জ্বালানি ও সারের ভর্তুকি কমাতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার, জানতে চাইবে আইএমএফ
আজ মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সপ্তাহব্যাপী মিশন। এ সফরে জ্বালানি ও সারের দাম বাড়িয়ে এ দুখাতের ভর্তুকি কমানোর সরকারি কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইবে সংস্থাটি।
বাংলাদেশকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণদাতা আইএমএফ গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের বকেয়া ভর্তুকি পরিশোধের জন্য সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কেও জানতে চাইবে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।
আগামী ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড় করবে আইএমএফ। তার আগে গত জুন পর্যন্ত সময়ে ঋণের শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি যাচাই করতে ঢাকা আসছে আইএমএফ মিশন।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবেন মিশনের কর্মকর্তারা।
গত বছরের জানুয়ারিতে আইএমএফ-এর সঙ্গে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি করে সরকার। ইতোমধ্যে ওই ঋণ চুক্তির আওতায় তিন কিস্তিতে প্রায় ২.৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী, গত কিস্তিতে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করেছে আইএমএফ। আগামী ডিসেম্বরে চতুর্থ কিস্তির সময়ও বাড়তি অর্থ ছাড় হবে বলে আশা করছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর আইএমএফ-এর কাছ থেকে আরও তিন বিলিয়ন ডলার ঋণপ্রস্তাব পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক। পুরোনো ঋণের শর্ত বাস্তবায়নের পাশাপাশি নতুন ঋণ প্রস্তাব নিয়েও মিশনের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।
তবে নতুন ঋণ নিয়ে মূল আলোচনা হবে অক্টোবরে আইএমএফ-এর বার্ষিক সম্মেলনে। সেখানে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নর এ বিষয়ে আলোচনা করবেন।
যে-সব বৈঠক করবে আইএমএফ মিশন
আইএমএফ-এর মিশন সফরে আসার আগেই তারা কোন কোন বিষয়ে আলোচনা করবে, তার একটি বিস্তারিত বিবরণ সরকারকে পাঠিয়ে দেয়। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেয় মন্ত্রণালয়গুলো।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আইএমএফ-এর প্রস্তাবিত মিটিং শিডিউল অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকালে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মিটিংয়ের মধ্য দিয়ে আইএমএফ মিশন কাজ শুরু করবে।
আলোচনায় 'চলতি অর্থবছরের আউটলুক, স্বল্পমেয়াদি অগ্রাধিকার, আইএমএফ-এর পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া কর্মসূচির অধীনে সরকারের প্রতিশ্রুতি এবং পরিকল্পিত রাজস্ব সংস্কার' নিয়ে আলোচনা হবে।
পরে অর্থবিভাগের সচিব, বাজেট অনুবিভাগের কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করবে আইএমএফ মিশন। সেখানে গত অর্থবছরের বাজেট পারফরম্যান্সের পাশাপাশি রাজস্ব ও ব্যয় আউটকাম, এডিপি ও নন-এডিপি ব্যয়, পণ্য ও সেবা, ভর্তুকি ও স্থানান্তর, অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধ, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বকেয়া ভর্তুকি এবং ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ভর্তুকির পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে।
সরকারের ঋণ পরিস্থিতি জানতে অর্থবিভাগের ঋণ ব্যবস্থাপনা দলের সঙ্গে পৃথক সভা করবে আইএমএফ। এতে ২০২৩–২৪ অর্থবছরের অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ অর্থায়নের কম্পোজিশন, ২০২৪–২৫ থেকে ২০২৬–২৭ অর্থবছরে ঋণের পূর্বাভাস এবং সরকার-গ্যারান্টিযুক্ত ও অ-রেয়াতি ঋণ নিয়ে আলোচনা হবে।
আগামীকাল বুধবার ভর্তুকি ও সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে সভা করবে আইএমএফ। এতে গত অর্থবছরের সার, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ভর্তুকির পরিস্থিতি এবং বাজেটের বাইরে সরকার-অধিভুক্ত এন্টারপ্রাইজগুলোর ভর্তুকি সম্পর্কে তথ্য চাইবে আইএমএফ।
গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন খাতে বকেয়া ভর্তুকির পরিমাণ এবং তা পরিশোধ করতে সরকারের পরিকল্পনা এবং সার ও জ্বালানির দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমাতে সরকার কী পরিকল্পনা করছে, সে তথ্যও জানতে চাইবে আইএমএফ।
বৃহস্পতিবার আইএমএফ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান এবং আয়কর, ভ্যাট এবং শুল্ক বিভাগের সদস্যদের সাথে দেখা করবে।
এনবিআর-এর ভ্যাট, কাস্টমস ও ইনকাম ট্যাক্স-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক পৃথক সভা করবে আইএমএফ। এছাড়া, শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভায় চলতি অর্থবছরে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা সম্পর্কেও জানতে চাইবে আইএমএফ।