কোটা বাতিলে ঢাবি শিক্ষার্থীদের শাহবাগ অবরোধ, ‘প্রত্যয়’ বাতিলে শিক্ষকদের আন্দোলন অব্যাহত
সর্বজনীন পেনশন স্কিম 'প্রত্যয়' বাতিলসহ তিন দাবিতে শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি এবং ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালসহ ৪ দাবিতে চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে এক ঘণ্টা অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ঢাবি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে হাতে প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে একটি মিছিল শুরু করে নীলক্ষেত ও নিউ এলিফ্যান্ট রোড হয়ে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ করে এবং পরবর্তীতে সড়ক অবরোধ করে।
আন্দোলনকারীরা আজ আরও কর্মসূচী নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আব্দুল কাদির বলেন, "আমাদের আন্দোলন চলবে ৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে শুনানি না হওয়া পর্যন্ত। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।"
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী আবু মুসা বলেন, "সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্য স্বাধীনতা পূর্বের শোষণ-নিপীড়নের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এভাবে একটি রাষ্ট্রকে প্রতিভা থেকে বঞ্চিত করা উন্নয়ন ও সুশাসনের পথে বড় বাধা তৈরি করবে।"
শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি, সরকারি চাকরিতে (নবম-১৩তম শ্রেণি) মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের সিদ্ধান্ত পুনর্বহাল করা। দ্বিতীয় দাবি, কোটা পদ্ধতি সংস্কারে কমিটি গঠন।
একইভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়।
গতকাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা আরিচা মহাসড়ক প্রায় আধা ঘন্টা অবরোধ করে রাখেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন।
'প্রত্যয়' প্রকল্প প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা শিক্ষকদের
অন্যদিকে সোমবার থেকে শুরু হওয়া 'প্রত্যয়' প্রকল্প প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন এবং সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। প্রকল্প প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তারা নিজেদের দাবিতে অবিচল থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ৩টি দাবির মধ্যে রয়েছে— অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত 'বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন' প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপারগ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভূক্তি ও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তন করা।
'সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যয় এর শুভযাত্রা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ের স্পষ্টীকরণ'শীর্ষক পেনশন কর্তৃপক্ষের এক বার্তায় বলা হয় গত ৩০ জুনের আগে চাকরিতে যোগদানকারী শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের নতুন স্কিমে যুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই।
এতে আরো বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৬৫ বছর বয়সে অবসর নেবেন এবং সেই বয়স থেকে আজীবন পেনশন পাবেন। যদিও ইউনিভার্সাল পেনশন ম্যানেজমেন্ট আইন বলে, পেনশন সুবিধা ৬০ বছর বয়সে শুরু হয়।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, "শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৬৫ নির্ধারন করা হলেও প্রত্যয় স্কিমে প্রাথমিকভাবে এটি উল্লেখ করা হয়নি। আমরা প্রতিবাদ শুরু করার পর থেকে আরও তথ্য যোগ করা হয়েছে। আমরা বৈষম্যমূলক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি।"
তিনি আরো বলেন, "প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার করে আগামী বছর 'সেবক' নামে স্কিম চালু হলে এবং সেখানে সবার জন্য সুযোগ-সুবিধা রাখা হলে আমরা সেখানে যাব। কিন্তু প্রত্যয় স্কিম বাতিল করতে হবে।"
তিনি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, "শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়টি পুরোপুরি সরকারের পলিসিগত ব্যাপার। এখানে কার্যত ইউজিসির কিছুই করার নেই। এরপরেও এই অচলাবস্থা নিরসনে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগযোগ রাখছি।"
এদিকে একই দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা গতকাল দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল বাতেন চৌধুরী তাদের সংকল্পের ওপর জোর দিয়ে বলেন, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
গত ১৩ মার্চ স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা ও তাদের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রত্যয় স্কিম যুক্ত করে সরকার জানায়, এসব প্রতিষ্ঠানে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে যারা যোগদান করবেন, তারা সবাই বাধ্যতামূলকভাবে এই স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন। তবে ২০২৪ সালের ১ জুলাইয়ের আগে এসব প্রতিষ্ঠানে যারা যোগদান করেছেন, তারা আগের মতোই পেনশন সুবিধা পাবেন।