যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, শীর্ষ ৩০-এ আছে বাংলাদেশও
ফ্রিল্যান্স কাজের জন্য শীর্ষ ৩০ গন্তব্য দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে মার্কিন সাময়িকী সিইওওয়ার্ল্ড। সাময়িকীটির তালিকা অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আর এ তালিকায় বাংলাদেশ আছে ২৯তম অবস্থানে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত তথ্য ও প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কোন দেশের কর্মীদের চাহিদা বেশি, তা নিয়ে গত ১৯ এপ্রিল এ তালিকা প্রকাশ করেছে সিইওওয়ার্ল্ড।
ফ্রিল্যান্স কাজের ধরন, ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা, আর্থিক অবস্থানসহ প্রযুক্তিগত সক্ষমতার বিষয় যোগ করে বিভিন্ন দেশকে স্কোর নম্বর দেওয়া হয়েছে। আর সেই তালিকায় ৯৭.৪ স্কোর নিয়ে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থাৎ বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
সিইওওয়ার্ল্ডের তালিকায় ৯৫.৭১ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। আর তৃতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাজ্য—দেশটির স্কোর ৯৪.৮১।
তালিকায় চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম অবস্থানে আছে ফিলিপাইন, ইউক্রেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পোল্যান্ড, ব্রাজিল ও পর্তুগাল।
দক্ষিণ এশিয়া থেকে শীর্ষ ৩০ দেশের মধ্যে পাকিস্তানের অবস্থান ২৮তম। পাকিস্তানের স্কোর ৪৮.৫৬ ও বাংলাদেশের স্কোর ৪৬.৯২।
সিইওওয়ার্ল্ডের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, দেশ দুটি বিভিন্ন শিল্পে বৃহৎ ও বৈচিত্র্যময় বাজার দিতে পাছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিল্পে বিপুলসংখ্যক দক্ষ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। ইংরেজিভাষায় দক্ষতা, পেশাদারত্ব ও দক্ষতার কারণে ফ্রিল্যান্সার নেওয়ার জন্য দেশটি দারুণ উৎস। যুক্তরাষ্ট্রের মোট কর্মশক্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি ফ্রিল্যান্স কাজে নিয়োজিত।
অন্যদিকে ভারতে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা যেমন বেশি, তেমনি তুলনামূলক সাশ্রয়ী পারিশ্রমিকে কাজ করেন তারা। এছাড়া ভারতের ফ্রিল্যান্সারদের ইংরেজি দক্ষতাও তাদের চাহিদার বড় কারণ।
বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল ফ্রিল্যান্সিং দেশ ভারত। আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ায় জন্য প্রায় ১৫ মিলিয়ন ভারতীয় ফ্রিল্যান্সার কাজ করেন।
সৃজনশীল ও পেশাদার সেবা খাতে যুক্তরাজ্যের অনেক মেধাবী ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। তাদের এসব দক্ষতা পশ্চিমা বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ব্যবসায়িক সহায়তা, লেখালেখি, অনুবাদ—এসব খাতের জন্য যুক্তরাজ্যে উচ্চ দক্ষতার ফ্রিল্যান্সার পাওয়া যায়।
ফিলিপাইনের ফ্রিল্যান্সারদের ইংরেজি দক্ষতাও খুব ভালো। দেশটির ফ্রিল্যান্সাররা ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স, কনটেন্ট তৈরি ও কাস্টমার সার্ভিস খাতে বিশেষভাবে দক্ষ। আয়ের প্রবৃদ্ধির দিক থেকে ফিলিপাইন এখন সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ফ্রিল্যান্সিং দেশ। এর অর্থ, নিয়োগকারীরা ফিলিপাইন থেকে ভালো পারিশ্রমিক দিয়ে ফ্রিল্যান্সারদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও অর্থনৈতিক সংকটে জর্জর হলেও আইটি, ডিজাইন ও লেখালেখি খাতে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার সরবরাহ অরে যাচ্ছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের ফ্রিল্যান্সাররা সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা দেওয়ায় নিয়োগদাতাদের কাছে তারা বড় আকর্ষণ।
বিশ্বের মোট কর্মশক্তির বড় একটি অংশই এখন ফ্রিল্যান্সার। সারা বিশ্বে এখন মোট ১৫৭ কোটি ফ্রিল্যান্সার কাজ করছেন। বৈশ্বিক ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মের বাজারের আঁকার ৩.৩৯ বিলিয়ন ডলার।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ফ্রিল্যান্সাররা গত বছর সালে বাড়তি ১০ কোটি ডলার আয় করেছেন। বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সাররা প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ২১ ডলার উপার্জন করেন।
বৈশ্বিক কর্মশক্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে ফ্রিল্যান্সিং। দূর থেকে কাজ করা যায় (রিমোট ওয়ার্কিং) বলে এর গুরুত্ব বেড়েছে। ফ্রিল্যান্সাররা দক্ষতা অনুযায়ী যেকোনো জায়গা থেকে কাজের সুযোগ দেন, কম খরচে সমস্যার সমাধান করে দেন, বিশেষ করে আইটি খাতে। ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে যে ধরনের জীবনযাপন করা যায়, তা-ও আকর্ষণীয়। এ পেশায় যুক্ত মানুষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে কাজের স্বাধীনতা।