ভারতে ফুসফুস ক্যান্সারের বেশিরভাগ রোগী কখনোই ধূমপান করেননি: গবেষণা
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষদের মধ্যে হওয়া ফুসফুস ক্যান্সার এশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল থেকে স্বতন্ত্র এবং আলাদা।
এক গবেষণায় তারা আরও দেখেছেন যে, ভারতে ফুসফুসের ক্যান্সারের জিনগত বিন্যাস (জেনেটিক মেকআপ) 'দেশটির মানুষের জটিল বৈচিত্র্যের দ্বারা রূপায়িত'।
তারা আরও উল্লেখ করেছেন, ভারতের বেশিরভাগ ফুসফুস ক্যান্সার রোগী জীবনে কখনোই ধূমপান করেননি। এছাড়া গবেষণার ফল অনুযায়ী, বায়ু দূষণ এমনকি অধূমপায়ীদের মধ্যেও ফুসফুস ক্যান্সার তৈরি করতে পারে।
এসব ফলাফলের আলোকে বিজ্ঞানীরা ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য অঞ্চলভিত্তিক গবেষণার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বায়ু দূষণ ও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী অন্যান্য পরিবেশগত প্রভাবক মতো কিছু সুনির্দিষ্ট জলবায়ু চলক ফুসফুস ক্যান্সার সৃষ্টিতে সরাসরি ভূমিকা রাখে।
ল্যান্সেট-এর ইক্লিনিক্যাল মেডিসিন জার্নাল-এ প্রকাশিত গবেষণাটিতে ভারতের মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালেরও একটি গবেষকদলও ছিলেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতে ফুসফুস ক্যান্সার পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় প্রায় এক দশক আগে ধরা পড়ে। সাধারণত ব্যক্তির ৫৪ থেকে ৭০ বছর বয়সের মধ্যে এ ক্যান্সার ধরা পড়ে।
এর একটি কারণ হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (মিডিয়ান বয়স ৩৮ বছর) ও চীনের (৩৯ বছর) তুলনায় ভারতে জনসংখ্যায় কমবয়সি (২৮.২ বছর) মানুষের সংখ্যা বেশি বলে।
বায়ু দূষণ ও জেনেটিক মিউটেশনের মতো স্বতন্ত্র কিছু আঞ্চলিক রিস্ক ফ্যাক্টরও ফুসফুস ক্যান্সার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে বলে গবেষকেরা উল্লেখ করেছেন।
ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার ১৯৯০ সালের প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৬.৬২ মানুষ থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে প্রতি এক লাখ মানুষে ৭.৭ জনে দাঁড়িয়েছে।
২০২৫ সাল নাগাদ শহরাঞ্চলে এ ক্যান্সারের হার ব্যাপকভাবে বাড়তে পারেও বলে গবেষণাটিতে আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
একই গবেষণা সিরিজের আরেকটি গবেষণাপত্রে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস-এর গবেষকেরা এশিয়ায় ফুসফুস ক্যান্সারের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্লেষণ করেছেন।
২০২২ সালের ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে গবেষকেরা বলেছেন, বিশ্বের ৪০টি দূষিত শহরের মধ্যে ৩৭টির অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায়। আর বিশ্বের ৪টি সবচেয়ে দূষিত দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত।
এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে জাতীয় দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ড। এসব দেশে ২০২০ সালে নয় লাখ ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।