দুর্দশার ব্যাটিংয়ে ২০ বছর আগের অস্বস্তির রেকর্ডে ফিরল বাংলাদেশ
বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা প্রায়ই একটি বিষয় নিয়ে সমালোচনা, ট্রল করে থাকেন। একই উইকেটে বাংলাদেশের তুলনায় প্রতিপক্ষ ভালো ব্যাটিং করলে তারা মজা করে বলে থাকেন, 'বদলে গেছে উইকেটের চরিত্র।' বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার চলমান টেস্টে বিষয়টি আর মজা রইলো না। সত্যিই যেন পাল্টে গেল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটের চরিত্র।
এ কারণেই শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের ইনিংসের ব্যবধান হলো আকাশ-পাতাল। যে উইকেটে প্রায় দুই দিনে ১৫৯ ওভার ব্যাটিং করে ৫৩১ রান করে লঙ্কানরা, সেই উইকেটে ২০০ রানের আগেই অলআউট হয়ে গেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। জহুর আহমেদের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও ধুঁকে যাওয়া বাংলাদেশ ৬৮.৪ ওভারে ১৭৮ রানেই অলআউট হয়ে গেছে। প্রথম ইনিংসেই ৩৫৩ রানের বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছে তারা। বাংলাদেশের পাঁচজন দুই অঙ্কের রান করেন, সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ৫৪।
এ নিয়ে টানা পাঁচ ইনিংসে ২০০ রানের নিচেই অলআউট হলো লম্বা সময়েও টেস্টে সেভাবে উন্নতির ছাপ রাখতে না পারা বাংলাদেশ। এতে নিজেদের ২০ বছরের পুরনো স্মৃতিতে ফিরলো তারা। সর্বশেষ ২০০৪ সালে ঘরের মাটিতে টানা পাঁচ ইনিংসে ২০০ রানের নিচে অলআউট হয় বাংলাদেশ। বিদেশের মাটিতে যেমনই হোক, ঘরের মাঠে লড়াই করতে দেখা যায় বাংলাদেশকে। এবার সেই লড়াইটুকুও হাওয়া, কেবলই হতাশার গল্প লিখে যাচ্ছে তারা।
টেস্টে টানা পাঁচ ইনিংসে ২০০ রানে অলআউট হওয়াটা বাংলাদেশের জন্য তেমন অস্বস্তির রেকর্ড হওয়ার কথা নয়। কারণ, ২০০১-২০০২ সালে দেশে-বিদেশে মিলিয়ে টানা ১১ ইনিংসে ২০০ রানের আগে অলআউট হয় তারা। অবশ্য, এতো দূরে না গেলেও চলবে; ২০১৮ সালেই এরচেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয় বাংলাদেশের, টানা ৮ ইনিংসে ২০০ ছাড়াতে ব্যর্থ হয় দলটি।
শুরুটা ভালোই ছিল বাংলাদেশের, ১ উইকেটে ৫৫ রান তুলে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করে স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় দিনের শুরুটাও মন্দ ছিল না, আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান জাকির হাসান ও তাইজুল ইসলাম আরও কিছুটা পথ পাড়ি দেন। ৫৪ রান করা জাকির আউট হতেই শুরু হয় আসা-যাওয়ার মিছিল। লঙ্কান পেসারদের বলে রীতিমতো দিশেহারা হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা, দেখে মনে হয় তাদের ডেলিভারি অপ্রতিরোধ্য।
আগের দিন ২১ রান করে আউট হন মাহমুদুল হাসান জয়। এদিন হাফ সেঞ্চুরি থামেন জাকির। এরপর কেবলই ভাঙনের সুর বেজে গেছে। এর মাঝে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিলেন মুমিনুল হক ও নাইট ওয়াচম্যান তাইজুল। ৮৪ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলার পথে বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ৪ হাজার রান পূর্ণ করেন মুমিনুল। তাইজুল ৬১ বলে ২২ ও সাকিব আল হাসান ১৫ রান করেন।
সিলেট টেস্টে চরম দৃষ্টিকটুভাবে আউট হওয়া লিটন কুমার দাস আজও বাজে বলে আউট হন, স্লিপে ক্যাচ দেওয়া ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৪ রান করেন। ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে যাওয়া শান্ত ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে থামেন। আগের দুই ইনিংসে ৫ ও ৬ রান করা বাংলাদেশ অধিনায়ক আজ ১ রান করেন। শাহাদাত হোসেন দিপু ৮ ও মেহেদী হাসান মিরাজ ৭ রান করেন। শ্রীলঙ্কার আসিথা ফার্নান্দো ৪টি উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট পান বিশ্ব ফার্নান্দো, লাহিরু কুমারা ও প্রবাথ জয়সুরিয়া।