকরা জানান আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে পুনরায় তারা ধর্মঘটে যাবেন।
এদিকে জ্বালানি বিভাগের উদ্যোগ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল টিবিএসকে বলেন, "অনেক দিন ধরেই পাম্প মালিকরা শতকরা হারে কমিশন নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছে। এতে পাম্প মালিকরা বিনিয়োগ অনুপাতে কমিশন পাবেন, যা ব্যবসায় টিকে থাকতে সহায়তা করবে।"
তিনি বলেন, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই শতকরা হারে কমিশন নির্ধারণ হয়। এই পদ্ধতি চালু করায় আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে দাম নির্ধারণ সহজ হবে। এছাড়া, পাম্প মালিকদের করের হিসাবও সহজ হবে।