তথ্যে গরমিল তদন্তে আগামী ৩ মাস রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করবে না ইপিবি
আগামী তিনমাস রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করবে না রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। রপ্তানির তথ্যে বড় ধরনের গরমিল ধরা পড়ার পর এর ত্রুটি খুঁজে বের করতেই এ সময় কাজ করবে সংস্থাটি।
সোমবার (১৫ জুলাই) সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
সভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ইপিবি'র ভাইস চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
আগামী তিনমাস রপ্তানির তথ্য প্রকাশ না করার সিদ্ধান্তের বিষয়টি আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) অর্থমন্ত্রণালয় থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইপিবি প্রতিমাসে খাতভিত্তিক ও প্রধান প্রধান বাজারভিত্তিক রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করে থাকে। গত অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত ইপিবি রপ্তানির যে তথ্য প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে প্রকৃত রপ্তানির পরিমাণ তার চেয়ে অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার কম। এ বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর দেশের আর্থিকখাতের বিভিন্ন তথ্যের সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
রপ্তানি তথ্যে এই বড় ফাঁরাকের প্রকৃত কারণ উদঘাটন করার ওপর সভায় জোর দেওয়া হয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে— বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও ইপিবি আগামী তিন মাসের মধ্যে রপ্তানির তথ্যের এই ব্যাপক গরমিলের প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করবে।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান, "সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, রপ্তানির তথ্য গরমিলের কারণগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করার পর ইপিবি মাসিক রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করবে। সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধান করতে আগামী তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। সেজন্য ইপিবি আগামী তিন মাস রপ্তানির কোনো তথ্য প্রকাশ করবে না।"
সাধারণত, প্রতিমাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ইপিবি তার আগের মাসের রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করে থাকে। রপ্তানির তথ্যে ১০ বিলিয়ন ডলারেরও অধিক ফাঁরাক চিহ্নিত হওয়ার পর এখনও গত জুনের রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, এমন একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান, "বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে এটি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, ইপিবি নিজে কোনো রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করে না। তারা এনবিআর থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রকাশ করে। তাই রপ্তানির তথ্যে যে বড় ব্যবধান চিহ্নিত হয়েছে, এখানে ইপিবি বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো ব্যর্থতা নেই।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সোমবার রাতে টিবিএসকে বলেন, "সভার আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে এখন কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়। আগামীকাল মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সভার আলোচনা ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আপনাদের জানানো হবে।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই থেকে গত মে পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪,০৭৩ কোটি ডলার। আর ইপিবি'র হিসাবে একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ৫,১৫৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ, দুই সংস্থার মধ্যে ব্যবধান ১,০৮১ কোটি ডলার— যা প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের সমান।