আশুলিয়ায় শ্রমিক-স্থানীয়দের সংঘর্ষে আহত অন্তত ৩০, কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা
আশুলিয়ায় চলমান অস্থিরতার মধ্যেই আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে স্থানীয় একটি গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
নারী ও শিশু হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, তারা অন্তত ২০ থেকে ৩০ জনকে আহত অবস্থায় পেয়েছেন। এদের বেশিরভাগই হাতে ও মাথায় আঘাত কিংবা ফ্র্যাকচারের মতো আঘাত নিয়ে এসেছেন।
আজ (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থিত কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেন। শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে সকাল থেকে পর্যায়ক্রমে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের জিরাবো এলাকা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অবস্থিত বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে ছুটি ঘোষণা করা কারখানার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানা যায়নি।
স্থানীয় ও আহত কয়েকজন শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকালে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার কয়েকটি কারখানা ও তার আশেপাশে স্থানীয় ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি গ্রুপ লাঠিসোঁটা হাতে অবস্থান নেয়। পরে শ্রমিকরা বেরিয়ে এলে গ্রুপটি আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হন।
তবে নরসিংহপুর এলাকার স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা দাবি করেন, সকালে শ্রমিকদের সাথে সংঘর্ষ হওয়া গ্রুপটিতে যারা ছিলেন তারা স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
অনন্ত গার্মেন্টস এর একজন আহত শ্রমিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সকালে শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করলেও কাজ না করে বিভিন্ন দাবি আদায়ে কাজ বন্ধ করে বসে থাকে। এসময় মালিকপক্ষ শ্রমিকদের কিছু দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও শ্রমিকরা তা না মেনে সকাল পৌনে ১০টার দিকে কারখানা থেকে বেরিয়ে যায়।"
কারখানা থেকে বেরিয়ে শ্রমিকরা বাসায় ফেরার পথে অতর্কিতভাবে ৫০ থেকে ৬০ জন ব্যক্তি লাঠিসোঁটা হাতে হামলা চালালে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হন বলে জানান তিনি।
নরসিংহপুর এলাকার নিউজ এইজ কারখানার একজন শ্রমিক জানান, শ্রমিকরা কারখানাটিতে সকালে প্রবেশ করলেও ভিতরে ঢোকার কিছুক্ষণ পরই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কারখানায় কাজ করবে না জানিয়ে বেরিয়ে যায়। পরে মালিকপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করে।
এছাড়াও বেলা ১২টার দিকে শারমীন গ্রুপের শ্রমিকদের মারধরে রাশেদুল নামে একজন নিরাপত্তা কর্মী আহত হয়েছেন। তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
কারখানাটির কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী জানান, বেলা ১২টার পর কারখানার শ্রমিকরা বেরিয়ে যাওয়ার সময় নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর করে। এতে রাশেদুল গুরুতর আহত হন।
এর আগে সকালে শ্রমিকদের ছোড়া ইট পাটকেলে শিল্প পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্য আহত রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
অন্যদিকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির তৈরির অভিযোগে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকা থেকে স্থানীয় জনতা দুই জনকে আটক করে শিল্প পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে গণমাধ্যমকে জানান শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম।
তবে দুপুরে শ্রমিকদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষ, সংঘর্ষে আহত এবং কতগুলো কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে মুঠোফোনে তা জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা ব্যস্ত আছেন জানিয়ে পরে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন।