২২৫ মিলিয়ন ডলারের বৈদ্যুতিক রেলওয়ে প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী এডিবি
নারায়ণগঞ্জ থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত বৈদ্যুতিক ট্রেন চালানোর জন্য পরিকল্পিত বাংলাদেশ রেলওয়ের ২৫৫ মিলিয়ন ডলারের বৈদ্যুতিক ট্র্যাকশন প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এডিবি প্রতিনিধি, রেলওয়ে কর্মকর্তা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা করেন। পরিবেশগত সুবিধা থাকায় এডিবি এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও আলোচনা করা হবে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
এ প্রকল্প্বে রয়েছে ক্যাটেনারি লাইন, ওয়ার্কশপ ও রোলিং স্টক নির্মাণ ও অধিগ্রহণ।
বৈদ্যুতিক ট্র্যাকশন রেলওয়ে এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে মেট্রোরেল সিস্টেমের মতোই ক্যাটেনারি তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ট্রেন চালানো হয়।
প্রকল্প পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন লাইন ও টঙ্গী-জয়দেবপুর কমিউটার লাইনের জন্য বৈদ্যুতিক ট্র্যাকশন সিস্টেমের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পুরো প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭৮১.৭৯ মিলিয়ন ডলার।'
তবে প্রাথমিক পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত কমিউটার লাইন বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে হবে বলে জানান তিনি। এর ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৫৫ মিলিয়ন ডলার।
প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, নতুন ধরনের এই ট্রেন লাইন বিদ্যমান রেলপথের ওপর তৈরি করা হবে। ওপরে ক্যাটেনারি ক্যাবল স্থাপন করা হবে।
বর্তমানে প্রকল্পের বিশদ নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। কাজটি ৬৬ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন ও ইনসেপশন রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনের কাজ চলছে।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে পুরোপুরি বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ নকশার কাজ করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে তুরস্কের আঙ্কারাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান তুমাসের সঙ্গে ৫ লাখ ২৪ হাজার ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০২৩ সালের আগস্টে নকশার কাজ শুরু করে তুমাস।
৩৪৮.১৬ কিলোমিটার ট্র্যাকে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম অংশের ৩৩৬.৮৯ কিলোমিটার ও টঙ্গী-জয়দেবপুর অংশের ১১.২৭ কিলোমিটার রয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় ২০৩২ সালের মধ্যে ৩৪৮.১৬ কিলোমিটার ট্র্যাককে ৭০টি স্টেশনসহ বৈদ্যুতিক ট্র্যাকশন সিস্টেমে রূপান্তর করার লক্ষ্য রয়েছে। এটি চালু করার লক্ষ্য ২০৩৩ সালে।
প্রস্তাবিত সিস্টেমে দুই ধরনের লাইন থাকবে—মেইন ও কমিউটার। এতে ট্রেনের গতিবেগ হবে ঘন্তায় ১২০ কিলোমিটার, যা পরে আপগ্রেড করা যাবে।
এছাড়াও সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় পাহাড়তলী ও জয়দেবপুরে দুটি ওয়ার্কশপ তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ প্রকল্পটি পরিবেশবান্ধব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নির্মাণকালেও নেতিবাচক প্রভাব সীমিত থাকবে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ে চার ধাপে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে।
প্রথম ধাপের জন্য ২০২৬ সালে টেন্ডার চূড়ান্ত করা হবে এবং ২০২৮ সালে বৈদ্যুতিক কমিউটার পরিষেবা চালু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ২০৩০ সালে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং ২০৩৩ সালে মেইন লাইনের বৈদ্যুতিক ট্র্যাকশন চালু হবে।
পাশাপাশি তৃতীয় ধাপের প্রথম অংশে ২০২৬ সালে টেন্ডার চূড়ান্ত করা হবে এবং ২০২৮ সালে কমিউটার পরিষেবার জন্য নতুন রোলিং স্টক যুক্ত করা হবে। তৃতীয় ধাপের শেষ অংশে ২০৩০ সালে টেন্ডার হবে এবং ২০৩৩ সালে মেইন লাইনের জন্য নতুন রোলিং স্টক চালু করা হবে।
সম্ভাব্যতা সমীক্ষার অর্থনৈতিক ও আর্থিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই নতুন সিস্টেম যাত্রী ও ট্রেন ব্যবহারকারীদের জন্য সময় সাশ্রয়, সড়ক পরিবহনের ওপর চাপ হ্রাস, জ্বালানি সাশ্রয় এবং পরিবেশগত প্রভাবের দিক থেকে উপকারী হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কমিউটার লাইন থেকে (জয়দেবপুর-নারায়ণগঞ্জ) ২৪ শতাংশ অর্থনৈতিক রিটার্ন আশা করা হচ্ছে, আর মেইন লাইন থেকে (নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম) রিটার্ন আসবে ৪১ শতাংশ।
এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হবে বলেও আশা করা হচ্ছে। কমিউটার লাইনে ১৫ শতাংশ ও মেইন লাইনে ২৫ শতাংশ রিটার্নের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশ ও রেলওয়ে খাতের যেসব অর্থনৈতিক ও আর্থিক সুবিধা পাবে, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, এ সিস্টেম চালুর ফলে পণ্য পরিবহন বাড়বে, রিটার্ন বেশি আসবে, সড়ক পরিবহনের ওপর চাপ কমাবে, পরিবহনের গতিবেগ বাড়াবে, জ্বালানি সাশ্রয় করবে, সবুজ পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে আসবে, চালানোর ব্যয় কমবে এবং গড় গতিও বাড়বে।