এতো কাছে গিয়েও হেরে গেল বাংলাদেশ
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় তাওহিদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জুটিতে বাংলাদেশের জয় সহজই মনে হচ্ছিল। দলকে অনেকটা পথ এগিয়ে হৃদয় আউট হলে চাপ বাড়ে। যে চাপ কাটিয়ে জয়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ, সঙ্গে ছিলেন জাকের আলী। শেষ ৬ বলে ১১ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ সময়ে জাকের পারলেন না। এরপরও সুযোগ থাকলো, ২ বলে ৭ রান রান। কেশব মহারাজের করা ফুলটসে সজোরে ব্যাট চালিয়েও লং অনে এইডেন মার্করামের হাতে ধরা পড়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ, আর ওখানেই লেখা হয়ে গেল বাংলাদেশ হার। শেষ বলে তাসকিন আহমেদ চেষ্টা করলেন, কিন্তু ফুলটস থেকে এক রানের বেশি নিতে পারলেন না।
সোমবার রাতে নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে 'ডি' গ্রুপের ম্যাচে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি এবং এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরাজেয়ই থেকে গেলে প্রোটিয়ারা। এ নিয়ে ৯টি টি-টোয়েন্টির সবগুলোতে জিতলো তারা, বিশ্বকাপে জিতলো চার ম্যাচে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটা দক্ষিণ আফ্রিকার টানা তৃতীয় জয়। ছয় পয়েন্ট নিয়ে সবার আগে সুপার এইটে উঠে গেল তারা।
১১৪ রানের ছোট লক্ষ্য। হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ মিলে নিয়ে গেলেন ৯৪ রান পর্যন্ত। শেষ ২ ওভারে ১৮ কিংবা শেষ ওভারের ১১; সবখানেই সম্ভাবনা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু শেষ ওভারে প্রোটিয়া বাঁহাতি স্পিনার মহারাজের দেওয়া তিনটি ফুলটস কাজে লাগাতে পারেনি তারা। ম্যাচ হারের দায় তাদেরই, তবু আলোচনা হতে পারে আম্পায়ারের বাজে সিদ্ধান্তে না পাওয়া ১৭তম ওভারের সেই ৪ রান নিয়ে। সেই ৪ রানেই যে হেরেছে বাংলাদেশ। ওটনেইল বার্টমানের করা ১৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ফ্লিক করে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ, তার পায়ে লেগে বল চলে যায় সীমানার বাইরে। আবেদনে আউট দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু বল সীমানা ছাড়া হলেও নিয়মের কারণে ওই চার রান পায়নি বাংলাদেশ।
টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের অসাধারণ বোলিংয়ের সামনে ধুঁকতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তানজিম হাসান সাকিব শুরুতেই প্রোটিয়াদের দিক ভুলিয়ে দেন। তাসকিন আহমেদও তোপ দাগেন, সঙ্গে মুস্তাফিজুর রহমানের কৃপণ বোলিং। এর মাঝেও লড়াই করে জুটি গড়া হেনরিক ক্লাসেন ও ডেভিড মিলারের জুটিতে ৬ উইকেটে ১১৩ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। টি-টোয়েন্টিতে ২০ ওভার ব্যাটিং করে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই তাদের সর্বনিম্ন সংগ্রহ। দলটির হয়ে ব্যাটিং করা আটজন ব্যাটসম্যানের মধ্যে কেবল তিনজন দুই অঙ্কের রান করেন।
জবাবে শুরুটা ভালো না হলেও কঠিন বিপদে পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। ৫০ রানে ৪ উইকেট হারানোর পরও ঠিক পথে থাকে তারা। হৃদয়-মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে জয় তুলে নেওয়া তখন সময়ের ব্যাপার। কিন্তু দলকে জয়ের পথে রাখা হৃদয় শেষ করে আসতে পারেননি। আর তার বিদায়ের পরই তোলগোল পাকায় বাংলাদেশ। যদিও শেষ ওভারেও সুযোগ ছিল, কারণ ৬ বলে ১১ রান তোলা নিশ্চয়ই অসম্ভব কিছু নয়। চাপের কারণে ব্যাটসম্যানরা এমন অবস্থায় ঠিকভাবে ব্যাটে-বলে করতে পারেন না। কিন্তু তিনটি ফুলটস ব্যাটে-বলে না হওয়াটা বাংলাদেশের দুর্বলতাই। পুরো ম্যাচ ঠিক পথে থেকে শেষ পর্যন্ত ১০৯ রানে থামে বাংলাদেশ।
লক্ষ্য তাড়ায় ৯ রানেই ফিরে যান তানজিদ হাসান তামিম। কাগিসো রাবাদাকে দুটি চার মারার এক বল পরই উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ৯ বলে ৯ রান করা বাঁহাতি এই ওপেনার। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে শান্ত ও লিটন কুমার দাস ২০ রান যোগ করেন। মহারাজের বল শট খেলতে গিয়ে ডেভিড মিলারের হাতে ধরা পড়েন ১৩ বলে ৯ রান করা লিটন। টিকতে পারেননি সাকিবও, ৩ রান করা অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার দলীয় ৩৭ রানে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন। দেখেশুনে খেলা শান্তও সাকিবের মতো বাউন্সারে ব্যাট চালিয়ে আউট হন, ২৪ বলে একটি চারে ১৪ রান করেন তিনি।
৫০ রানে চার উইকেট হারানো দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ। পঞ্চম উইকেটে ৪৫ বলে ৪৪ রান করেন তারা। ৩৪ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৩৭ রান করা হৃদয় আউট হলে খেই হারায় বাংলাদেশ। সৌম্য সরকারের জায়গায় সুযোগ পাওয়া জাকের কোনো ডেলিভারিই ঠিকভাবে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। ৯ বলে ৮ রান করে আউট হন তিনি। শেষ ওভারের পঞ্চম বল পর্যন্ত চেষ্টা করা মাহমুদউল্লাহ ২৭ বলে ২টি চারে ২০ রান করেন। শেষ ওভারে ৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন মহারাজ। ৪ ওভারে ২৭ রানে তার শিকার ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট নেন রাবাদা ও আনরিখ নরকিয়া।
এর আগে ব্যাটিং করা দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের শুরুর ওভারেই আঘাত হানেন তানজিম সাকিব। নিজের করা প্রথম তিন ওভারেই উইকেট নেন অসাধারণ বোলিং করা তরুণ এই পেসার। তার সঙ্গে সুর মেলানো তাসকিন তার নিজের দ্বিতীয় ওভারে পান উইকেটের দেখা। এই দুই বোলারের তোপে ২৩ রানেই চার উইকেট হারিয়ে ঘোর সঙ্কটে পড়ে যায় প্রোটিয়ারা। এখান থেকে হাল ধরেন ক্লাসেন ও মিলার। শুরুতে চাপ কাটিয়ে পরে রান তোলায় মন লাগান এ দুজন।
যদিও বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাটিং করতে পারেননি তারা। এরপরও এ দুজনেই রক্ষা পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। পঞ্চম উইকেটে ৭৯ বলে ৭৯ রানের জুটি গড়ে দলকে একশ পেরিয়ে দেন ক্লাসেন ও মিলার। ইনিংসের সর্বোচ্চ রান করা ক্লাসেনকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন তাসকিন। ডানহাতি প্রোটিয়া এই ব্যাটসম্যান ৪৪ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৬ রান করেন। ৩৮ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২৯ রান করেন মিলার।
শুরুতে উইকেটে গিয়েই ঝড় তোলা কুইন্টন ডি কক ১১ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় করেন ১৮ রান। বাকিদের কেউ ৫ রানের বেশি করতে পারেননি। অষ্টম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা তানজিম ৪ ওভারে ১৮ রানে নেন ৩টি উইকেট, যা তার ক্যারিয়ার সেরা। দুর্দান্ত বোলিং করা তাসকিন ৪ ওভারে ১৯ রানে ২টি উইকেট পান। রিশাদের শিকার একটি উইকেট। মুস্তাফিজ উইকেট না পেলেও কৃপণ বোলিং করেন, ৪ ওভারে তার খরচা ১৮ রান। শেষ ওভারে মাত্র ৪ রান দেন তিনি।