চৌর্যবৃত্তি হতে সাবধান! এআই’র লেখা শনাক্তের টুল আনল চ্যাটজিপিটির নির্মাতা
চ্যাটজিপিটি উন্মুক্ত হওয়ার পর অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, এটির বদৌলতে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় নকলের প্রতি আকৃষ্ট হবে বেশি। এবার সে অপবাদ ঘোচাতে কোনো লেখা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নাকি মানুষ লিখেছে, তা খুঁজে বের করার টুল তৈরি করেছে চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। খবর এল পাইস-এর।
এআই টেক্সট ক্লাসিফায়ার নামক এ টুলটি গত মঙ্গলবার চালু করে ওপেনএআই। তবে পাশাপাশি এটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, একই ধরনের আর সব টুলের মতো এ টুলটিও সম্পূর্ণভাবে ত্রুটিমুক্ত নয়।
ওপেনএআই'র অ্যালাইনমেন্ট দলের প্রধান জ্যান লেইক বলেন, 'এআইয়ের লেখা চিহ্নিত করার পদ্ধতি এখনো ত্রুটিপূর্ণ এবং এটি সময়ে সময়ে ভুল ফলাফল দিতে পারে।'
'এ কারণে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেবল নতুন এ টুলের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়,' বলেন লেইক।
২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর চ্যাটজিপিটি উন্মুক্ত হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী কিশোর ও কলেজ শিক্ষার্থীরা চ্যাটজিপিটি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে শুরু করে। এ টুলের অনেক সৃজনশীল ও উপকারী ব্যবহার থাকলেও পরীক্ষার ক্ষেত্রে এটির নেতিবাচক ব্যবহার নিয়ে একদল শিক্ষাবিদ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
নতুন বছরে বিদ্যালয় খোলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শহরের বিদ্যালয়গুলো শ্রেণীকক্ষে ও বিদ্যালয়ের ডিভাইসগুলোতে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দেয়।
সিয়াটল পাবলিক স্কুলস ডিস্ট্রিক্ট প্রথমে সব স্কুলের ডিভাইসে চ্যাটজিপিটি ব্লক করলেও পরে ডিসেম্বর মাসে শিক্ষাবিদদের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
তবে এ ডিস্ট্রিক্টের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের ক্রিটিক্যাল চিন্তা শেখাতে যাতে এ টুল ব্যবহার করতে পারেন, এবং শিক্ষার্থীরা যাতে এটিকে নিজেদের 'ব্যক্তিগত গৃহশিক্ষক' হিসেবে ব্যবহার করতে পারে — তার অনুমতি দেওয়ার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
'চ্যাটজিপিটি নিয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল — এটির কারণে নকলের হার এত বেড়ে যাবে যে, তার সঙ্গে আমরা তাল মিলিয়ে উঠতে পারব না। কিন্তু এখন ক্রমশই সবাই বুঝতে পারছেন যে, এটিই ভবিষ্যৎ এবং এটিকে ব্লক করে দেওয়া কোনো সমাধান নয়,' বলেন মার্কিন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ডেভিন পেজ।
ওপেনএআই এক ব্লগ পোস্টে জানিয়েছে, তাদের নতুন এ টুলটি প্লেজিয়ারিজম নির্ণয়ের পাশাপাশি এআই ব্যবহার করে ছড়ানো ডিসইনফর্মেশনও চিহ্নিত করতে পারবে।
লেখার বিভিন্ন প্যাসেজ যত বড় হবে, এআই টেক্সট ক্লাসিফায়ার এটিকে তত সহজে শনাক্ত করতে পারবে। কোনো লেখা এআই লিখেছে কিনা তা নির্ণয় করতে এ টুলটি 'খুব কম সম্ভাবনা, কম সম্ভাবনা, অনিশ্চিত, সম্ভাব্য, খুব সম্ভাব্য' ইত্যাদি ক্যাটাগরি ব্যবহার করে।
চ্যাটজিপিটিকে ডিজিটাল বই, সংবাদপত্র, অনলাইন লেখা ইত্যাদি বিশাল সংগ্রহের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও এটি বিভিন্ন সময়ে ভুল তথ্য সরবরাহ করেছে। একইভাবে টেক্সট ক্লাসিফায়ার টুলটিও কীভাবে এর ফলাফল নির্ণয় করে সে বিষয়ের ব্যাখ্যা দেওয়া সহজ নয়।
লেইক বলেন, 'আমরা মৌলিকভাবে জানি না এটি ফলাফল জানাতে কোন ধরনের প্যাটার্নের ওপর মনোযোগ দেয় বা অভ্যন্তরীণভাবে এটি কীভাবে কাজ করে।'
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ব্যবহারের ওপর আলোচনা শুরু করে। সার্বিক সমালোচনার মুখে ওপেনএআই জানায়, এটি শিক্ষকদের সহায়তা করার জন্য নতুন একটি গাইডলাইন তৈরিতে কয়েক সপ্তাহ ধরে কাজ করছে।