ছুটির কারণে পণ্য ডেলিভারি নিতে ধীরগতি, বিঘ্নিত চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম
ঈদ সামনে শুক্র-শনিসহ সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে আমদানিকারকরা পণ্যের ডেলিভারি নেওয়া কমিয়ে দেওয়ায় কন্টেইনার সংখ্যা বেড়েই চলেছে চট্টগ্রাম বন্দরে।
বন্দরের ইয়ার্ডে এখন জমে আছে ২৬,০০০ টিইইউ ভোগ্য পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন আমদানি পণ্যের এফসিএল (ফুল কন্টেইনার লোড) কন্টেইনার।
শুধু এফসিএল কন্টেইনারই নয়, এলসিএল– (লেস দ্যান কন্টেইনার লোড) কন্টেইনারে (যে কন্টেইনারে একাধিক আমদানিকারকের পণ্য থাকে) আসা আমদানি পণ্যও জমে আছে বন্দরের বিভিন্ন শেডে। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার জট এবং শেডে পণ্যের স্তুপ জমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্দরের কার্যক্রমের গতিশীলতা স্বাভাবিক রাখা এবং ভোগ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সাপ্লাই চেইন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এসব পণ্যের ডেলিভারি হওয়া জরুরি। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতেও ইয়ার্ড এবং সিএফএস (কন্টেইনার ফ্রেইট স্টেশন) শেডে রক্ষিত পণ্য চালানের ডেলিভারি বাড়াতে হবে। ডেলিভারি কমে গেলে বন্দরে কন্টেইনার জট সৃষ্টি হতে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বন্দরে কন্টেইনার রাখার সক্ষমতা ৫৩,৫১৮ টিইইউ। গত ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার রয়েছে ২৯,০৫৬ টিইইউ।
এভাবে কন্টেইনার জমতে থাকলে তা বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক টিবিএসকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম গতিশীল রাখতে ডেলিভারি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার কোনো বিকল্প নেই। জাহাজ থেকে ইয়ার্ডে কন্টেইনার নামানোর পর সেগুলো দ্রুত ডেলিভারি না নিলে জট তৈরি হবে।
"আমরা সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের প্রতি আহবান জানাই সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও যাতে পণ্য ডেলিভারি নেওয়া হয়," যোগ করেন তিনি।
এদিকে আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, ঈদে কারখানা, গুদাম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিয়ে সেগুলো গুদামজাত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া, ঈদকে কেন্দ্র করে ট্রাক এবং পণ্যবাহী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকে। অবশ্য রপ্তানি পণ্যবাহী যান চালাচল নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকলেও আমদানি পণ্য পরিবহনে পথে পথে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
ফলে ঈদের ছুটির সময়ে বন্দরের কার্যক্রম চালু থাকলেও বন্দর থেকে ডেলিভারি নেওয়া নেমে আসে প্রায় শূন্যের কোটায়।
কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সহযোগিতার প্রয়োজন
এদিকে সরকারি ছুটির দিনগুলোতে কন্টেইনার ডেলিভারি নিতে গত ৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম চেম্বার, বিজিএমইএ, সিএন্ডএফ এজেন্টসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোকে চিঠি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে এবং বিভিন্ন বন্ধের দিন সমূহে স্বাভাবিক চাহিদার চেয়ে পণ্যের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। ৪ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে ২৬,০০০ টিইইউএস এফসিএল কন্টেইনার এবং বিভিন্ন সিএফএস শেড সমূহে বিপুল পরিমাণ এলসিএল পণ্য স্থিত রয়েছে।
ভোগ্য পণ্য, পোশাক শিল্পের কাঁচামাল, বিপদজনক পণ্য ও ফ্রজেন ফুডের এফসিএল কন্টেইনার এবং কার্গো সপ্তাহের অন্যান্য দিনের মতো শুক্র-শনি-রবি এবং সরকারি বন্ধের দিনগুলোতে পণ্য খালাস স্বাভাবিক থাকা আবশ্যক। ঈদুল ফিতরের আগে এবং পরে বন্ধের দিনগুলোতে আমদানীকারদের ওয়্যাররহাউস, ফ্যাক্টরি খোলা রেখে ডেলিভারি নেওয়া হলে চট্টগ্রাম বন্দরে অধিক পরিমাণে জাহাজ হ্যান্ডলিং ও কন্টেইনার এবং পণ্য খালাস সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর পরিচালক মোহাম্মদ শামসুল আজম টিবিএসকে বলেন, ঈদের স্বাভাবিক ছুটির পরও যেহেতু কারখানার উৎপাদন শুরু হতে আরেও কয়েকদিন সময় লাগে, তাই আমদানি পণ্য ঈদের আগেই ডেলিভারি নেয় গার্মেন্টস মালিকরা।
শুধুমাত্র রপ্তানি পণ্যের চালান জাহাজীকরণের জন্য ডিপোতে পাঠানো হয়। জাহাজের শিডিউল অনুযায়ী সেগুলো ডিপো থেকে বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজ বলেন, দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে বন্দরের কার্যক্রমকে গতিশীল রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বন্দর ইয়ার্ডে দিনের পর দিন পণ্য ফেলে রাখলে দেশের ক্ষতির পাশাপাশি বন্দরের কাজের স্বাভাবিক গতিও বিঘ্নিত হবে।
"আমরা আশা করবো, সকল ব্যবসায়ী তাদের আমদানিকৃত সকল পণ্য দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেলিভারি নেবেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ থাকবে ব্যবসায়ীদের প্রতি যেন সহনশীল থাকে," যোগ করেন তিনি।