আব্দুল কাদের: নয় দফা দাবির মূল কারিগর
শেখ হাসিনার পতন একটি একক মাস্টারস্ট্রোকের ফলে আসেনি কিংবা শুধু একজন নেতার পরিকল্পনা থেকেও আন্দোলন সংগঠিত হয়নি। এটি একটি রিলে রেসের মতো সমন্বিত ছিল, যখন এক গ্রুপের সমন্বয়করা ধরা পড়লেন তখন একটি নতুন গ্রুপ নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আবির্ভূত হয়েছিল।
এই রিলেতে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর ভূমিকা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আব্দুল কাদের নয় দফা দাবি পেশ করে তার ভূমিকা পালন করেন, যা কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশে নিয়ে আসার পর আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ছয়জন প্রধান সমন্বয়কারীকে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তুলে নেওয়ার পর তিনি আন্দোলন চালিয়ে যান।
এসব দাবির প্রতি দৃষ্টি দেওয়া যৌক্তিক ছিল উল্লেখ করে আব্দুল কাদের বলেন, "এত মানুষের জীবনের বিনিময়ে শুধু কোটা কমানোই আর একমাত্র ফলাফল হতে পারে না।"
নিজের পরিবারকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার স্বপ্ন নিয়ে আব্দুল কাদের ২০১৮-১৯ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৩৬৬তম স্থান অর্জন করে। তিনি তার প্রিয় বিষয় আইন নিয়ে পড়তে চাইলেও সুযোগ না হওয়ায় তিনি পরবর্তীতে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। তিনি মজার ছলে বিভাগকে "আজিমপুর বিশ্ববিদ্যালয়" বলতেন কারণ তার ইনস্টিটিউটের ভবন ছিল আজিমপুরে, মূল ক্যাম্পাস থেকে দূরে।
ঢাকা কলেজে পড়ার সময় কাদের প্রায়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেতেন। তিনি বলেন, "যখনই আমি হতাশ হতাম, আমি বিজয় একাত্তর হলের সামনে কিছু সময় কাটাতাম– হলটি বাইরে থেকে দেখতে সুন্দর লাগতো। এটি আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে অনুপ্রাণিত করেছিল।"
কাদেরের জন্মের আগে তার বাবা, আব্দুর রহমান সাত বছর ধরে একটি সন্তান কামনা করেছিলেন এবং তার ইচ্ছা পূর্ণ হলে তাকে হাফিজ বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। লক্ষ্মীপুরের মান্দারী ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করা ও বেড়ে ওঠা কাদেরের প্রাথমিক শিক্ষা হাফেজ হওয়ার পথকেই অনুসরণ করেছিল। তিনি এক বছরেরও বেশি সময় চেষ্টা করেছিলেন হাফিজ হতে। কিন্তু এটি তার জন্য উপযুক্ত না হওয়ায় তিনি সাধারণ মাদ্রাসায় চলে যান এবং পরে জাতীয় পাঠ্যক্রমে যোগদান করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন।
তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় তার দুই ছোট ভাইও মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। তার বাবা ছিলেন পেশায় একজন নিরাপত্তা প্রহরী। তিনি ঢাকায় ছেলেকে খরচের জন্য প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা পাঠাতেন। কাদের বলেন, "আমি হলে সেই টাকা দিয়ে কোনোভাবে চলতাম।" তার মা ফাতেমা বেগম সবসময় ছেলেকে সমর্থন দিয়েছেন এবং আত্মীয়রাও আর্থিক সাহায্য প্রদান করতেন।
কাদেরের মায়ের ভাই তাদের পরিবারের একমাত্র শিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন; তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগে পড়েছিলেন। তবে কাদেরের মা চেয়েছিলেন, তার ছেলে একজন আইনজীবী হোক। কাদের বলেন, "আমার মায়ের আইন পেশার প্রতি এক বিশেষ আগ্রহ থাকায় আমি আইনজীবী হয়ে সেই কালো গাউন পরার স্বপ্ন দেখতাম। তিনি আমার ভেতর কোনো প্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অভ্যাসও গড়ে তুলেছিলেন।" তবে ইংরেজিতে সামান্য দুর্বলতার কারণে আইন বা তার দ্বিতীয় পছন্দের বিষয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পড়ার জন্য তিনি যোগ্য বিবেচিত হননি।
তিনি ঢাকায় হলে ও আজিমপুরে আত্মীয়দের বাড়িতে থাকতেন। তিনি অবশেষে বিজয় একাত্তর হলে ওঠার সুযোগ পান, যেখানে ছাত্রলীগ নেতা আবু ইউনুসের অধীনে একটি গনরুম প্রায় ১০০ জনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে থাকতে হত তাকে। আবু ইউনুস বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম আক্রমণাত্মক ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত।
তারপর এল ৭ অক্টোবর ২০১৯, যেদিন বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের সদস্যরা পিটিয়ে হত্যা করেছিল। এরপর কাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গেস্টরুম ও গনরুম সংস্কৃতির বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছিলেন। এতে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয় এবং শেষ পর্যন্ত তাকে তার হল থেকে বের করে দেওয়া হয়।
কাদের নিয়মিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে তার মতামত প্রকাশ করতেন এবং প্রত্যেক প্রতিবাদ কর্মসূচি বা আন্দোলনে অংশ নিতেন, সেটাতে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকুক বা না থাকুক। রাজনীতির প্রতি আগ্রহ থেকে তিনি একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছিলেন এবং সঠিক দলের খোঁজে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। তবে কোনো দলই তাকে পুরোপুরি আকর্ষণ করতে পারেনি, তাই তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন।
২০২০ সালে কাদের একটি বড় ধাক্কা সহ্য পান যখন তার বাবার চাকরি চলে যায়। কাদেরের ওপর দায়িত্বের বোঝা আরও বাড়তে থাকে এবং তিনি নিজেকে ও পরিবারকে সহায়তা করতে কাজ করা শুরু করেন। তিনি সাভারের একটি গার্মেন্ট কারখানার কাটিং বিভাগে কাজ শুরু করেন এবং পরে একটি মাস্ক কারখানায় যান, যেখানে তিনি কোনোরকমে টিকে থাকার মতো অর্থ উপার্জন করতেন। কাদের বলেন, "যেকোনোভাবে আমাকে টাকা রোজগার করতে হত।" কোভিড-১৯ লকডাউনের সময়, যখন কোনো অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ছিল না, তখন এটি তার জীবনের মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খোলামেলা পোস্টের কারণে কাদের ক্রমশ একা হয়ে পড়েন। ছাত্রলীগের প্রতিক্রিয়ার ভয়ে কিছু বন্ধুরা তার সাথে দূরত্ব তৈরি করেন, আবার কিছু বন্ধুরা তার সঙ্গে মতাদর্শগতভাবে দ্বিমত পোষণ করতে শুরু করে। কাদের স্মরণ করে বলেন, "আমি খুবই একা অনুভব করতাম। সেই সময়টা আমাকে অনেক আঘাত দিয়েছিল।"
২০২২ সালের মধ্যে কাদের বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হন এবং ছাত্রনেতা আসিফ মাহমুদ ও আখতার হোসেনের মতো নেতাদের সঙ্গে কাজ করেন। সেই বছর, তারা আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার জন্য একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেন, যা ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে পরিণত হয়। কাদের এবং ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং এটি ছিল তার প্রথমবারের মতো জেলে যাওয়া। তিনি কেরানীগঞ্জ কারাগারে ৩১ দিন কাটান, যা তার মতে তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এই সময়ে তার পরিবারের আর্থিক সংকট অব্যাহত ছিল।
তার মা প্রায়ই তাকে সতর্ক করতেন, "তুমি যদি মারা যাও, আমাদের আর কোনো আশা থাকবে না।" কিন্তু কাদের জানতেন কীভাবে মায়ের কথার উত্তর দিতে হবে: "তাহলে তুমি কি চাও, আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা বন্ধ করি?" এটি তার মাকে বাকরুদ্ধ করে দিত কারণ তিনি জানতেন, তার শেখানো কথাগুলোই কাদের তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। তাদের সংগ্রামী জীবনে একমাত্র জিনিস যা তিনি তার ছেলেকে শিখিয়েছিলেন তা হলো, ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো।
কাদের তার বিশ্বাসের পক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাই উচ্চ আদালত ২০১৮ সালে বাতিল হওয়া সরকারি চাকরির জন্য কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করলে তিনি এই বছরের ৫ জুন প্রতিবাদ করেছিলেন। তখন তিনি জানতেন না, এটি একটি বিশাল বিপ্লবে পরিণত হবে।
আন্দোলনে কাদেরের সম্পৃক্ততা
আবদুল কাদের এখন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাথে যুক্ত নন। তার রাজনৈতিক মেন্টর আসিফ মাহমুদকে (বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) অনুসরণ করে তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তিতে যোগ দিয়েছেন, যেটি একটি নতুন রাজনৈতিক সংগঠন।
৫ জুন তাদের অভ্যন্তরীণ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নাহিদ ইসলাম প্রথম মেসেজ করেন, "কোটার পুনর্বহালের বিরুদ্ধে আমাদের এখনই প্রতিবাদ করতে হবে।" কাদের তখন টিউশনে ছিল থাকলেও তাড়াতাড়ি ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। সেই রাতে রিফাত রশিদ "কোটা পুনর্বহাল করা চলবে না" নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খোলেন। হাসিব আল ইসলাম, আবু বকর মজুমদার, আসিফ মাহমুদ এবং আবদুল হান্নান মাসুদ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে যান এবং মানুষকে তাদের সাথে প্রতিবাদ করতে আহ্বান জানান। কাদের প্রতিবাদে যোগ দেন এবং সবকিছু সেখান থেকে শুরু হয়।
কাদের সর্বদা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, "১৬ জুলাই, আমরা শহীদ মিনারে একত্রিত হই এবং তখন আমরা খবর পাই, আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মারা গেছেন।"
সেদিন ছয়জন মারা যায় এবং আন্দোলন নতুন মোড় নেয়।
রাত ১২টায় একটি জুম মিটিং হয়। কাদের স্মরণ করে বলেন, প্রথম অ্যাজেন্ডা ছিল পরিষ্কার: "আমরা ছয়জন ছাত্র হারিয়েছি, কেবল কোটা সংস্কার কি যথেষ্ট? সবাই একমত হয়, এটা যথেষ্ট নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে এবং প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।" এর বাইরে, বিভিন্ন দাবি উঠে আসে, যা পরে নয় দফা দাবিতে রূপান্তরিত হয়।
প্রতিবাদ দ্রুত তীব্র হয়ে ওঠে, আরও অনেকেই জীবন হারান। ১৯ জুলাই নাহিদ গ্রেপ্তার হন, আসিফ এবং বকর তার দুদিন আগেই গ্রেপ্তার হন। হাসনাত এবং সারজিস তিন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং গণমাধ্যমে আট দফা দাবি তুলে ধরেন।
তবে কাদের লক্ষ্য করেন, এই আট দফা দাবিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি বাদ পড়েছে যা আগেই আলোচনা করা হয়েছিল। তিনি পদক্ষেপ নেন এবং দাবিগুলো পুনরায় গণমাধ্যমের সাহায্য প্রকাশ করতে শুরু করেন ২০ জুলাই থেকে।
তিনি বলেন, "যখন আমরা দেখলাম প্রচারিত আট দফা দাবি আমাদের দাবি নয়, তখন আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি এবং নয় দফা দাবি প্রকাশ করি যা ৫০ এর অধিক সমন্বয়ক সমর্থন করেন। কিন্তু ডিজিএফআই সংবাদমাধ্যমকে নির্দেশ দেয়, তারা নয় দফা দাবি প্রকাশ না ক আ শুধু আট দফা দাবি প্রচার করবে। আমরা বিশ্বাস করি, ডিজিএফআই দাবিগুলো সংশোধন করেছিল।"
ইন্টারনেট ছাড়াই কাদেরকে সাংবাদিকদের কাছে দাবিগুলো পয়েন্ট করে করে পাঠাতে হয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে সেগুলো পেন ড্রাইভের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়েছিল। কাদের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, "আমি একটি সাধারণ ফোন ব্যবহার করতাম। প্রতিদিন রাত ৯টায় আমি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতাম। যেখানে থাকতাম সেখান থেকে দুই কিলোমিটার দূরে যেতাম, ফোন চালু করতাম, মিডিয়া সংক্রান্ত কথাবার্তা বলতাম, ফোন বন্ধ করতাম এবং আমার জায়গায় ফিরে যেতাম।"
কাদের প্রতি রাত ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় কাটাতেন এমনকি কখনও মসজিদেও রাত কাটিয়েছেন। তবে তিনি সবসময় নয় দফা দাবি প্রচার করতে থাকেন। ২৪ জুলাই তার মেন্টর আসিফ মাহমুদকে অপহরণের চার দিন পর রাস্তায় পাওয়া যায়। আসিফ কাদেরকে কল করে বলেন, "তুমি তাদের গেম প্ল্যান ব্যাহত করেছ। তোমার নয় দফা দাবি আন্দোলন পরিবর্তন করছে। তারা এখন তোমার পেছনে লেগেছে। সতর্ক থাকো।"
বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ আট দফা দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং নয় দফা দাবির পক্ষে সমর্থন জানান, যেটি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর মতো কিছু প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়।
আহত নাহিদ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে ফিরে আসেন এবং একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি তাৎক্ষণিক স্থিতিশীলতার জন্য চার দফা দাবিতে মনোনিবেশ করেন, যার মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ পুনর্বহাল অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২৬ ও ২৭ জুলাই ছয় জন প্রধান সমন্বয়ককে আটক করা হলে নেতৃত্বের শূন্যতা সৃষ্টি হয়। আন্দোলন এখন আবদুল কাদেরের নামে ঘোষিত নয় দফা দাবির চারপাশে কেন্দ্রীভূত হয়, তিনি এবার ধর্মঘটের নেতৃত্ব দেন।
তারপর ইন্টারনেট পুনরুদ্ধার হয় এবং কাদের পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। তিনি বলেন, "আমরা অনুভব করেছিলাম, আমাদের ডাকে এত লোক প্রাণ হারিয়েছে। যেখানে জীবন ঝুঁকিতে আছে, সেখানে কেবল কোটা সংস্কারই যথেষ্ট নয়ইয়– সরকারকে এর অর্ধেক মূল্য দিতে হত। তাই সরকারকে চমকে দেওয়ার জন্য নয় দফা দাবি তৈরি করা হয়েছিল।"
জ্যেষ্ঠ নেতারা ডিবি হেফাজতে থাকার কারণে কাদের এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব নেন। কাদের বলেন, "আমি অ্যাজেন্ডা সেট করেছিলাম। আমাদের থিংক ট্যাংক ধীরে চলার পক্ষে ছিল। কিন্তু আমরা জুনিয়ররা দেখলাম, যত বেশি অপেক্ষা করব তত বেশি মৃতদেহ গুনতে হবে। তাই অভ্যন্তরীণ বিতর্কের পর আমরা মাঠের প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।"
১ আগস্ট মুক্তি পাওয়া ছয় নেতাই কাদেরকে সতর্ক করে বলেন, কর্তৃপক্ষ তাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে সক্রিয়ভাবে খুঁজছে। এ নিয়ে কাদের বলেন, "আমি একটি দুর্বল অবস্থানে ছিলাম, উত্তেজনায় আচ্ছন্ন ছিলাম, জানতাম না আমাকে আটক করা হবে নাকি হত্যা করা হবে। প্রতিদিন আমি নিজেকে মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে প্রস্তুত করতাম এই বলে, আমি হয়ত সেই দিনটি বাঁচব না।"
নয় দফা দাবির পক্ষে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে কাদেরের পরিবার পুলিশের হয়রানির শিকার হয়, যারা তার আত্মীয়দের হুমকি দেয় এবং কাদেরকে থামানোর জন্য চাপ দেয়।
আটক থাকার কারণে জ্যেষ্ঠ নেতারা মাঠ সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত ছিলেন না। তাই তারা কয়েকদিনের জন্য পেছনের সারিতে ছিলেন এবং কাদের ও জুনিয়ররা এই সময় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করার পর, কাদের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের একটি এক দফা দাবির প্রস্তাব দেন।
এক দফা দাবি অনুসরণ করা উচিত কিনা তা নিয়ে বিতর্ক হলেও শেষ পর্যন্ত অন্যরা একমত হন। যখন তারা দেখলেন দাবির প্রতি ব্যাপক সমর্থন, তারা ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এক দফা দাবি ঘোষণা করেন এবং ৬ আগস্ট লং মার্চের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু সেই দিনের বিশৃঙ্খলা দেখে কাদের এবং জুনিয়ররা আবারও সিনিয়রদের রাজি করিয়ে লং মার্চ ৫ আগস্ট এগিয়ে নিয়ে আসেন।
তারপর বাকিটা ইতিহাস।
কাদের এখন তার স্নাতক সম্পন্ন করার দিকে মনোনিবেশ করছেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি তার শিক্ষাজীবন শেষ করার পর মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তার পরিবার এবং পিতামাতা অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। কিন্তু তারা এখন খুশি কারণ মানুষ তাদের সম্মান এবং প্রশংসা করছে।