কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাসটেইনেবিলিটি রেটিং: দেশের শীর্ষ ১০ ব্যাংক, ৩ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ
দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) সাসটেইনেবল রেটিং ২০২৩ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে স্থান পেয়েছে ১০টি ব্যাংক ও তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। টানা চার বছর ধরেই এ তালিকায় স্থান পেল ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্স।
দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর টেকসই বিনিয়োগের ভিত্তিতে এই রেটিং প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০২২ সালের রেটিংয়ে স্থান পেয়েছিল সাতটি ব্যাংক ও চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, 'আমি মৌখিকভাবে জানতে পেরেছি, সিটি ব্যাংকই এবারে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে। এটি বিশেষ আনন্দের খবর।'
তিনি বলেন, ১০০ নম্বরের মধ্যে করা এ রেটিংয়ের ৪৫ নম্বর দেওয়া হয় মুনাফা, তারল্য, মূলধন পর্যাপ্ততা, খেলাপি ঋণের হারের মতো কোর ব্যাংকিং পারফরম্যান্সের ওপর। এছাড়া ১০ নম্বর দেওয়া হয় সব ধরনের বিতরণ নেটওয়ার্ক, যেমন দেশজুড়ে ব্যাংকের ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল উপস্থিতির জন্য।
মাসরুর আরেফিন আরও বলেন, 'হ্যাঁ, আমরা টেকসই ও সবুজ অর্থায়নের চর্চায় খুব ভালো। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই রেটিং বোঝায় যে সার্বিকভাবে আমরা একটি খুব ভালো ব্যাংক। আমরা এই ধারায়ই চলতে চাই এবং আমাদের সব গ্রাহকদের মনে বিশ্বাস গড়ে তুলতে চাই।'
২০২৩ সালের সাসটেইনেবল রেটিংয়ে শীর্ষ ১০-এ থাকা ব্যাংকগুলো হলো—ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো: আইডিএলসি ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স।
২০২৩ সালের রেটিংয়ে শীর্ষ ১০-এ স্থান পাওয়া নতুন তিনটি ব্যাংক হচ্ছে: ইস্টার্ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের পরিচালক চৌধুরী লিয়াকত আলী বলেন, 'আমরা পাঁচটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সাসটেইনেবল রেটিং করে থাকি—টেকসই অর্থায়ন সূচক, পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে অর্থায়ন, সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম (সিএসআর), টেকসই কোর ব্যাংকিং সূচক ও ব্যাংকিং সেবার পরিধি।'
তিনি জানান, এ রেটিংয়ে এতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম সাজানো হয়েছে আদ্যক্ষরের ভিত্তিতে। অর্থাৎ এ তালিকায় প্রথমে যে প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে, সেটিই শীর্ষ ব্যাংক কি না তা নিশ্চিত নয়।
লিয়াকত আরও বলেন, 'যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমাদের রিপোর্টিংয়ে আসেনি, তারা যে খারাপ ব্যাংক, তা নয়। আমাদের যেসব বিষয়গুলো নির্দিষ্ট করেছি, এ বছরে এসব প্রতিষ্ঠান সেসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ কম করায় তারা রেটিংয়ে আসতে পারেনি। পরের বছর ভালো বিনিয়োগ করলে তালিকায় চলে আসতে পারবে।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, সবুজ অর্থায়ন ও টেকসই অর্থায়নে বিনিয়োগে সাসটেইনেবিলিটি রেটিংয়ে ভালো নম্বর পাওয়া যায়। এছাড়া কোর ব্যাংকিং সাসটেইনেবিলিটি ও ব্যাংকিং সার্ভিস কাভারেজ—এ দুটি উপাদানে প্রায় ৬০ শতাংশের মতো স্কোর পাওয়া যায়।
যেসব বিষয়ের ওপর মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আছে—নিট খেলাপি ঋণের হার, ঝুঁকি ভারিত সম্পদের বিপরীতে মূলধনের অনুপাত (টিয়ার-১), লিকুইডিটি কাভারেজ রেশিও, প্রভিশন সংরক্ষণের হার প্রভৃতি।
এছাড়াও ব্যাংকিং সেবা কাভারেজ-এর আওতায় শাখার সংখ্যা, আমানত অ্যাকাউন্ট, ঋণ অ্যাকাউন্ট ও এজেন্ট আউটলেটের মতো বিষয়গুলোর ওপর ১০ শতাংশ নম্বর বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২০ সালে এই সাসটেইনেবিলিটি রেটিং চালু করেছে। ওই বছর তিনটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক তালিকায় ছিল—ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ও এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড। ২০২২ সালে মাত্র একটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক এই রেটিংয়ে স্থান পায়। ২০২৩ সালেও মাত্র একটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক রেটিংয়ে আসতে পেরেছে।