নারী কর্মী নিষিদ্ধ করায় আফগানিস্তানে কার্যক্রম স্থগিত রাখছে পাঁচ বিদেশি এনজিও
আফগানিস্তানে তালেবানরা নারীদের এনজিওতে কাজ করা নিষিদ্ধ ঘোষণার পর শীর্ষ পাঁচটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থা দেশটিতে তাদের কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে, খবর বিবিসির।
কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) এবং সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, নারী কর্মীদের ছাড়া তাদের পক্ষে আফগানিস্তানে কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। দ্য ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটিও তাদের কাজ আপাতত বন্ধ রেখেছে। অন্যদিকে, ইসলামিক রিলিস্ফ জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তানে তাদের অধিকাংশ কার্যক্রম বন্ধ রাখবে।
আফগানিস্তানে তালেবান শাসকরা ক্রমশ নারীদের অধিকার দমন করে চলেছে। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারীদের নিষিদ্ধ করার কয়েকদিনের মাথায় এনজিওতে নারীদের কাজ করা নিষিদ্ধ করা হয়।
তালেবানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদেল রহমান হাবিব বলেছেন, বিদেশি সাহায্য সংস্থাগুলোতে যেসব নারীরা কাজ করেন তারা হিজাব না পরে ড্রেস কোড ভঙ্গ করেছেন। তালেবান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যেসব সংস্থা তাদের বিধিনিষেধ মানবে না, তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
এরপর থেকে বেসরকারি সাহায্য সংস্থাগুলো এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মুখ খুলেছে। এক যৌথ বিবৃতিতে কেয়ার, এনআরসি এবং সেভ দ্য চিলড্রেন জানায়, নারী কর্মীদের অবদান ছাড়া তাদের পক্ষে আফগানিস্তানের লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হতো না।
তাদের বিবৃতিতে আফগানিস্তানে নারী ও পুরুষ যেন সমানভাবে জীবনরক্ষাকারী বিভিন্ন কর্মসূচীতে কাজ করতে পারে, সেই আহ্বান জানানো হয়।
ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (আইআরসি) আফগানিস্তানজুড়ে ৩০০০ নারী কর্মী নিয়োগ দিয়েছিল। আলাদা বিবৃতিতে তারা জানায়, সংস্থাটির সকল পর্যায়ে নারী কর্মীদের অংশগ্রহণ ও অবদানের কারণেই তারা আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় সাহায্য পৌঁছে দিতে পেরেছেন।
ইসলামিক রিলিফ জানায়, 'আফগানিস্তানে জীবন রক্ষাকারী নয়, এমন কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিযতে হয়েছে তাদের'। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, দরিদ্র পরিবারগুলোকে জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রে সহায়তা করা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্প। তবে জীবন রক্ষাকারী স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ইসলামিক রিলিফ।
আফগান কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে নারী এনজিও কর্মীদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্যেও আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটি।
জাতিসংঘের একজন শীর্ষস্থানীয় সমন্বয়কারী রমিজ আলআকবারকভ বলেন, নারীদের কাজ করার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা যেন তুলে নেয়া হয় সেই লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জাতিসংঘ। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর জন্য তালেবানের এই সিদ্ধান্ত একটা রেড লাইনের মতো।
জাতিসংঘের এই কর্মকর্তার ভাষ্যে, তালেবান তাদের সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে জাতিসংঘ আফগানিস্তানে মানবিক সাহায্য দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে।
কিন্তু আলআকবারভের মতে, তালেবান তাদের সর্বশেশ নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে কী বোঝাতে চেয়েছে তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তার ভাষ্যে, তালেবানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতিসংঘকে বলেছেন যে তারা আফগানিস্তানে স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে এবং নারী কর্মীরা তাদের কর্মস্থলে রিপোর্ট করতে পারবে এবং সেবাদান চালিয়ে যেতে পারবে।
নরওয়েজিয়ান সংস্থা এনআরসি জানিয়েছে, আফগানিস্তানে তাদের সংস্থার ১৪০০ কর্মীর মধ্যে ৫০০ জনই নারী। তিনি জানান, আফগানিস্তানের ঐতিহ্য, পোশাকের রীতি মেনেই এরা সেখানে কাজ করছিল।
আফগানিস্তানের অনেক নারী এনজিও কর্মীই তাদের পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী। এর আগেও তারা বিবিসিকে নিষেধাজ্ঞার পর তাদের ভয় ও অসহায়ত্বের কথা বলেছিলেন।
একজন নারী এনজিও কর্মী জিজ্ঞাসা করেন, "আমি যদি চাকরিতে যেতে না পারি, তাহলে কে আমার পরিবারকে সাহায্য করবে?" আরেকজন কর্মী এই খবরকে 'বেদনাদায়ক' বলে অভিহিত করেন এবং জোর দিয়ে বলেন যে তিনি তালেবানের কঠোর ড্রেস কোড মেনেই কাজ করে আসছিলেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে তালেবানের এ নিষেধাজ্ঞা। ইউএস সেক্রেটারি অব স্টেট, অ্যান্টনি ব্লিংকেন সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা 'লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং জীবন রক্ষাকারী সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত করবে'।
গত বছর আফগানিস্তানের ক্ষমতা নিজেদের হাতে নেওয়ার পর থেকেই তালেবানরা নারী অধিকার সীমিত করছে; যদিও তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তাদের এবারের শাসনব্যবস্থা নব্বইয়ের দশকের চেয়ে নমনীয় হবে।