শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে সাভারে সস্ত্রীক চিকিৎসক আটক
চুরির অভিযোগ এনে ১০ বছর বয়সি এক শিশু গৃহকর্মীকে চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে অমানবিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগে স্ত্রীসহ এক চিকিৎসককে আটক করেছে সাভার মডেল থানা পুলিশ।
শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে ঢাকার সাভারের পৌর এলাকার রাজাশন থেকে এ দম্পতিকে আটক করা হয়। তারা হলেন কাজী মো. ইসমাইল হোসেন (৩১) ও তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুন পরশমণি (২৬)।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস অ্যান্ড ট্রাফিক) আব্দুল্লাহিল কাফি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে আমরা এ দম্পতিকে আটক করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তের পাশাপাশি এ বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।'
নির্যাতনের শিকার শিশুটি বর্তমানে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সায়েমুল হুদা বলেন, 'আগামীকাল আমাদের কনসালটেন্টরা শিশুটিকে দেখে পর্যবেক্ষণ দেওয়ার পর তার চিকিৎসার বিষয়ে পরবর্তীকরণীয় নির্ধারণ করা হবে।'
তিনি টিবিএসকে বলেন, শিশুটিকে সকালে আমাদের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীসময়ে আমাদের চিকিৎসকেরা শিশুটিকে দেখে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, 'শিশুটির সমস্ত শরীরেই আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, তবে সবগুলো আঘাতই পুরোনো। কিছু আঘাত হয়তো ১৫ দিন বা একমাস আগের, কিন্তু কিছু আঘাত বেশ পুরোনো।'
আটক ইসমাইল হোসেন বর্তমানে বরগুনার ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (স্বাস্থ্য) ৪২ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা বলে জানা গেছে।
আটক চিকিৎসকের পরিচয় নিশ্চিত করে বরগুনা জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. একেএম নাজমুল আহসান টিবিএসকে বলেন, 'কাজী ইসমাইল হোসেন আমাদের হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার পদে কর্মরত রয়েছেন।' এ চিকিৎসকের আটকের বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।
ভুক্তভোগীর মা কুলসুম আক্তার টিবিএসকে বলেন, 'গত পরশু (১১ জুলাই) ভোরে হঠাৎ ওই দম্পতি আমাকে সাভারের রাজাশন এলাকায় তাদের এক আত্মীয়ের বাসায় ডেকে নিয়ে আমার মেয়ের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ তুলে মেয়েকে আর তারা রাখবেন না হলে জানান। পরে আমি মেয়েকে নিয়ে বাসায় চলে আসার পর দেখতে পাই, মেয়ের পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত আর জখমের চিহ্ন।'
'এরপর আজ সকালে মেয়েকে চিকিৎসার জন্য সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করার পাশাপাশি থানার অভিযোগ দায়ের করি,' বলেন তিনি।
প্রায় দেড় বছর যাবৎ তার মেয়ে আটক দম্পতি বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেছে বলেও জানান তিনি।
মেয়ের বরাত দিয়ে কুলসুম আক্তার আরও অভিযোগ করেন, 'প্রথমদিকে অভিযুক্ত দম্পতি বাসায় শিশুটির সঙ্গে ভালো আচরণ করলেও একটা সময় পর থেকে কথায় কথায় মেয়েকে নির্যাতন শুরু করেন। ক্ষুদ্র ভুলেও বিভিন্ন সময় মারধরের পাশাপাশি সম্প্রতি চুরির অভিযোগ তুলে তাকে ছোট চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্যাতন করেন।'
শিশুটি ওই বাসার কাজে টুকটাক সহায়তা করার পাশাপাশি তাদের সন্তানদের দেখভাল করবে। বিনিময়ে তারা প্রতিমাসে শিশুটির পরিবারকে এক হাজার টাকা দেওয়ার পাশাপাশি শিশুটিকে লেখাপড়া শেখাবেন — দেড় বছর আগে এমন বোঝাপড়ার পর শিশুটিকে ওই দম্পতির বাসায় কাজে দেওয়া হয় বলে জানান মা কুলসুম।
অভিযুক্ত ইসমাইল হোসেন মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানার ঘরিয়ানা কাজীপাড়া এলাকার কাজী লুৎফর রহমানের ছেলে এবং তার স্ত্রী মাহমুদা খানম পরশমণি সাভারের মধ্য রাজাশন এলাকার মৃত নাজিমউদ্দীন সরকারের মেয়ে বলে জানা গেছে।