শ্রমিক অসন্তোষ: উন্নতির চিহ্ন নেই, আজও আশুলিয়ায় ২১৯ কারখানা বন্ধ
চলমান শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আজও আশুলিয়ায় ২১৯টি কারখানা বন্ধ রয়েছে।
কারখানা বন্ধ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম।
পুলিশ সুপার বলেন, "আগে থেকেই কিছু কারখানায় অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। সেসব কারখানার শ্রমিকরা আজ কাজে ফেরেনি। এছাড়া আজ সকালেও বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশের পর কর্মবিরতিসহ কারখানা থেকে বের হয়ে গেলে সব মিলিয়ে শিল্পাঞ্চলের ২১৯টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "এরমধ্যে শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৮৬টি কারখানা। আর বাকী ১৩৩টি কারখানায় আজকের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।"
বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোন প্রতিষ্ঠানের কোন শাখা বা বিভাগে বেআইনি ধর্মঘটের কারণে মালিক উক্ত শাখা বা প্রতিষ্ঠান আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকরা কোনো মজুরি পাবেন না।
তবে টিবিএসের সাথে আলাপকালে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, "আরএমজি কারখানার চলমান শ্রমিকদের বিক্ষোভের মধ্যে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরে তাদের প্রায় ১১৫টি সদস্য কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।"
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর মধ্যে ৭৫টি শ্রম বিধি অনুসরণ করে বন্ধ করা হয়েছে অর্থাৎ শ্রমিকদের বিনা বেতনে ছুটি দেওয়া হয়েছে এবং ৪৪টি কারখানা সবেতন ছুটি দিয়ে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, আগে থেকেই কিছু কারখানায় অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। সেসব কারখানার শ্রমিকরা আজ কাজে ফিরেনি। এছাড়া আজ সকালেও বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশের পর কর্মবিরতিসহ কারখানা থেকে বের হয়ে গেলে বেশ কিছু কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।
তবে শিল্পাঞ্চলের অন্যান্য কারখানাগুলোতে কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সকাল থেকে শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়াও শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তায় বিভিন্ন কারখানার সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করার পাশাপাশি যৌথ বাহিনীর টহল অব্যাহত আছে বলেও জানিয়েছেন শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার।
এদিকে শিল্প পুলিশ ও ইন্ডাস্ট্রি সূত্র জানায়, সকালে আজ আশুলিয়ায় বেশ কিছু কারখানা খোলা রাখা হলেও এর মধ্যে বেশ কিছু কারখানায় শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে কাজ না করে কারখানা থেকে বেরিয়ে যায়। এর মধ্যে কাঠগড়া এলাকার রাতুল অ্যাপারেলস সহ বেশ কয়েকটি কারখানা রয়েছে।
চলমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে পরিবেশ আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে পোশাক খাতের একটি শিল্প গ্রুপের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "আমরা সহসাই পরিস্থিতির উন্নতির কোন লক্ষণ দেখছি না। পরিস্থিতি এমন থাকলে এই অসন্তোষ অন্যান্য জোনগুলোতেও ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।"
শিল্প সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র জানায়, শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, এগুলো তাৎক্ষণিকভাবে ভালো মনে হলেও এর বিপরীত দিকও রয়েছে। ইতোমধ্যে আশুলিয়া অঞ্চলের শ্রমিকদের জন্য, অর্জিত ছুটির টাকা শতভাগ পরিশোধ, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, টিফিন বিল বৃদ্ধি করার যেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, এটি কিন্তু এই অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।
সূত্র বলেন, "এটি সব এলাকার জন্যই প্রযোজ্য হয়ে গেছে। আপনি এখন যদি বলেন, এটি শুধু আশুলিয়ার জন্য তাহলে কাল অন্যান্য অঞ্চলের শ্রমিকরাও এর জন্য আন্দোলনে নামতে পারে।"
তবে শিল্প মালিকদের নো ওয়ার্ক নো পে'র সিদ্ধান্ত দু একদিনের মধ্যেই কিছুটা ফল দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আশুলিয়ার একাধিক শ্রমিক নেতা জানান, তারাও এখন পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতির কোন লক্ষণ দেখছেন না। বরং আজকের পরিবেশ গতকাল থেকেও খারাপ বলে মনে করছেন তারা।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু মনে করেন, সমস্যা সমাধানে যেসব এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ রয়েছে, সেখানেই একটি কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা উচিত।
তিনি বলেন, "সমস্যা সমাধানে কি আসলেই কার্যকর কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, কিংবা শ্রমিকদের মাঝে সঠিক বার্তাটি পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে?"
খায়রুল মামুন মিন্টু আরও বলেন, "শ্রমিকদের সাথে আলোচনার কোন বিকল্প নেই। যেখানেই সমস্যা আছে না কেন, সবই সমাধান সম্ভব যদি সঠিক ভাবে বিষয়টি সমাধান করা যায়।
এজন্য জরুরি ভিত্তিতে আঞ্চলিকভাবে কুইক রেসপন্স টিম গঠনের উপর জোর দেন তিনি।