ট্রাকভাড়ার সাথে বাড়তি শাক, সবজি আর ডিমের দামও
পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির সাথে সাথে বাজারে বেড়েছে শাক, সবজি আর ডিমের দামও।
জ্বালানী তেলের দামবৃদ্ধির মুখে বিভিন্ন রুটে ট্রাকের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা।
যদি বর্তমানে ১২০০ টাকা বাড়তি ভাড়া নেয়া হয়, সেই হিসাবে রাজধানীর বাজারগুলোতেও শাক কেজিতে সর্বোচ্চ ৪ টাকা, সবজি কেজিতে সর্বোচ্চ ৩ টাকা ও প্রতি পিস ডিমে সর্বোচ্চ ২৫ পয়সা করে বাড়তে পারে।
কিন্তু ঢাকার কাঁচাবাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, বলতে গেলে সব শাকসবজির দামই কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।
এ মাসের মাঝামাঝি ডিমের দাম প্রতি ডজনে প্রায় ৩৫ টাকা (প্রতি পিসে ৩ টাকা) বেড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় পৌঁছে।
তবে দাম না কমলে ডিম আমদানি করা হবে- বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন ঘোষণার একদিন পরই নগরীর পাইকারি বাজারে ডিমের দাম কমে দাঁড়ায় ১৪৫ টাকায়।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাত্তার মিজি বলেন, "জ্বালানির দাম বাড়লেও সে অনুযায়ী ট্রাকের ভাড়া বাড়েনি। বেশিরভাগ রুটেই ১২০০ টাকার উপরে ভাড়া বাড়ানো হয়নি, আবার কিছু রুটে এখনও পূর্বের ভাড়ায় চলছে ট্রাকগুলো।"
"তেলের দাম বাড়লেও ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি-রপ্তানি কম হওয়ায় দেশে পণ্য পরিবহনের চাহিদা অনেক কমে গেছে। আর ট্রাকের কোন নির্দিষ্ট ভাড়া নেই। চাহিদার উপরই ট্রাকের ভাড়া ওঠানামা করে। ট্রাকগুলোর চাহিদা যেহেতু খুবই কম, তাই ভাড়াও কম। কখনো কখনো ট্রাকগুলো পূর্বের ভাড়ার থেকেও কম ভাড়ায় পণ্য পরিবহন করছে", যোগ করেন তিনি।
ট্রাক মালিক ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যেসব এলাকা থেকে ঢাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাঁচা পণ্য আসে তার মধ্যে রয়েছে ঝিনাইদহ, পাবনা, টাঙ্গাইল, রৌমারী, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল ও গাজীপুর।
ঝিনাইদহ থেকে ঢাকাগামী ট্রাকের ভাড়া পূর্বে ছিল ১৭ হাজার টাকা, বর্তমানে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার টাকা নেওয়া হয়।
পাবনা থেকে ঢাকাগামী ট্রাকের ভাড়াও এখন এক হাজার টাকা বাড়িয়ে ১৮ হাজার টাকা করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা আসতে পূর্বে ট্রাক ভাড়া ছিল ৬ হাজার টাকা বর্তমানে সর্বোচ্চ ৬,৫০০-৭,২০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়।
এছাড়া রৌমারী-ঢাকা রুটে এবং কুষ্টিয়া-ঢাকা রুটেও প্রায় একই হারে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
ট্রাক শ্রমিক ও মালিকরা জানায়, একটি পরিবহনের ক্যাপাসিটি (সক্ষমতা) ও সবজির ধরনভেদে ৮ থেকে ১২ টন কাঁচামাল বহন করা হয়।
কিছু কিছু সবজি ও শাক ৭-৮ টনের বেশি বহন করা সম্ভব হয় না। কারণ এগুলোর ওজন কম হয় কিন্তু পরিমাণে অনেক বেশি হয়ে যায়। অন্যান্য সবজির ক্ষেত্রে ১০-১২ টন বহন করা হয়ে থাকে।
