খুলেছে আশুলিয়ার অধিকাংশ পোশাক কারখানা, সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ অব্যাহত
ঢাকার আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে আজ মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) অধিকাংশ পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে, এর মধ্যে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখেছেন বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশের একটি সূত্র।
অন্যদিকে, বকেয়া বেতনসহ যাবতীয় আইনগত পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে গতকাল (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক অবরোধ করে বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকদের বিক্ষোভ এখনো অব্যাহত রয়েছে।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ করে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা এখনো সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। তারা বলছেন, তাদের পাওনাদি পরিশোধ না করা হলে তারা সড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করবে না।
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বাইপাইলে গতকাল সকাল থেকে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে রাখায় নবীনগর-চন্দ্রা সড়কের উভয় পাশ এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর থেকে বিশমাইল এলাকা পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।"
এদিকে শিল্প সূত্র জানায়, শিল্পাঞ্চলের জিরাবো রোডে অবস্থিত এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড ব্যতীত বাকী সব কারখানা চালু রয়েছে। এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড স্ববেতনে সাধারণ ছুটি রয়েছে।
টঙ্গাবাড়ি এলাকায় ম্যাংগো টেক্স লিমিটেড স্ববেতনে ছুটি থাকলেও, ঐ অঞ্চলের মন্ডল নিটওয়্যার, ন্যাচারাল ডেনিম, ন্যাচারাল ইন্ডিগোসহ অন্যান্য সকল কারখানা চালু রয়েছে। জামগড়া, নরসিংহপুর এলাকায় সেতারা ব্যতীত এনভয়, দ্য রোজ, হামীম, শারমীন, মেডলার, অনন্তসহ অন্যান্য সকল কারখানা চালু রয়েছে। সেতারায় স্ববেতনে সাধারণ ছুটি রয়েছে। বাইপাইল এলাকায় স্কাইলাইন কারখানা স্ববেতনে ছুটি রয়েছে তবে চালু রয়েছে অন্যান্য সকল কারখানা।
তবে, গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় টিএনজেড গ্রুপের অ্যাপারেল প্লাসের শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। কারখানাটি ৬ মাস আগে বন্ধ হলেও এখনো ম্যানেজমেন্ট থেকে শ্রমিকদের আর্থিক সুবিধাদি দেওয়া হয়নি। এর বাইরে, গাজীপুরের অন্যান্য সকল এলাকার সকল কারখানাগুলো সচল রয়েছে বলে শিল্প সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে গতকাল সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাইপাইল এলাকায় এবং ডিওএইচএস সামনে মহাসড়কটির পয়েন্ট দুটিতে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা।
পরবর্তীতে ডিওএইচএস এর সামনে থেকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সরে গেলেও বাইপাইল এলাকায় অবস্থান নিয়ে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
গত ২৭ আগস্ট এক নোটিশে বার্ডস গ্রুপ কর্তৃপক্ষ জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বেশ কিছুদিন যাবৎ কারখানাতে কোন প্রকার কাজ না থাকলেও, কারখানা কর্তৃপক্ষ অব্যাহতভাবে আর্থিক লোকসানের মধ্য দিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছিল। অনেক চেষ্টার পরেও নতুন কোন কাজের অর্ডার সংগ্রহ করা যায়নি, যেটি কারখানা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত। এ অবস্থায়, গত ২৮ আগস্ট থেকে গ্রুপটির আর এন আর ফ্যাশনস লি., বার্ডস গার্মেন্টস লি., বার্ডস ফেডরেক্স লি. এবং বার্ডস এ এন্ড জেড লি. এর সকল সেকশনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বার্ডস গ্রুপ তাদের কারখানা বন্ধ ঘোষণা করার পরে বিষয়টি নিয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে বিজিএমইএ, শ্রমিকসহ সকল পক্ষের একটি বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল গ্রুপটির শ্রমিকদের যাবতীয় আইনগত পাওনাদি পরিশোধের কথা ছিল।"
কিন্তু বার্ডস গ্রুপ কর্তৃপক্ষ গতকাল শ্রমিকদের বেতন দিতে না পারায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।