ওমিক্রনের সাথে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে কোভিড রোগীর চাপ
দেশে করোনা সংক্রমণের উর্ধ্বগতিতে হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে কোভিড রোগীর চাপ। গতকাল শনিবার রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে কোভিড ডেডিকেটেড জেনারেল বেডের প্রায় ৩৭% রোগী ভর্তি ছিল। একদিন আগে ভর্তি রোগীর হার ছিলো ৩৩%। এছাড়া শনিবার কয়েকটি হাসপাতালের আইসিইউ বেডও পরিপূর্ণ ছিলো। তবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে সেকেন্ড ওয়েভে হাসপাতালে গুরুতর রোগীর চাপ বেশি থাকলেও এবার কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক টিবিএসকে বলেন, "হাসপাতালে কোভিড রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। এখন প্রতিদিন অন্তত ৬০ জন কোভিড রোগী হাসপাতালে আসে, তাদের মধ্যে মৃদু উপসর্গের রোগীদের বাসায় পাঠানো হয়। এর মধ্যে প্রতিদিন ৩০-৪০ জন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।"
হাসপাতালে গুরুতর রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক।
"দুই সপ্তাহ আগেও আমাদের হাসপাতালের আইসিইউতে কোভিডে মৃত্যু হতো না, এখন প্রতিদিন কোভিড রোগী মারা যাচ্ছে। কিছুদিন আগে একটিও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ব্যবহারের প্রয়োজন হতো না, এখন ১২টি হাই ফ্লো চলছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে গুরুতর রোগী আসা শুরু হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহে এটি আরো বাড়বে।"
হাসপাতালে ডাক্তারদের মধ্যে কোভিড আক্রান্তের হার অনেক বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
কোভিড-১৯ ডাইনামিক ড্যাশবোর্ড ডেটা অনুসারে, শনিবার ঢাকা মেডিকেলে কোভিড রোগীদের জেনারেল বেড অকুপেন্সি রেট ছিল ৬৪% ও আইসিইউ বেড অকুপেন্সি রেট ছিল ৭৫%।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ২৪ জন। গত ১৫ জানুয়ারি থেকে প্রতিদিন ৩০০ এর বেশি রোগী সেবা নিতে আসছেন এ হাসপাতালে। ১০টি আইসিইউ বেডের একটিও খালি নেই।
রাজধানীর পুলিশ হাসপাতালে বাড়ছে কোভিড রোগীর সংখ্যা। বর্তমানে ৪৭০ বেডের কোভিড বেডে রোগী ভর্তি আছে ২৩১ জন রোগী, দুই সপ্তাহে আগে সেখানে ৪৪৮টি বেড খালি ছিল।
রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. মনোয়ার হাসানাত খান বলেন, "আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ফিল্ডে থাকে তাই তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার বাড়ছে। তবে এবার অধিকাংশ রোগী মৃদু উপসর্গযুক্ত তাই কো্ভিড পজিটিভ হলেও হাসপাতালে ভর্তির হার কম। গত দুই সপ্তাহের তুলনায় এখন হাসপাতালে ভর্তির হার কিছুটা বেড়েছে। তবে অধিকাংশ পুলিশ সদস্য ফুললি ভ্যাকসিনেটেড ও বুস্টার ডোজ দেয়ায় আইসিইউতে রোগীর চাপ কম।"
সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর কোভিড জেনারেল বেড ও আইসিইউ বেডে রোগীর চাপ বাড়ছে। এভারকেয়ার, ইউনাইটেড, স্কয়ার, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালসহ বেশকিছু প্রাইভেট হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। শনিবার এভারকেয়ার ও গ্রিন লাইফ হাসপাতালে কোন আইসিইউ বেড খালি ছিল না।
এদিকে গত শুক্রবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, "ঢাকা শহরের হাসপাতালগুলোতে এক-তৃতীয়াংশ বেড অকুপাইড হয়ে গেছে। রোগী এভাবে বাড়তে থাকলে দেখা যাবে ঢাকা শহরের হাসপাতালগুলোতে আর কোন বেড খালি নেই। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। ১১ দফা বিধিনিষেধ কার্যকর করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য প্রশাসনের সদস্যদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি।"
ঢাকার বাইরে লক্ষীপুর, সিলেট, চাঁদপুর ও চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগীর চাপ বাড়ছে। চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। তবে সংক্রমণ বাড়লেও ওমিক্রন মোকাবিলায় সরকারের দেয়া বিধিনিষেধ মানছে না মানুষ।
প্রশাসনের বিধিনিষেধ নিয়ে গত সপ্তাহ থেকে সচেতনতা শুরু হলেও শনিবার থেকে চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে থাকতে শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। জরিমানা আর মাস্ক বিতরণের মাধ্যমে সচেতন করতে চাইলেও বলতে গেলে কেউই মানছে না এই বিধিনিষেধ।
রেস্তরাঁগুলোতে টিকার সনদ দেখে খাবার পরিবেশনের কথা থাকলেও সেটা মানা হচ্ছে না এখনো। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত, আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্কসহ অন্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও একই অবস্থা। বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা কারোর যেন গরজ নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (জেনারেল) মাহমুদ উল্লাহ মারুফ বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে ১৫টি স্বেচ্ছাসেবী দল নগরের ব্যস্ত এলাকায় কাজ করবে। মাইকিংয়ের পাশাপাশি মানুষকে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করবে।
২০২০ সালের মার্চের পর থেকে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২৮,২০৯ জনের করোনায় প্রাণহানি হয়েছে; একই সময়ে সংক্রমিত হয়েছে মোট ১৬ লাখ ৭৪ হাজার ২৩০ জন।