চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করলেন 'গেম অব থ্রোনস'র লেখক
মার্কিন লেখক জর্জ আরআর মার্টিন এবং জন গ্রিশাম চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। লেখকদ্বয়ের দাবি, চ্যাটজিপিটি সিস্টেমকে প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে তাদের গ্রন্থস্বত্ব লঙ্ঘন করা হয়েছে। খবর বিবিসির।
ফ্যান্টাসি উপন্যাস সিরিজ 'এ সং অব আইস অ্যান্ড ফায়ার' লেখক হিসেবে বিশ্বজোড়া খ্যাতি পেয়েছেন মার্টিন। পরবর্তীতে তার এ উপন্যাস অবলম্বনে এইচবিও'র নির্মিত শো 'গেম অব থ্রোনস' বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে।
চ্যাটজিপিটি এবং অন্যান্য লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলো (এলএলএম) প্রায়ই অনলাইনে সহজলভ্য প্রচুর ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিজেদের প্রশিক্ষিত করে।
এ মামলায় দাবি করা হয়েছে যে, চ্যাটজিপিটিকে আরও স্মার্ট করে তুলতে লেখকদের অনুমতি ছাড়াই তাদের বই ব্যবহার করা হয়েছে।
ওপেনএআই জানিয়েছে, তারা লেখকদ্বয়ের গ্রন্থস্বত্বের প্রতি সম্মান জানায় এবং বিশ্বাস করে যে, 'এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা উপকৃত হবেন'।
অভিযোগপত্রে আরও যেসব বিশিষ্ট লেখকদের নাম ররয়েছে তারা হলেন- জোনাথন ফ্রানজেন, জোডি পিক্যু এবং জর্জ স্যান্ডারস।
অথরস গিল্ড এই মামলাটি নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে ফেডারেল আদালতে নিয়ে এসেছে। অথরস গিল্ড যুক্তরাষ্ট্রের একটি ট্রেড গ্রুপ যারা উক্ত লেখকদের হয়ে কাজ করেন।
মামলায় ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে 'বড় পরিসরে পরিকল্পিত চুরির' অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত জুলাইয়ে কমেডিয়ান সারাহ সিলভারম্যানও এক ধরনের আইনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং একই মাসে লেখক মার্গারেট অ্যাটউড ও ফিলিপ পুলম্যানের স্বাক্ষর করা একটি খোলা চিঠিতে এআই কোম্পানিগুলোকে লেখকদের বই তাদের নিজস্ব কাজের লাগানোয় ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছিল।
ওপেনএআইয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, "আমরা বিশ্বের অনেক ক্রিয়েটরদের সাথে ফলপ্রসু আলোচনা চালাচ্ছি, যাদের মধ্যে অথর গিল্ডও রয়েছে এবং আমরা এআই নিয়ে তাদের চিন্তা-উদ্বেগের কারণগুলো বুঝতে মিলেমিশে কাজ করছি। আমরা আশাবাদী যে আমরা একসঙ্গে কাজ করার জন্য পারস্পরিকভাবে কোনো না কোনো উপায় খুজে বের করতে পারবো।"
'মানুষের জায়গা নেবে' এআই
মামলায় বলা হয়েছে যে, এলএলএম বা লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলটিকে আরও স্মার্ট করে তুলতে লেখকদের অনুমতি ছাড়াই তাদের বই ব্যবহার করা হয়েছে এবং এর আংশিক কারণ এটি তাদেরকে যথাযথ সারসংক্ষেপ দিতে পেরেছিল।
মামলায় গোটা মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতেই এআই নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয় যে- এ ধরনের প্রযুক্তি 'মানুষের লেখা কন্টেন্টকে সরিয়ে দিচ্ছে'।
সিটি ইউনিভার্সিটির আইনের রিডার প্যাট্রিক গোল্ড বিবিসি নিউজকে বলেন, মামলা দায়েরকারী লেখকদের প্রতি তার সহানুভূতি থাকলেও তিনি মনে করেন, তাদের এ মামলায় জেতার সম্ভাবনা নেই, কারণ এর জন্য তাদেরকে প্রমাণ করতে হবে যে চ্যাটজিপিটি তাদের লেখা নকল করেছে।
হলিউডে চিত্রনাট্যকার-লেখকদের চলমান প্রতিবাদের দিকে ইঙ্গিত করে প্যাট্রিক বলেন, "তারা আসলে গ্রন্থস্বত্ব নিয়ে অতটা চিন্তিত নন, তাদের চিন্তার কারণ হচ্ছে এআই হয়তো তাদের কাজের সুযোগ কেড়ে নেবে।
"যখন আমরা এআই অটোমেশন এবং মানুষের কাজের জায়গা নেবে এআই- এমনটা বলছি, তখন গ্রন্থস্বত্ব এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। আমাদের যা করতে হবে তা হলো পার্লামেন্ট ও কংগ্রেসে যাওয়া এবং সেখানে গিয়ে এআই কিভাবে সৃজনশীল কলার (ক্রিয়েটিভ আর্ট) জায়গা নিতে যাচ্ছে তা বুঝিয়ে বলা; সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে আমাদের করণীয় কী তা নিয়ে কথা বলা", যোগ করেন প্যাট্রিক।
টেক্সট প্রম্পটের উপর ভিত্তি করে মিডিয়া সৃষ্টি করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা- তথাকথিত জেনারেটিভ এআইয়ের নির্মাতাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এর আগেও অনেকেই করেছেন; তারই সর্বশেষ সংযোজন হলো 'গেম অব থ্রোনস'-এর লেখকদের এই মামলা।
এর আগে গত জানুয়ারিতে 'টেক্সট-টু-ইমেজ' জেনারেটর স্ট্যাবিলিটি এআই এবং মিডজার্নি'র বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন ডিজিটাল শিল্পীরা। এই শিল্পীদের দাবি ছিল যে, উক্ত প্রযুক্তি দুটিকে অন্যান্য শিল্পীদের কাজের ওপর ভিত্তি করেই প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, মাইক্রোসফট এবং প্রোগ্রামিং সাইট গিটহাবের পাশাপাশি ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধেও রয়েছে আরেকটি মামলা- যেখানে একদল কম্পিউটিং বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন যে 'কোপাইলট' নামক একটি এআইকে প্রশিক্ষিত করতে তাদের অনুমতি ছাড়াই তাদের কোড ব্যবহার করা হয়েছে।
এসব মামলার কোনোটিরই এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।