সে হিসেবে রাজধানীর বাজারগুলোতে শাক কেজিতে সর্বোচ্চ চার টাকা, সবজি কেজিতে সর্বোচ্চ তিন টাকা বাড়তে পারে।
এদিকে একটি তিন টনের ট্রাকে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৭০ হাজার ডিম বহন করা হয়। ফলে পরিবহন ক্ষেত্রে যদি দাম বাড়ে, প্রতিটি ডিমে সর্বোচ্চ ২৫ পয়সা করে বাড়তে পারে।
তবে ঢাকায় ডিমের দাম এতটা বাড়ার কথা না। কারণ ঢাকায় সব থেকে বেশি ডিম আসে গাজীপুরের দিক থেকে। এখানে তিন টনের একটি ট্রাকের ভাড়া বর্তমানে সাড়ে ছয় হাজার থেকে আট হাজার টাকা। কিন্তু ডিম আনা হয় প্রায় ৭০ হাজার বা তার ওপরে। এই রুটে আগে ভাড়া ছিল সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকা।
পরিবহন কোম্পানিগুলো সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি আদায় করছে
ঢাকার গাবতলী থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত ১০৯.৭ কিলোমিটার পথের জন্য সরকার ভাড়া নির্ধারণ করেছে ৩৭২ টাকা। তবে পরিবহনগুলো ভাড়া নিচ্ছে ৩৭৫ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। তেলের দাম বাড়ার আগে এই পথে সরকারি ভাড়া ছিল ৩১৬ টাকা। সেক্ষেত্রে ৪০ সিটের একটি গাড়ির প্রতি যাত্রীর উপর ভাড়া বেড়েছে ৫৬ থেকে ৮৪ টাকা।
এছাড়া ঢাকা থেকে যশোরের ২৩২ কিলোমিটার পথে পূর্বে প্রতিটি যাত্রীর জন্য নির্ধারিত ভাড়া ছিল ৫৯৭ টাকা। বর্তমানে সেই ভাড়া ১১৮ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১৫ টাকা।
ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত ২৭২ কিলোমিটার পথের জন্য পূর্বে ভাড়া ছিল ৬৯১ টাকা বর্তমানে ১৩৯ টাকা বেড়ে সেই ভাড়া দাঁড়িয়েছে প্রতিটি যাত্রীর জন্য ৮৩০ টাকা।
এছাড়া ঢাকা থেকে বেনাপোল ২৫০ কিলোমিটার পথের জন্য পূর্বে ভাড়া ছিল ৬৪১ টাকা। এই পথে প্রতি যাত্রীর জন্য ১২৭ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬৮ টাকা।
ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া যেতে ১৫১ কিলোমিটার পথের জন্য ভাড়া ছিল যাত্রীপ্রতি ৪১৪ টাকা। তেলের দাম বাড়ার পরে ৭৭ টাকা বাড়িয়ে সরকার প্রতিটি যাত্রীর জন্য ৪৯১ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছে এই পথে।
একটি বাস এক লিটার তেলে দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। ধরে নেয়া যাক, প্রতি লিটার তেলে গড়ে ২.২৫ কিলোমিটার যায়। এদিকে প্রতি লিটার ডিজেলে দাম বেড়েছে ৩৪ টাকা।
তাহলে ফরিদপুর পর্যন্ত ১০৯.৭ কিলোমিটার পথে তেলের বাড়তি দাম বিবেচনায় প্রতিটি যাত্রীর ভাড়া বাড়ার কথা সর্বোচ্চ ৩৮ টাকা কিন্তু সেখানে বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৫৬ থেকে ৮৪ টাকা।
ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ২৩২ কিলোমিটার পথে ভাড়া বাড়ার কথা ৮৮ টাকা, কিন্তু বেড়েছে ১১৮ টাকা।
ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত ২৭২ কিলোমিটার পথের জন্য প্রতিটি যাত্রীর ভাড়া বেড়েছে ১৩৯ টাকা। কিন্তু তেলের বাড়তি দাম বিবেচনায় যাত্রীপ্রতি বাড়তি ভাড়া হওয়া উচিত ছিল ১০৩ টাকা।
অনুরূপভাবে ঢাকা থেকে বেনাপোল যেতে ২৫০ কিলোমিটারের জন্য ১২৭ টাকা বাড়ানো হলেও ভাড়া বাড়ানো উচিত ছিল ৯৫ টাকা।