প্রতি তলায় রেস্তোরাঁ, খিলগাঁওয়ে সাততলা ভবন সিলগালা করল ঢাকা দক্ষিণ
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে আবাসিক ভবনে রেস্তোরাঁ করায় একটি সাততলা ভবন সিলগালা করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ভ্রাম্যমাণ আদালত আজ মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকালে খিলগাঁওয়ে অভিযান শুরু করেন। এসময় ভবনটি সিলগালা করা হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম এই আদালত পরিচালনা করেন।
অভিযানের শুরুতে খিলগাঁওয়ের শহীদ বাকী সড়কের সি ব্লকের ৫৬৬/এ ভবনের দ্বিতীয় তলায় শর্মা কিং রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে এ সময় রেস্তোরাঁর মালিক বা ব্যবস্থাপক ছিলেন না। তাদের মোবাইলে কল দিয়েও পাওয়া যায়নি। এছাড়া রেস্তোরাঁর কর্মীরাও কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় এই রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে একই ভবনের তৃতীয় তলায় পাস্তা ক্লাব নামে আরেকটি রেস্তোরাঁয় ঢোকেন আদালতের অভিযানে অংশগ্রহণকারীরা। এই রেস্তোরাঁয়ও মালিককে পাননি ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ভবনের সামনে অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন ২০০৩ অনুযায়ী 'এই ভবনটি অগ্নিনিরাপত্তার ক্ষেত্রে অত্যাধিক ঝুঁকিপূর্ণ' লেখা একটি ব্যানার টানিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধিরা। পরে সাততলা এ ভবনটি সিলগালা করে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সরেজমিনে এই ভবনের প্রতিটি তলায় একটি করে রেস্তোরাঁ দেখা গেছে। নিচতলায় ছিল একটি গার্মেন্টসের শো-রুম। আর পার্কিংয়ের জায়গায় একটি রেস্তোরাঁর নির্মাণকাজ চলতে দেখা গেছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, 'অগ্নিঝুঁকি থাকায় ভবনটি আপাতত বন্ধ থাকবে। ভবন মালিক এবং সংশ্লিষ্ট রেস্তোরাঁর মালিকরা সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারলে– পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
সোমবার সকাল থেকে খিঁলগাওয়ের রেস্তোরাঁগুলায় অভিযান চালান রাজউকের জোন ইন্সপেক্টর বা পরিদর্শকরা। এসময় ৩৬৮/বি খিলগাঁও, স্কাই ভিউ নাজমা টাওয়ারের নয়টি রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে সটকে পরে রেস্তোরাঁগুলোর মালিকেরা।
এছাড়া আল-আকসা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, ইজা রেস্টুরেন্ট, পপাইজ কফি এন্ড ফাস্টফুড, কোকো ক্যাফে, বিএফসি, হারফি রেস্টুরেন্টসহ আরও কয়েকটিতে অভিযান চালায় রাজউক। এসময় রেস্তোরাঁ নির্মাণের অনুমতিপত্র, ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিসের অনুমতিপত্র দেখাতে না পারায়– প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধে মৌখিক নির্দেশনা দেয় রাজউক।
রাজউকের অঞ্চল-৬ এর পরিদর্শক রকিব উদ্দিন বলেন, 'আমরা অভিযানের সময় অধিকাংশ ভবনেরই নকশাসহ বাকি কাগজপত্র দেখতে পারি নাই। কিছু ভবনের নকশায় রেস্টুরেন্টের অনুমতি থাকলেও তাদের কিচেনের অনুমতি ছিল না। ফলে তাদের মৌখিকভাবে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করতে বলেছি।'
এদিকে মঙ্গলবার সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্টেটের অভিযানের আগাম খবর পেয়ে খিলগাঁও এলাকার অধিকাংশ রেস্তোরাঁ মালিকই এদিন সকাল থেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তারা জানান, খিলগাঁওয়ে গড়ে ৯০ শতাংশ রেস্তোরাঁ আবাসিক বাসাবাড়িতে গড়ে উঠেছে। ফলে এলাকাটি আবাসিক এলাকার বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে, যা রাজউকের আইন অনুযায়ী অবৈধ।
সি-ব্লকের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের পর সোমবার ধানমন্ডির বিভিন্ন এলাকার চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালানো হবে, ব্যবসায়ীরা তা আগে থেকেই জানতে পেরেছেন। ফলে সকাল থেকে তেমন কোনো রেস্তোরাঁই খোলেনি। অথচ এই শহীদ বাকী সড়কে শতাধিক রেস্তোরাঁ রয়েছে।
এদিন এই সড়কের অন্যান্য রেস্তোরাঁও বন্ধ দেখা যায়। এসব বন্ধ রেস্তোরাঁ যেসব ভবনে অবস্থিত– সেগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।