মাজারে হামলাকারীদের শাস্তিসহ ৫ দাবিতে গণপ্রতিরোধ যাত্রা
দেশের মাজার ও দরবারগুলোতে হামলাকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ৫ দাবিতে 'গণপ্রতিরোধ যাত্রা' শীর্ষক বিক্ষোভ মিছিল করেছে নাগরিক সমাজের একাংশ। মিছিল শেষে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এসব দাবিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
আজ (মঙ্গলবার) বেলা ১২টায় হাইকোর্ট মাজার প্রাঙ্গণ থেকে মিছিলটি শুরু হয়। পরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে 'গণপ্রতিরোধ যাত্রা' শেষ হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, যেকোনো চিন্তা-মতাদর্শ নিয়ে সমাজের যে কারো সমালোচনা থাকতে পারে। কিন্তু শুধুমাত্র ভিন্ন চিন্তা-মত-পথের হওয়ার জন্য কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের উপর হামলা করা যায় না। মাজারগুলোতে ইসলামের যে বয়ানের চর্চা হয় সেই বয়ান কোনো গোষ্ঠী/সংগঠন/রাজনৈতিক দলের পছন্দ না হতেই পারে। কিংবা মাজার নিয়ে কারো অন্য কোনো সমালোচনা থাকতেই পারে।
এতে আরো বলা হয়, কারো বয়ান পছন্দ না হলেই কিংবা কারো চিন্তাধারা নিজেদের সাথে না মিললেই কিংবা কাউকে নিয়ে কোনো সমালোচনা থাকলেই যদি কোনো গোষ্ঠী মনে করে যে, তার উপর হামলা চালানো জায়েজ তাহলে বুঝতে হবে তারা পরিষ্কারভাবেই ফ্যাসিবাদকে অন্যরূপে, অন্য রঙে ফিরিয়ে আনতে চাইছে। তারা ধর্ম কিংবা নানান বাহানায় আসলে নিজেদের জুলুম-লুটপাটের রাজত্বই এদেশে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর একারণেই আমরা দ্ব্যার্থহীনভাবে বলতে চাই সারাদেশের মাজারে-দরবারে যেসব গোষ্ঠী যেকারণেই হামলা চালাক না কেন তার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা এখন খুবই জরুরি।
সরকারের সমালোচনা করে বলা হয়, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা এই অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত মাজার ও দরবারগুলোর সুরক্ষায় কোনো দৃশ্যমান কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কিন্তু আমরা সরকারকে প্রশ্ন করতে চাই, কেন এই ঘোষণা আসতে এত দেরি হল? কেন এতগুলো মাজার ভাঙ্গার জন্য অপেক্ষা করতে হল? যেখানে আমরা দেখতে পেলাম আগাম ঘোষণা দিয়ে বুলডোজার নিয়ে মাজারে হামলা চালানো হচ্ছে, মাজারের কবর থেকে দেহাবশেষ তুলে নিয়ে যাচ্ছে, আগুন দিচ্ছে, আগতদের পেটাচ্ছে, হতাহত করছে, সেই সময় সরকারের দিক থেকে আপাত নীরবতা কেন ছিল? এই নীরবতায় আমাদের উদ্বিগ্ন। আমরা অবিলম্বে মাজারে হামলার বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর হওয়ার ঘোষণার দৃশ্যমান বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
তাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে- মাজারকে মাজারের মতো থাকতে দিয়ে সরকারকে সকল মাজার ও দরবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ভেঙ্গে ফেলা প্রত্যেকটি মাজার সরকারের পক্ষ থেকে পুননির্মাণ করে দিতে হবে। মাজারের উপর হামলার কারণে যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকারকে নিতে হবে। এক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও সকল প্রকার মব জাস্টিস, মোরাল পুলিশিং, নারীবিদ্বেষী প্রচারণা বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে এবং যারা এগুলো করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ে আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দিতে হবে এবং এটা নিশ্চিত করতে হবে যে শুধুমাত্র ভিন্ন মতের হওয়ার কারণে কিংবা যেকোনো মাধ্যমে যেকোনোপ্রকার ভালো বা মন্দ কথা বা উক্তির জন্য কেউ কারো উপর হামলা করতে পারবে না। হামলা করলে সরকার তার বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
শনির আখড়া থেকে আগত সুরে শাহ দরবার শরীফের অনুসারী ফজল হক দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "হয়তো আমার দরবারে হামলা হয়নি। কিন্তু হামলার অপসংস্কৃতি তো তৈরি হয়েছে। যেটি আমার বিশ্বাস ও আচার ধর্ম পালনকে শঙ্কিত করেছে। যার কারণে আজকের এই প্রতিবাদ। অবিলম্বে এর বিচার করে দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
গণপ্রতিরোধ যাত্রায় অংশগ্রহণ করেন ফরহাদ মজহার, জোনায়েদ সাকী, অরুপ রাহী, সালাহ উদ্দীন শুভ্র, বীথি ঘোষ, অমল আকাশ, মাহতাব উদ্দীন আহমেদ, মোহাম্মদ রোমেলসহ বিভিন্ন মাজারের সক্রিয় খাদেম ও অনুসারীরা।