ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জেডির স্ত্রী কে এই উশা ভ্যান্স?
ট্রাম্পের রানিং মেট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন জেডি ভ্যান্স। ইতোমধ্যেই ওহাইও রাজ্যের এই সিনেটরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের প্রশংসা করেছেন বহু সমালোচক। খবর বিবিসির।
এদিকে আগে জেডি জানান, তিনি তার স্ত্রী উশার আকর্ষণীয় কর্মজীবনের কারনে বেশ সম্মানিত বোধ করেন। যদিও তাকে রাজনৈতিক পরিসরে খুব একটা দেখা যায় না। তবে জেডির রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে উশা বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন।
গত মাসে ফক্স নিউজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উশা বলেন, "আমি জেডির ওপর আস্থা রাখি। আমি ওকে সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসি। তাই আমাদের জীবনে যা ঘটবে তা একসাথে পাড়ি দেব।"
নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্যমতে, জেডি ও উশার পরিচয় ২০১৩ সালে; ইয়েল ল স্কুলে পড়ার সময়। মূলত 'সোশ্যাল ডিকলাইন ইন হোয়াইট আমেরিকা' টপিকের এক আলোচনায় তারা একসাথে যুক্ত হয়েছিলেন।
৩৯ বছর বয়সি জেডি জানান, ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে একসাথে পড়ার সময় তিনি উশাকে নিজের অনুপ্রেরণা হিসেবে মনে করতেন।
উশা ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে ইতিহাসে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে গেটস স্কলার হিসেবে আধুনিক ইতিহাসের ওপর এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন।
জেডি ও উশা ২০১৪ সালে বিয়ে করেন। তাদের দুই ছেলে (ইওয়ান, ভিভেক) আর এক কন্যা সন্তান (মিরাবেল) রয়েছে।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত উশা ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সেখানে তার শৈশব কাটিয়েছেন।
মিসেস ভ্যান্স কলম্বিয়ার ডিস্ট্রিক্ট অফ আপিল আদালতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ব্রেট কাভানাফের সহযোগী ছিলেন। এরপর তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের হয়েও কাজ করেন।
নানা সাক্ষাৎকারে স্ত্রী উশার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন জেডি। তিনি বলেন, "আমার চেয়ে আমার স্ত্রী জীবনে বেশি অর্জন করেছেন। আমি এটি নিয়ে একটু বেশিই গর্বিত। মানুষ হয়তো জানে না উশা কতটা মেধাবী। ও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হাজার পৃষ্ঠার বই পড়ে ফেলতে পারে।"
জেডি জানান, উশা তার কাঁধে হাত দিয়ে শক্তি যোগানোর মতো এক শক্তিশালী নারী ব্যক্তিত্ব। যে কি-না তাকে সবসময় পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে জেডিকে বেশ কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। সেক্ষেত্রে এই সময়টাতে হয়তো আগের মতোই মেন্টর হিসেবেই কাজ করবেন স্ত্রী উশা।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়ার পরই পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ওহাইও অঙ্গরাজ্যের সিনেটর জেডি ভ্যান্সের নাম ঘোষণা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
অথচ ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর সমালোচকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জেডি ভ্যান্স। এমনকি প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে 'ইডিয়ট' বলা ভ্যান্স রিপাবলিকানদের মনোনীত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে তুলনা করে বসেছিলেন হিটলারের সাথে।
কিন্তু গতকাল (সোমবার) যখন জেডি ভ্যান্সকে আসন্ন নির্বাচনে নিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প, ভ্যান্স ততদিনে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সমর্থকদের মধ্যে একজন। ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক থেকে সমর্থক হিসেবে ভ্যান্স-এর রূপান্তর তাকে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিতে পরিণত করেছে।
তবে অনেকেই দাবি করেন, জেডির রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি— যেটি বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং অর্থনৈতিক পপুলিজমকে একত্রিত করে, সেটি ট্রাম্পের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মিলে যায় এবং দুজনকেই প্রথাগত রিপাবলিকানদের থেকে আলাদা করে তুলেছে যেহেতু তারা বিদেশি নীতি এবং মুক্ত বাজারের আদর্শকে অগ্রাধিকার দেয়।
জেডির রাজনৈতিক পথচলা শুরুতে ততটা মসৃণ না হলেও, সামরিক সেবা প্রদান, মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় ভেঞ্চার ক্যাপিটালিজমের ক্যারিয়ারের মাধ্যমে তিনি সাফল্যে উন্নীত হন।
২০১৬ সালে প্রকাশিত জেডির নিজের স্মৃতিকথা 'হিলবিলি এলেজি'-তে তিনি অকপটে তার পরিবারের সংগ্রামকে চিত্রিত করেছেন এবং ব্যক্তিগত দায়িত্বের ওপর জোর দিয়ে অ্যাপালাচিয়ায় সামাজিক অবক্ষয়ের সংস্কৃতি হিসেবে তিনি যা দেখেছেন তার সমালোচনা করেছেন।
'হিলবিলি এলিজি' জেডিকে শুধু একজন বেস্টসেলিং লেখকই করেনি বরং শ্বেতাঙ্গ, শ্রমজীবী ভোটারদের মাঝে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ফুটিয়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যদিও তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় ট্রাম্পের সমালোচনা করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি।
পর্দার আড়ালে জেডি ডোনাল্ড ট্রাম্পের তহবিল সংগ্রহের প্রচেষ্টায় সহায়তা করেছেন এবং ধনী দাতাদের তহবিলে দান করতে রাজি করিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, জেডি জুন মাসে একটি বে এরিয়া তহবিল সংগঠিত করতে সাহায্য করেছিলেন যেটির আয়োজক ছিলেন ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট ডেভিড স্যাক্স এবং চামাথ পালিহাপিটিয়া।
কিছু সমালোচক মনে করেন, জেডি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন না দেখিয়ে ট্রাম্পকেই নকল করছেন। সিনসিনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির সহযোগী অধ্যাপক ডেভিড নিভেন বলেন, "জেডি ট্রাম্পেরই প্রতিধ্বনি।"
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান