বেসামরিক মানুষের ওপর হামলা বন্ধে মিয়ানমারের জান্তাকে আহ্বান নিরাপত্তা পরিষদের ৯ সদস্যের
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের তিন স্থায়ী সদস্যসহ ৯টি সদস্য রাষ্ট্র মিয়ানমারের জান্তাকে বেসামরিক নাগরিক ও বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর হামলা বন্ধ করার এবং প্রেসিডেন্ট উ উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচিসহ সকল রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী ১৫ সদস্যের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্লোভেনিয়া, সুইজারল্যান্ড, ইকুয়েডর এবং মাল্টা মিয়ানমার বিষয়ে কাউন্সিলের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের আগে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এ যৌথ বিবৃতি জারি করে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার তিন বছর পূর্ণ হয়েছে উল্লেখ করে দেশগুলো বলেছে, মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ।
নিরাপত্তা পরিষদের ডাকা সভার দিনই দেশটির জান্তাবাহিনী কারেনি (কায়া) রাজ্যের দেমোসো টাউনশিপের একটি স্কুলে বিমান হামলা চালিয়ে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সি চার শিশুকে হত্যা এবং কমপক্ষে ১৫ শিশুকে আহত করে। জান্তাবাহিনী এ হামলার কথা অস্বীকার করেছে।
সদস্য দেশগুলো যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, 'আমরা মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্বিচারে অব্যাহত বিমান হামলাসহ বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করার চলমান সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাই।'
নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়া বিবৃতিতে অংশ নেওয়া থেকে বিরত ছিল।
'জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজল্যুশন ২৬৬৯-এ যেমনটা উল্লেখ করা হয়েছে — আমরা অবিলম্বে সব ধরনের সহিংসতার অবসান দাবি করছি এবং সংযম প্রদর্শন ও উত্তেজনা কমানোর আহ্বান করছি। আমরা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে অবিলম্বে প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট এবং স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচিসহ নির্বিচারে আটক সব বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি,' বিবৃতিতে বলে দেশগুলো।
জাতিসংঘে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত ইউ কিয়াও মো টুন সোমবার যৌথ বিবৃতি জারির জন্য সদস্য দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে রেজল্যুশন ২৬৬৯ অনুসরণ করার জন্য আরও পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান করেন।
গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'সামরিক জান্তা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রেজল্যুশন ২৬৬৯ গৃহীত হওয়ার পরও মিয়ানমারের জনগণের বিরুদ্ধে নৃশংসতা অব্যাহত রেখেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এখন পর্যন্ত সামরিক জান্তাকে এ রেজল্যুশন মেনে চলতে বাধ্য করার জন্য কিছু করতে পারেনি।'
তিনি সামরিক জান্তার সমরাস্ত্র, জেট জ্বালানি এবং অর্থের প্রবাহ বন্ধ করার আহ্বান জানান।
মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের তিন বছর পর দেশটির জনগণের বিরুদ্ধে সামরিক জান্তার দেশব্যাপী অভিযানের ফলে চার হাজার ৪০০ জনেরও বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত ও ২৫ হাজারের বেশি গ্রেপ্তার হন। এছাড়া এসব অভিযানে ৭৮ হাজারেরও বেশি বেসামরিক বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
দেশটিতে বর্তমানে এক কোটি ৮০ লাখেরও বেশি মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। দেশটির দুই কোটি ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।