হতশ্রী ব্যাটিংয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের বড় হার
ফরম্যাট বদলায়, বদলায় ক্রিকেটার। লড়াইয়ের মঞ্চেও থাকে ভিন্নতা। কিন্তু কেবল একটা ব্যাপারই বদলাচ্ছে না, সেটা বাংলাদেশের ব্যাটিং। টেস্ট, টি-টোয়েন্টি কিংবা প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডে; সবখানেই চরম দৃষ্টিকটু ব্যাটিং করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষেও নাজমুল হোসেন শান্তর দলের সঙ্গী সেই ব্যাটিং হতাশা। ফলও তাই অভিন্ন, হতশ্রী ব্যাটিংয়ে আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশকে মেনে নিতে হলো বিশাল এক হার।
বুধবার দুবাইয়ের শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৯২ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে রানের হিসেবে আফগানদের বিপক্ষে এটা বাংলাদেশের তৃতীয় বড় হার। এ নিয়ে ১৭ ওয়ানডের ৭টিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারলো তারা। চরম ব্যাটিং দুর্দশার দিনে ১৫.৩ ওভার বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ, ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী হয়ে পড়া দলটি শেষের ৮ উইকেট হারায় মাত্র ২৩ রানে। সীমাটা আরও ছোট করলে ১১ রানে শেষ ৭ উইকেট হারায় তারা।
বাংলাদেশের এমন করুণ হাল আফগানিস্তানের তরুণ বোলার আল্লাহ মোহাম্মদ গাজানফারের দুর্দান্ত বোলিংয়ের কারণে। ১৮ বছর বয়সী ডানহাতি এই স্পিনার একাই ধসিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ। মাত্র ষষ্ঠ ওয়ানডে খেলতে নেমে বাংলাদেশের ৬ জন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরত পাঠান তিনি। ৬.৩ ওভারে ২৬ রানে ৬টি উইকেট নেন ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা আফগান এই বোলার, যা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।
আগে ব্যাটিং করা আফগানরা চাপে পড়ে বাংলাদেশের পেস আক্রমণে। মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলামরা দাপট দেখান। বিশেষ করে মুস্তাফিজ ও তাসকিনের বিপক্ষে বেশি ভুগতে হয় আফগানিস্তানকে। দুজনই ৪টি করে উইকেট নেন, বাকি দুই উইকেটের একটি শরিফুলের শিকার, আরেকটি রান আউট। তিন পেসার মিলে আফগানদের ৯ উইকেট নেন।
বাংলাদেশের একাদশে ছিলেন দুজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার; মেহেদী হাসান মিরাজ ও রিশাদ হোসেন। অনিয়মিত হিসেবে বোলিং করেন অফ স্পিনার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। কিন্তু বাংলাদেশের এই তিন স্পিনারের কেউই উইকেট পাননি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামতেই যেন উইকেটের চরিত্র পাল্টে যায়। আফগান বিষে নীল হয়ে দিশাহারা হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। গাজানফারের শিকার ৬ উইকেট, তারকা লেগ স্পিনার রশিদ খান নেন ২ উইকেট। একটি উইকেট পান মোহাম্মদ নবী।
আফগান স্পিনাররা নেন ৯ উইকেট, একটি উইকেট কেবল পেসারের দখলে। সেটা নেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। এখানেই দুই দলের সামর্থ্যের পার্থক্য পরিষ্কার। সামর্থ্যের পার্থক্য আছে ব্যাটিংয়েও। ৭১ রানে ৫ উইকেট হারানোর পরও ২৩৫ রান তোলে আফগানিস্তান। ১০৪ রানের জুটি গড়ে দলকে অনেকটা পথ এগিয়ে নিয়ে যান হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি ও নবি।
বাংলাদেশের ইনিংসে ঠিক এর উল্টোটা হয়েছে। দলীয় ১২ রানেই প্রথম উইকেট হারালেও দ্বিতীয় উইকেটে ৫৩ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক শান্ত ও সৌম্য সরকার। তৃতীয় উইকেটে দারুণ লড়ে বাংলাদেশ, মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে ৫৫ রানের জুটি গড়েন শান্ত। কিন্তু ম্যাচসেরা গাজানফারের তোপের মুখে এখান থেকে যে উইকেট বৃষ্টি শুরু হয়, মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ৩৪.৩ ওভারে ১৪৩ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
