কাউকে আর ‘৪২০’ বলা যাবে না! বিলুপ্ত হলো ভারতীয় দণ্ডবিধি, ৪২০ ধারাও
ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি), ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) এবং ভারতীয় প্রমাণ আইন — ব্রিটিশ আমলের তিনটি আইন যা ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ভিত্তি তৈরি করেছিল তা বিলুপ্ত করা হয়েছে। খবর হিন্দুস্তান টাইমস ও আনন্দবাজার-এর।
১৮৬০ সালে তৈরি হওয়া 'ইন্ডিয়ান পেনাল কোড' (ভারতীয় দণ্ডবিধি) এর পরিবর্তে সোমবার (১ জুলাই) থেকে কার্যকর হয়েছে 'ভারতীয় ন্যায় সংহিতা'। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন কার্যকর করেছে।
ভারতীয় সরকারের দাবী, নতুন আইনগুলো একটি আধুনিক বিচার ব্যবস্থা নিয়ে এসেছে যেখানে শুণ্য এফআইআর, পুলিশ অভিযোগের অনলাইন নিবন্ধন, এসএমএসের মতো ইলেকট্রনিক মোডের মাধ্যমে সমন এবং সমস্ত জঘন্য অপরাধের জন্য অপরাধের দৃশ্যের বাধ্যতামূলক ভিডিওগ্রাফির মতো বিধানগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
১৮৯৮ সালের 'ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্ট' (ফৌজদারি বিধি)-এর পরিবর্তে 'ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা' এবং ১৮৭২ সালের 'ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট' (ভারতীয় সাক্ষ্য আইন)-এর বদলে 'ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম' ফৌজদারি আইন কার্যকর হয়েছে সোমবার থেকে।
ফৌজদারি আইনে পরিবর্তন আনা জন্য পরিবর্তন এসেছে ভারতে প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা ৪২০ ধারায়। সেই ৪২০ ধারা এখন ৩১৮ ধারা। প্রতারণার অভিযোগে দায়ের হওয়া ৪২০ ধারা ভারতীয় দণ্ডবিধিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভারতের সংস্কৃতি, ভাষাতেও ছাপ ফেলেছে এই '৪২০'।
ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশে শাসন শুরু করার পর ১৮৬০ সালে তৈরি করেছিল ভারতীয় দণ্ডবিধি। প্রতারণা ঠেকাতে করা হয়েছিল ৪২০ ধারা। এ বার সেই ধারা বিলুপ্ত করা হয়েছে।
২০২৩ রাজ্যসভায় তিন ফৌজদারি সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্কের সময় প্রবীণ আইনজীবী ও সাংসদ মহেশ জেঠমালানি বলেছিলেন, ''৪২ বছর ধরে আইনের জগতে রয়েছি। কিছু পুরনো আইন অবশ্যই বাতিল করা উচিত। তার মধ্যে কিছু বিষয় আমরা 'মিস' করব। ৪২০ ধারা আমাদের মাথায় ছাপা হয়ে রয়েছে।''
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (পূর্বের টুইটার) ৪২০ ধারা বাতিল হওয়ার এক ব্যক্তি লিখেছেন, ''এ বার কি তা হলে প্রবাদেরও বদল হবে!''
ভারতীয়দের প্রবাদে, সিনেমায়, গল্পে কিংবা দৈনন্দিন জীবনে প্রতারণার সাথে ৪২০ যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। প্রচারের মঞ্চে রাজনীতিকেরা প্রায়ই বিরোধীদের বলে থাকেন, 'চারশো বিশ'। হাটে-বাজারে লোকজন অনায়াসে বলে থাকে 'চারশো বিশ'। প্রতারককে শুধু ভারতেই নয়, এ দেশেও ৪২০ বলে ডাকা হয় অনেকসময়।
পাকিস্তানের দণ্ডবিধিতেও 'প্রতারণা এবং অসততা'র অভিযোগে ৪২০ ধারাতেই মামলা করা হয়ে থাকে।