৭০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া চিতা আবারও ভারতে দেখা যাবে!
দীর্ঘ ৭০ বছর পর আবারও ভারতের বনভূমিতে দেখা মিলবে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন প্রাণী চিতার! চলতি বছরের আগস্টে বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক চিতার আবাসস্থল নামিবিয়া থেকে প্রথম ধাপে ৮টি চিতা ভারতে আসার কথা রয়েছে। এর আগে ১৯৫২ সালে চিতাকে ভারত থেকে সরকারিভাবে বিলুপ্ত প্রাণী ঘোষণা করা হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন প্রাণী হিসেবে চিতার খ্যাতির সর্বজনবিদিত। একটি চিতা ঘণ্টায় প্রায় ৭০ মাইল বেগে দৌড়াতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার রেড লিস্ট অব থ্রেটেনড স্পেসিস- এর অধীনে চিতাকে একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীতে মাত্র ৭০০০ চিতা টিকে আছে।
২০২০ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দেশে চিতা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় এবং চিতার আবাসস্থল হিসেবে খুব সতর্কতার সাথে কিছু এলাকা বাছাই করা হবে বলে জানায়। এরপর গত দুই বছর যাবৎ চিতাগুলোকে নিরাপদে ভারতে আনার প্রক্রিয়া চলছিল।
প্রথম দফায় ভারতে আসা ৮টি চিতার জায়গা হবে মধ্যপ্রদেশের কুনো-পালপুর জাতীয় উদ্যানে। এই উদ্যানের পরিবেশ চিতার বসবাস উপযোগী বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে চিতাগুলোকে ভারতে আনার দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি পোস্টে ভারতের পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দর যাদব বলেন, "স্বাধীনতার গৌরবময় ৭৫ বছর পূর্ণ করার মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমরা স্থলজগতের শ্রেষ্ঠ প্রাণীটিকে ভারতে ফিরিয়ে আনবো। এটি আমাদের দেশের পরিবেশগত গতিশীলতাকে পুনরুজ্জীবিত করবে।"
বিদ্যুৎগতিসম্পন্ন প্রাণী হওয়া সত্ত্বেও শিকার, আবাসস্থল নষ্ট করা এবং খাদ্যের অভাবে চিতা ভারত থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এটিই একমাত্র বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণী যা ভারত থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
একসময় আরব উপদ্বীপ থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত এশিয়াটিক চিতার দেখা মিলতো। কিন্তু এখন শুধুমাত্র ইরানে এই প্রাণীটি টিকে আছে। ২০২২ সালে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানে মাত্র ১২টি চিতা টিকে আছে।
১৯৫০ এর দশক থেকে বহুবার চিতা ভারতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। সত্তরের দশকে ইরানে চিতার সংখ্যা ছিল ৩০০ এবং সেসময় ইরান থেকে ভারতে চিতা আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু দুই দেশের আলোচনা চলাকালীন ইরানের বিপ্লবে শাহকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা তাদের এবারের সাফল্যকে দীর্ঘমেয়াদে নিয়ে যাওয়া চিন্তা করছেন। ভারতের পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, "চিতাকে ভারতে ফিরিয়ে আনার মূল লক্ষ্য হলো দেশে চিতার মেটাপপুলেশন প্রতিষ্ঠা করা; যা একটি শীর্ষ শিকারি হিসেবে প্রাণীটিকে তার ভূমিকা পালন করতে দিবে।"
সূত্র: বিবিসি