জিয়া বাংলাদেশ নাকি পাকিস্তানের জন্য যুদ্ধ করেছেন, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমানের আনুগত্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, 'জিয়া বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন, নাকি পাকিস্তানের জন্য যুদ্ধ করেছেন, এই প্রশ্ন উঠেছিল।'
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, 'মির্জা আসলাম বেগ (যিনি সে সময় বাংলাদেশে সেনা কর্মকর্তা ছিলেন) মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমানের কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করে একটি চিঠি লিখেছিলেন।'
চিঠির বরাতে তিনি দাবি করেন, 'মির্জা আসলাম বেগ আরও বলেছেন, জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ও সন্তানরা ঢাকা সেনানিবাসে ভালো আছেন। প্রশ্ন হচ্ছে- ওই ব্যক্তি যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে থাকেন, তাহলে কেন পাকিস্তানিরা সেনানিবাসে ওই ব্যক্তির স্ত্রী-সন্তানদের দেখভাল করল এবং চাকরিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে চিঠি লিখল।'
সরকারপ্রধান বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের ১১টি সেক্টরে যুদ্ধ হলেও জিয়ার নেতৃত্বাধীন সেক্টরে সবচেয়ে বেশি মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হয়েছেন। যেকোনো অভিযানের সময় জিয়াউর রহমান নিজেকে নিরাপদ স্থানে রেখে, মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধের ময়দানে ঠেলে দিতেন। তিনি বাস্তবতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটত। তার (জিয়াউর রহমান) সঠিক নেতৃত্বের অভাবে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'যেকোনো যুদ্ধে সফল অভিযানের অর্থ হলো কম হতাহতের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো। জিয়া তা পারেননি, তাই আসলাম বেগ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।'
জেনারেল বেগ ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯১ সালে অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৃতীয় সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালের ১৭ আগস্ট এক বিমান দুর্ঘটনায় তার পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট জেনারেল মুহাম্মদ জিয়া-উল-হক নিহত হওয়ার পর তিনি সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিকৃত ইতিহাসে বলা হয়, একজন মেজর ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছিল। এভাবে একটি দেশ স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে না। এটা যদি করা যেত তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো।'
তিনি বলেন, 'এখন বিএনপি নেতারা গণতন্ত্র খুঁজছেন এবং বিএনপির একজন নেতা দাবি করেছেন যে ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতারা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছে। যদি সত্যি হয় তাহলে কে লড়াই করল আর কে জয় এনে দিল?'
তিনি আরও বলেন, 'তাদের (বিএনপি নেতাদের) ভুলে গেলে চলবে না যে, স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। এই অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিরা সেটাও ভুলে যায়।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষ হত্যার জন্য জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণ যাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনে জিততে পারেনি, তারা এখন গণতন্ত্র খুঁজছে।'
এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান খান, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা.রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা জেলা সভাপতি বেনজির আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি হুমায়ুন কবির ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি এসএম মান্নান কচি।
সভাটি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।