হোয়াইট হাউসের দৌড়ে ইতিহাস তৈরি করতে পারতেন কমলা হ্যারিস, কেন তিনি ব্যর্থ হলেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে জো বাইডেন সরে দাঁড়ানোর পর – দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এই পদের জন্য নির্বাচনে দাঁড়ান তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। বিজয়ীর মুকুট পরতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার অনন্য ইতিহাস গড়তেন তিনি। দুর্ভাগ্য হ্যারিসের, আমেরিকান ভোটারদের বেশিরভাগ তাঁর ওপর আস্থা রাখেননি। কেন এই ব্যর্থতা, যখন শুরুটা ছিল বেশ সম্ভাবনাময়। এমনকী যখন তিনি দলের মনোনয়ন পান, তখনকার প্রাথমিক জরিপে প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়েও ছিলেন। তবু এ পরাজয় কেন – তারই বিশ্লেষণ করা হয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক বিস্তৃত প্রতিবেদনে।
টিবিএসের পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটিতে উঠে আসা মূল বিষয়গুলোকে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো।
১. শ্রমিক সংগঠনগুলোর সমর্থন না পাওয়া:
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমজীবীদের ইউনিয়নগুলো বরাবরাই ডেমোক্রেট দলের বড় ভোট ব্যাংক। এরমধ্যে অন্যতম শক্তিশালী একটি ইউনিয়ন – ব্রাদারহুড অব টিমস্টারস। সেপ্টেম্বরে এই সংগঠনের নেতাদের সাথে একটি বৈঠকও করেছিলেন কমলা হ্যারিস।
সেখানে প্রতিশ্রুতি দেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে ভালোভাবে শ্রমিকদের চাকুরি ও জীবনযাত্রার মান রক্ষা করবেন। কিন্তু, শুধু কথায় মন ভোলেনি ইউনিয়ন নেতাদের। বরং তাঁরা পাল্টা প্রশ্ন করেন, বাইডেন কি শ্রমজীবী শ্রেণির জন্য যথেষ্ট কাজ করেছেন? বৈঠকটি ব্যর্থ হয়েছিল এসব মতভেদের ফলেই।
এর কয়েকদিন পরেই ইউনিয়ন নেতারা হ্যারিসকে সমর্থন জানাতে অস্বীকার করার মাধ্যমে তাঁকে জনসম্মুখে হেয় করে দেন। ১৯৯৬ সালের পরে এই প্রথম প্রভাবশালী শ্রমিক ইউনিয়নটি ডেমোক্রেটদের তরীতে পা না রাখারই সিদ্ধান্ত নেয়।
হ্যারিসের নির্বাচনী প্রচারণার জন্য এটি ছিল বড় ধাক্কা। সমর্থন পুরোদমে থাকলে ২০২৪ সালের নির্বাচনটা অন্যরকম হতেও পারতো।
২. অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ
মূল্যস্ফীতি ও অর্থনীতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন আমেরিকান ভোটাররা, আর তাঁদের এই উৎকণ্ঠা দূর করতে সফল হয়নি হ্যারিসের প্রচার শিবির। অথচ এবিষয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, এইক্ষেত্রে তাঁর প্রচার অভিযান হ্যারিসের চেয়ে এগিয়ে ছিল। এই ঘটনা হ্যারিসের পরাজয়ের আরেক বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
৩. প্রচারণায় ব্যাঘাত
অতি-বয়সের কারণে আবারো প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে তিনি দৃঢ় নন, জো বাইডেনকে এমন সমালোচনার মুখে হঠাৎ করেই সরে দাঁড়াতে হয় পুনঃপ্রার্থিতা থেকে। তাঁর বদলে দলের সমর্থন পেয়ে প্রার্থিতা পান হ্যারিস। ডেমোক্রেটদের এরপরে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হয় প্রচারণা কৌশল, ফলে তাঁরা ট্রাম্প শিবিরের তুলনায় পিছিয়েই পড়ে– যাদের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ ছিল।
হ্যারিসকে অনেকটা তড়িঘড়ি করে সাজাতে হয় প্রচার কৌশল, এখানেও পরিকল্পনার কমতি দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া, ট্রাম্প শিবিরের পক্ষ থেকে ডেমোক্রেটদের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো্র ধাক্কাও দক্ষভাবে মোকাবিলা করতে পারেননি হ্যারিস।
বিশেষত অর্থনীতি নিয়ে আমেরিকান ভোটারদের যেসব উদ্বেগকে ট্রাম্প শিবির কাজে লাগিয়েছে, হ্যারিসের প্রচারণা কর্মকর্তারা সেসব নিয়ে যথেষ্ট তৎপর ছিলেন না বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
৪. অপপ্রচারের চ্যালেঞ্জ:
প্রতিপক্ষ শিবিরের পক্ষ থেকে স্রোতের মতো অপপ্রচারের শিকার হন কমলা হ্যারিস। এমনকী তাঁর অতীত রেকর্ড নিয়েও এমনটা করা হয়, যার ফলে জনমনে তাঁর ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়।
৫. পরিচয় বনাম নীতি
কৃষ্ণবর্ণের প্রথম কোনো নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পান হ্যারিস। তাঁর এই পরিচয় প্রচারে তিনি আরও নজর দিতে পারতেন। কিন্তু, তা না করে, মনোযোগ দেন নারীদের গর্ভপাতের অধিকার ও নাগরিকদের জন্য কমমূল্যে আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলোর প্রচারণায়। দেশজুড়ে অর্থনীতি নিয়ে যে অসন্তোষ, তারমধ্যে হ্যারিসের এসব মহতী নীতি ভোটারদের মনে তেমনভাবে দাগ কাটতে পারেনি। কারণ উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বর্তমানে যথেষ্ট ভালো করলেও– মার্কিনীরা মনে করছেন, তাঁদের জীবনে এই অগ্রগতির তেমন ছাপ পড়েনি। ফলে সরকারে থাকা ডেমোক্রেট সরকারের এই ব্যর্থতার জন্যও কমলা হ্যারিসকে মূল্য চুকাতে হয়েছে।