ব্যাটিং ব্যর্থতায় ভারত সফরে চরম দুঃসময়ে আটকে ছিল বাংলাদেশ। দুই ম্যাচে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় সফরকারীরা। ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও বদলায়নি তাদের ভাগ্য, উল্টো ভারত করে গেছে রান উৎসব, তুলে নিয়েছে বড় বড় জয়। সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে তিন ম্যাচের সিরিজেও হোয়াইটওয়াশের তেতো স্বাদ নিতে হয় শান্তর দলকে। এবার প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডেতেও অসহায় আত্মসমর্পণে মেন নিতে হলো বড় হার।
২৩৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় সবচেয়ে বেশি সময় উইকেটে থেকেছেন শান্ত। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান দলীয় ১২০ রানে আউট হওয়ার আগে ৬৮ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৪৭ রান করেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেন সৌম্য। তার ৪৫ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৬টি চার। লড়াইয়ের চেষ্টা করা মিরাজ ৫১ বলে একটি ছক্কায় ২৮ রান করেন। এর বাইরে তাওহিদ হৃদয় করেন ১১ রান। বাকি সাতজনের কেউ-ই দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি।
এর আগে ব্যাটিং করা আফগানিস্তান দ্বিতীয় ওভারেই রহমানউল্লাহ গুরবাজকে হারায়, তাকে ফেরান তাসকিন। শুরুতেই উইকেট হারিয়ে রান তোলার দিকে মন দিতে পারেনি দলটি। এর মাঝে কয়েক ওভার পর যেন 'যমদূত হয়ে দেখা দেন মুস্তাফিজ। অষ্টম ওভারে তার শিকার রহমত শাহ। নিজের পরের ওভারটি করতে এসেেআরও দাপট দেখান বাঁহাতি এই পেসার। এই ওভারে তিনি ফেরান অভিষিক্ত সাদিকুল্লাহ অতল ও আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে।
৩৫ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ঘোর সঙ্কটে পড়ে যায় আফগানিস্তান। এই চাপ কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন গুলবাদিন নাঈব ও শহিদি। কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও এই জুটি বড় হয়নি। দলীয় ৭১ রানে গুলবাদিনকে থামান মুস্তাফিজ। ৩২ বলে ২২ রান করেন থামেন আফগান এই অলরাউন্ডার। মাঝ দরিয়ায় পড়ে যাওয়া দলকে পথ দেখানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন শহিদি ও নবি।
দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ১২২ বলে ১০৪ রানের জুটি গড়ে শহিদি ও নবি। ষষ্ঠ উইকেটে এটা তাদের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ রানের জুটি, বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ৯২ বলে ২টি চারে ৫২ রান করা শহিদিকে ফেরান মুস্তাফিজ। এরপর আরও কিছুটা সময় উইকেটে থাকেন নবি, ব্যাটিং করেন ৪৮ ওভার পর্যন্ত। ডানহাতি এই অলরাউন্ডার ৭৯ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮৪ রানের মহাকার্যকর ইনিংস খেলেন।
শেষ দিকে নেমে দারুণ উপকারী এক ইনিংস খেলেন নাঙ্গেলিয়া খাতোরে। বাঁহাতি এই স্পিনার ২৮ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২৭ রান করেন, যা আফগানিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ। মুস্তাফিজ ১০ ওভারে ৫৮ রানে ৪টি উইকেট নেন। তাসকিনের শিকারও ৪ উইকেট, ১০ ওভারে তার শিকার ৫৩ রান। বাঁহাতি পেসার শরিফুল বেশি উইকেট না পেলেও কৃপণ বোলিং করেন, ৯.৪ ওভারে ৩২ রান দেন তিনি। ডানহাতি স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ১০ ওভারে ৩০ রানে কোনো উইকেট পাননি।