যেসব ঐতিহাসিক রহস্যের আজও কিনারা হয়নি
কী ছিল লাইব্রেরি অব আলেকজান্দ্রিয়ায়?
প্রাচীন যুগে আলেকজান্দ্রিয়ার মতো সমৃদ্ধ লাইব্রেরি বেশি ছিল না। যেমন আয়তনে ছিল বড় তেমনই ছিল মূল্যবান সব সংগ্রহ। আলেকজান্দ্রিয়া গবেষণা ইনস্টিটিউটের অংশ ছিল এটি। বেশিরভাগ গবেষক একমত এর গ্রন্থসংখ্যা ছিল তিন থেকে সাত লক্ষ। কিন্তু সম্ভবত আমরা কখনোই জানতে পারেব না, আসলেই এটা কত বড় ছিল আর কত অমূল্য সম্ভার ছিল এতে? কারণ এটি ধ্বংস হয়ে গেছে। আর এর কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষও নেই। এর ব্যাপারে জানার উপায় কেবলই কিছু লিখিত কাগজপত্র।
ঐতিহাসিকরা বলছেন, এতে অলংকারশাস্ত্র, আইন, মহাকাব্য, বিষাদকাব্য, ইতিহাস, চিকিৎসাশাস্ত্র, গণিত এবং প্রকৃতিবিজ্ঞান বিষয়ক বই ছিল। সেসব বই আমাদেরকে বলতে পারত ওই সময়ের মানুষ কী ভাবত বিশ্ব সম্পর্কে। কিন্তু সেগুলো এমনভাবেই হারিয়ে গেছে যে কিছুই ধারণা করা যাচ্ছে না।
যেভাবে মারা গেলেন অ্যাডগার অ্যালান পো (১৮০৯-১৮৪৯)
কী হয়েছিল শেষ জীবনে এই আমেরিকান এই কবির? কোনো উত্তর মিলছে না। কবিকে শেষ দেখা গিয়েছিল বাল্টিমোরের রাস্তায় এলোমেলো ঘুরছেন। তাঁকে দেখাচ্ছিল দিশেহারা, হতাশাগ্রস্ত। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, আর দিনকয়েক পরেই তিনি মারা যান।
কবির বন্ধু জোসেফ ই স্নডগ্রাস তাকে দেখতে গিয়েছিলেন কিন্তু চিনতে পারছিলেন না। তিনি প্রলাপ বকছিলেন, তার পরনে ছিল ঢিলেঢালা পোশাক, নিশ্চিতভাবে মনে হচ্ছিল সেটা তার নয়। যেহেতু বিকারগ্রস্ত ছিলেন তাই পো বলতে পারছিলেন না, তার কী হয়েছিল। মৃত্যুর আগে আগে তিনি বারবারই রেনল্ড নামে কারো নাম আউড়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কেন তিনি এ নাম বলছেন, তা ভেবে বের করতে পারেনি কেউই।
ডাক্তাররা বলেছেন, পোর ব্লাড সুগার একদম নিচে নেমে গিয়েছিল। ধারণা করা হয় তিনি আত্মহত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে থাকবেন। তিনি সম্ভবত অতিরিক্ত মাদক গ্রহণ করেছিলেন। স্নডগ্রাসও বিশ্বাস করতেন, মাদক নামে তাকে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল। অনেকে বলেন, তিনি সম্ভবত কোনো দলের নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকবেন। সেসময় কিছু কিছু মাস্তান ঘুরে বেড়াচ্ছিল যারা নির্দিষ্ট প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য লোকেদের পীড়াপীড়ি করত। তারা জোর করে মাদক গ্রহণ করাত ভোটারকে যেন সে তাদের কথা মানতে বাধ্য হয়।
পরিহাসের বিষয় এই যে, পোয়ের সাহিত্যে দারুণ চৌকস সব গোয়েন্দার দেখা মিললেও, বাস্তবে সেরকম কোনো গোয়েন্দা এসেই পোয়ের নিজের মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।
রহস্যময় ভ্যাটিকান লাইব্রেরি
জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয় ভ্যাটিকান লাইব্রেরি। লাইব্রেরির সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ অ্যাপস্টলিক আর্কাইভ, যেখানে যীশুর ১২ জন শিষ্য এবং যীশুর সময়কালের কথা সংরক্ষিত আছে। এখানে পোপদের নিজেদের লেখা চিঠি, এবং পোপদের উদ্দেশে লেখা চিঠিও সংরক্ষিত আছে। ১৭ শতকে এটিকে মূল লাইব্রেরি থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়। এর সবচেয়ে পুরনো নথি হলো ৮০৯ খ্রিস্টাব্দের একটি লুজ (ছাড়া ছাড়া) পার্চমেন্ট। এতে ভেনিস থেকে প্রাপ্ত দানের কথা বলা থাকতে পারে। আর্কাইভে আরো আছে মার্টিন লুথার কিংকে ১৫২১ সালের ১ জানুয়ারিতে পোপ দশম লিওর জারিকৃত সনদ। যেখানে তাকে রোমান সম্রাট পঞ্চম চার্লসের সম্মুখে হাজির হয়ে সাফাই গাইতে বলা হয়। কিন্তু তিনি তার লেখনীর বিপক্ষে অবস্থান নিতে রাজী হননি। তাই তাকে বিপথগামী ঘোষণা করা হয়েছিল। আর্কাইভটি আকর্ষনীয় এই কারণেও যে, এতে ১২০০ বছরের ঐতিহাসিক নথিপত্র আছে। বিভিন্ন ভাষায় লেখা অসংখ্য গ্রন্থ আছে এতে যা পর পর সাজালে কয়েক কিলোমিটার পার হয়ে যাবে। কেবল নির্বাচিত গবেষকরাই এতে প্রবেশের অনুমতি পায়, সবমিলিয়ে সংখ্যাটি বছরে দাড়ায় মোটে হাজারখানেক।
কবর কোথায় চেঙ্গিস খানের?
কোথায় কবর চেঙ্গিস খানের? উত্তর ধোঁয়াশা। তাকে মোঙ্গল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় এবং তিনিই এই সাম্রাজ্যের প্রথম অধিপতি। তিনি এতো বেশি এলাকা দখলে নিয়েছিলেন যে এত বড় সাম্রাজ্য পৃথিবী আর দেখেনি। সে সাম্রাজ্য তার মৃত্যুর পরেও সম্প্রসারিত হয়েছে। এটা পৃথিবীর মোট আয়তনের ১৬ ভাগ ছিল এবং পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ২৫ ভাগ এসেছিল মোঙ্গলদের আয়ত্ত্বে।
চেঙ্গিস মারা গিয়েছিলেন চীনের একটি এলাকা ইনচুয়ান পতনের পর। তার মৃত্যুর কারণ যেমন অপরিষ্কার তেমনি তাকে কোথায় কবর দেওয়া হয়েছিল তা-ও জানা যায় না পরিষ্কার করে। গবেষকরা বলেন, এটা মোঙ্গলদের পবিত্র পাহাড় বুরখান খালদুনের (উত্তর-পূর্ব্ মঙ্গোলিয়ায়) কাছাকাছি কোথাও হবে। জনশ্রুতি আছে, চেঙ্গিস নিজেই চাননি তার কবরে কোনো চিহ্ন দেওয়া হোক এবং তাকে মেইনল্যান্ড মঙ্গোলিয়ায় ফিরিয়ে নেওয়া হোক।
আয়রন মাস্কের পেছনের আসল মানুষ
তিনি একজন বন্দি ছিলেন যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১৯৬৯ বা ১৯৭০ সালে। ৩৪ বছরের পুরো বন্দি জীবনে তিনি সব সময় মুখ ঢেকে রেখেছিলেন। আসলে তিনি কিন্তু আয়রন মাস্ক পরেননি। কালো ভেলভেট কাপড়ে ঢেকে রাখতেন মুখ কিন্তু ভলটেয়ার নাটকীয়ভাবে একে আয়রন মাস্ক অভিধা দিয়েছিলেন। লোকে বলে, মানুষটি বয়স্ক ছিল আর তিনি চতুর্দশ লুইয়ের অবৈধ ভাই ছিলেন। এই জনশ্রুতির কারণ হলো, তাকে যেখানে রাখা হয়েছিল সেখানে তেমন কাউকেই রাখা হতো যারা রাষ্ট্রের জন্য বিব্রতকর। রাজা লুইয়ের শ্যালিকা এলিজাবেথ একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, দুইজন প্রহরী দণ্ডায়মান থাকত তার পাশে এবং ক্রমাগত হুমকি দিত মাস্ক খুললেই মেরে ফেলব।
আইনস্টাইনের শেষ কথা
জার্মান পদার্থবিদ অ্যালবার্ট আইনস্টাইন মারা গেছেন নিউ জার্সির প্রিন্সটন হাসপাতালে ১৯৫৫ সালে। তিনি আভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে মারা যান। তিনি চিকিৎসা নিতেও বেশি রাজী ছিলেন না কারণ কৃত্রিমভাবে জীবনের দৈর্ঘ্য বাড়ানোর আগ্রহ তার ছিল না। তিনি সম্ভবত সময় বেশি কাটাচ্ছিলেন এই ভেবেই যে, শেষ সময়ে কী বলে যাবেন।
ঘটনাচক্রে একজন সেবিকা ছিলেন তাঁর মৃত্যুশয্যার পাশে। সেবিকা দেখেছিলেন, তিনি বিড়বিড় করছেন। কিন্তু সেবিকা কিছুই বুঝতে পারেননি কারণ স্বর ছিল নিচু আর তিনি বলছিলেন জার্মান ভাষায়। সম্ভবত আইনস্টাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো উপলব্ধির কথা বলছিলেন অথবা মাতৃভাষায় পৃথিবীকে বিদায় বলেছিলেন।
বিগ ব্যাংয়ের আগে কী ছিল?
প্রায় সব বিজ্ঞানী একমত আমাদের মহাবিশ্বের শুরুর কাল নিয়ে। তারা বলেন, একটা খুব উত্তপ্ত ও ঘন কিছু থেকে মহাবিশ্বের সূচনা, প্রসারণ; এবং তা আজো প্রসারিত হয়ে চলেছে। এটাকেই বলা হচ্ছে বিগ ব্যাং। কিন্তু তার আগে কী ছিল?
এর উত্তর সত্যি কারও জানা নেই। কিন্তু এ বিষয়ে থিওরি-হাইপোথিসিসিসের কোনো কমতি নেই। সেগুলো থেকে আমরা যদি কোনো নির্দিষ্ট তত্ত্বেও থিতু হয়ে যাই, তারপরও প্রশ্ন আসবে: এর আগে তবে কী ছিল? তাই অনেকে বলছেন, তাহলে ইস্তফা দেওয়া হোক এ ভাবনায়। কিছু ব্যাপার থাক না গোপন!