মাংসের দাম কমাতে উন্নত জাতের গরু প্রজননের অনুমতি প্রয়োজন: খামারিরা
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) বলছে, দেশে উন্নত জাতের গরু প্রজননের অনুমতি না দিলে গরুর মাংসের দাম কমানো সম্ভব হবে না।
বিডিএফ সভাপতি ও সাদিক এগ্রোর সত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, "ব্রাজিল এখন দুধ ও মাংসের উৎপাদনে সবচেয়ে এগিয়ে। আমাদের দেশের মাংস উৎপাদনে উন্নত জাত পালনের অনুমতি প্রদান না করলে দেশের মাংসের খরচ কমানো সম্ভব নয়।"
তিনি বলেন, ১২ কেজি দানাদার খাবার খেয়ে এক কেজি মাংস উৎপাদন করে দেশি জাতের গরু– যেখানে উন্নত জাতের গরু ৫ কেজি খাবার খেয়েই এক কেজি মাংস দেয়।
প্রতি কেজি গরুর মাংস এখন ৭৫০ টাকা বা এর বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। ফলে অনেক সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে দেশে আমিষের চাহিদা পূরণের এই অন্যতম উৎস।
খামারিরা বলছেন, গরুর মাংসের এমন লাগামছাড়া দাম কমাতে হলে আগে সরকারকে দেশে গবাদি পশুর খাদ্যের দাম কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এছাড়া, দীর্ঘদিন ধরেই খামারের বিদ্যুৎ বিল বাণিজ্যিক ক্যাটাগরি থেকে সরিয়ে কৃষির আওতায় আনা, উন্নত মানের ভ্যাক্সিন উৎপাদন ও সহজলভ্য করা, ডেইরি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের বাস্তবায়ন করাসহ বেশকিছু দাবি তুলে ধরেন খামারিরা।
বগুড়া ভান্ডার এগ্রো ফার্ম'র স্বত্বাধিকারী তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব বলেন, "পশুখাদ্যের দাম গত ৫ বছরে ১৩৭ শতাংশ বেড়েছে। এই দাম বৃদ্ধি রুখতে হলে সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে, না হলে দেশের হাজার হাজার শিক্ষিত উদ্যোক্তারা তাদের পুঁজি নিয়ে ঝুঁকিতে পাড়বেন।"
খামারিরা বলছেন, ২০১৬ সালে কয়েকজন খামারি মিলে বাংলাদেশের গরু পালনকে শিল্পে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে গড়ে তোলে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন। যেখানে এখন খামারির সংখ্যা ৫৫ হাজারেরও বেশি। তাদের মধ্যে অনেকেই উচ্চ শিক্ষিত। এই খামারিদের উৎসাহ ধরে রাখতে না পারলে মাংসের উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ধরে রাখা কষ্ট হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন তারা।
প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট খামারিরা বলছেন, ২০১৫ সাল পর্যন্ত মাংসের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা ছিল ৬৫ শতাংশ। ৫ বছরের চেষ্টায় খামারিরা এই ঘাটতি পূরণ করতে পেরেছে। যেখানে প্রতি বছর কোরবানির ঈদে দেশের গরুতেই মিটছে চাহিদা; বরং বছর বছর ২৫ লাখেরও বেশি পশু উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে।
দেশে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সব ধরনের মাংসের উৎপাদন ছিল ৪৫ লাখ টন; ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টনে। খামারিদের স্বপ্ন এখন মাংস রপ্তানির।
ঢাকায় শেষ হলো প্রাণিসম্পদ মেলা
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে দুই দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ মেলা শেষ হলো। আসন্ন কোরবানির ঈদকে লক্ষ্য করে পশু বুকিং দিতে ইচ্ছুক অনেকেই এসেছিলেন মেলায়।
মেলার আয়োজন করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ কাউন্সিল (বিপিআইসি)।
মেলায় ৪০০ স্টলে কয়েক হাজার প্রাণীর এই প্রদর্শনী দেখতে শুক্রবার ছুটির দিনে শত শত মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়।
মেলার শেষদিনে উপস্থিত উদ্যোক্তাদের প্রদর্শিত খামারের প্রাণীর গুণগত মান, জাত, স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য, আকার, অবদান, নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, বাজারজাতকরণ, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক প্রভাব, সার্বিক পর্যবেক্ষণ বিবেচনায় ১৯ ক্যাটাগরিতে মোট ৯৩টি পুরষ্কার, ক্রেস্ট এবং সনদ দেওয়া হয় অংশগ্রহণকারীকে।
দুদিনের প্রাণীসম্পদ মেলাটি শুক্রবার শেষ হলেও সারাদেশে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আগামী ২২ এপ্রিল পর্যন্ত দেশব্যাপী প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ পালন করবে। যার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা।