এ বছর জাপানে নিজ বাড়িতে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা গেছেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ
২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে জাপানে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নিজ বাড়িতে একাকী মারা গেছেন বলে দেশটির পুলিশের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ন্যাশনাল পুলিশ এজেন্সির তথ্যমতে, এ সংখ্যার মধ্যে প্রায় ৪ হাজার মানুষের মরদেহ তাদের মৃত্যুর এক মাসের বেশি সময় পর উদ্ধার করা হয়েছে। আর ১৩৭ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে তাদের মৃত্যুর ১ বছর পর।
জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, এই মুহূর্তে বিশ্বে জাপানেই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক প্রবীণের বাস।
ন্যাশনাল পুলিশ এজেন্সির প্রত্যাশা, একাকী মৃত্যু নিয়ে তাদের এ প্রতিবেদন জাপানের বিপুলসংখ্যক প্রবীণ জনসংখ্যার নিঃসঙ্গ জীবনযাপন ও মৃত্যুর বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসবে।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের তথ্যে দেখা গেছে, দেশটিতে একাকী জীবনযাপন করা মোট ৩৭ হাজার ২২৭ জন মানুষকে তাদের নিজ বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশের বয়স ৬৫ বছর বা তারচেয়ে বেশি।
পুলিশের ওই প্রতিবেদন বলছে, নিজ বাড়িতে একাকী মারা যাওয়া মানুষদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষকে মৃত্যুর একদিনের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া গেছে। আর প্রায় ৩ হাজার ৯৩৯টি মরদেহের খোঁজ মিলেছে মৃত্যুর ১ মাসেরও বেশি সময় পরে। এছাড়া ১৩০টি মরদেহ পাওয়া গেছে মৃত্যুর অন্তত এক বছর পর।
একাকী মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭ হাজার ৪৯৮ জনের বয়স ৮৫ বছর বা তারও বেশি। আর ৫ হাজার ৯২০ জনের বয়স ৭৫ থেকে ৭৯ বছরের মধ্যে। ৫ হাজার ৬৩৫ জনের বয়স ৭০ থেকে ৭৪ বছরের মধ্যে।
জাপানের সরকারি টিভি নেটওয়ার্ক এনএইচ-এর তথ্যানুযায়ী, এখনও যেসব মরদেহের খোঁজ পাওয়া যায়নি, সেগুলো খুঁজে বের করতে পুলিশ এজেন্সিটি তাদের অনুসন্ধানের তথ্য সরকারকে দেবে।
এর আগে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অভ পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি রিসার্চ চলতি বছরের এপ্রিলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, জাপানে একাকী বসবাসকারী প্রবীণ নাগরিকের (৬৫ বছর ও তার বেশি বয়সি) সংখ্যা ২০৫০ সাল নাগাদ ১০.৮ মিলিয়নে পৌঁছাবে।
এপ্রিলে জাপান সরকার দেশটির দীর্ঘদিনের নিঃসঙ্গতা ও বিচ্ছিন্নতা সমস্যা দূর করতে একটি নতুন বিল পাশ করেছে।
জাপান দীর্ঘদিন ধরেই প্রবীণ ও ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান করতে কাজ করছে। কিন্তু এ সমস্যা এতই তীব্র হয়ে উঠছে যে তা সামাল দেওয়া সরকারের জন্য কঠিন হয়ে উঠছে।
জাপানি তরুণ-তরুণীদের দেরিতে বিয়ে করার এবং অনেকের ক্ষেত্রে বিয়ে না করার প্রবণতা, আবার অনেকের সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে দেশটিতে একদিকে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে জনসংখ্যাও দিন দিন কমছে।
গত বছর জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছিলেন, ক্রমহ্রাসমান জন্মহারের কারণে তার দেশ সমাজ হিসেবে অকার্যকর হয়ে পড়ার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে।
জাপানের কয়েকটি প্রতিবেশী দেশও একই সমস্যায় ভুগছে।
১৯৬১ সালের পর প্রথমবারের মতো ২০২২ সালে চীনের জনসংখ্যা কমে যায়। এছাড়া পৃথিবীতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রজনন হার সবচেয়ে কম।