শান্তর হৃদয় জুড়ানো ব্যাটিংয়ে রান পাহাড় টপকে জিতলো বাংলাদেশ
স্কুপ শটটা খেলেই মুশফিকুর রহিমের চওড়া হাসি। দলকে জেতানোর হাসি তো এমনই হয়! আশা-নিরাশার দোলাচল পেরিয়ে দলকে জিতিয়ে অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান গলায় জড়ালেন নন-স্ট্রাইকার শরিফুল ইসলামকে। কিন্তু রান পাহাড় তাড়া করে জেতার উদযাপনে পড়লো বাধা, মাঠে ঢুকে সোজা মুশফিকের কাছে এক দর্শক। বিশাল লক্ষ্য পাড়ি দিয়ে জেতার আনন্দ উৎসবে ক্রিকেটারদের শামিল হতেই যেন তার এই কাণ্ড!
প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী হলেও এমন জয় যেকোনো দলের কাছে বিশেষ কিছুই হওয়ার কথা। ৪৫ ওভারে ৩২০ রান তুলে জয় নিশ্চিত করা নিশ্চয়ই মুড়ি-মুড়কির মতো কিছু নয়! আইরিশদের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। যা ওয়ানডেতে তাদের তৃতীয় সফল রান তাড়া।
প্রথম ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত না হলে জিততে পারতো বাংলাদেশ, এমন আক্ষেপই শোনা গিয়েছে অনেকের মুখে। বৃষ্টিতে বিলম্বে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সেই সুযোগ আর রাখলো না তামিমের দল। বলা উচিত, রাখতে দিলেন না নাজমুল হোসেইন শান্ত আর তাওহিদ হৃদয়।
আয়ারল্যান্ডের ছুঁড়ে দেওয়া ৩২০ রানের পাহাড় সমান লক্ষ্য আরো বড় মনে হচ্ছিল দলীয় মাত্র ৯ রানে তামিমের বিদায়ে। লিটন দাস নিজের স্বভাবসুলভ ব্যাটিংই করছিলেন, কিন্তু সেটিও স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। ৪০ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ২১ রান করে সাজঘরে ফেরেন লিটন। বলের সঙ্গে রান উঠছিলো না পাল্লা দিয়ে। আস্কিং রেট বাড়ছিল প্রতি ওভারেই।
সেখান থেকেই পালটা আঘাত হানার চেষ্টা করেন সাকিব ও শান্ত। দুজনে মিলে ৪৭ বলে ৬১ রানের জুটি গড়েন। কিন্তু তা আরো ভয়ংকর হয়ে ওঠার আগেই বাজে শট খেলে আউট হোন সাকিব।
দেশের মাটিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই ওয়ানডে অভিষেক হওয়া তাওহিদ হৃদয় আসেন ক্রিজে। সাকিব-শান্ত যদি রান তাড়ার গতি বাড়িয়ে থাকেন তাহলে তাতে আরো ফুলকি দিয়েছেন হৃদয়। দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে খেলেছেন সময়োপযোগী এক ইনিংস। শান্ত-হৃদয় মাত্র ১৭ ওভারেই যোগ করেন ১৩১ রান। যা জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে দেয় বাংলাদেশকে।
নিজের মাত্র চতুর্থ ওয়ানডেতে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন হৃদয়। ৫ চার আর ৩ ছয়ে ৫৮ বলে ৬৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। প্রথমদিকে দেখে শুনে ব্যাট করা শান্তর ব্যাট ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে অশান্ত। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করতে এই ম্যাচকেই বেছে নেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত ৯৩ বলে ১২ চার আর ৩ ছয়ে খেলেন ১১৭ রানের এক ঝলমলে ইনিংস। শান্তর বিদায়ের পর মেহেদী হাসান মিরাজ ঝটপট ১২ বলে ১৯ রানের ইনিংস খেলে আউট হলেও জয়কে এনে দিয়ে যান আরো কাছে।
বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার কাজটা দক্ষ নাবিকের মতোই করেন মুশফিকুর রহিম। ২৮ বলে ৪ চারে ৩৬ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনদিন আগেই ৩৬ পেরোনো মুশফিক।
এর আগে টসে জিতে তামিমের বোলিং করার সিদ্ধান্তটা সঠিক প্রমাণে ব্যর্থ হোন বাংলাদেশি বোলাররা। আর তার সুযোগ নিয়ে বড় সংগ্রহ গড়ে আয়ারল্যান্ড। হ্যারি টেক্টরের অসাধারণ সেঞ্চুরির সঙ্গে জর্জ ডকরেলের ঝড়ো ইনিংসে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩১৯ রানের সংগ্রহ গড়ে আইরিশরা। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। আগের সর্বোচ্চ ছিলো ২৯২।
টস জিতে বোলিং নিয়ে তামিম ভুল করেননি, এমনটা যদি আয়ারল্যান্ডের ইনিংসের শুরুতে কেউ ভেবেও থাকে তাহলে তাকে দোষ দেওয়ার উপায় নেই। ১৬ রানেই দুই আইরিশ ওপেনারকে সাজঘরে ফিরিয়ে দেন হাসান মাহমুদ। এরপরই আয়ারল্যান্ড ইনিংসের হাল ধরেন অধিনায়ক বালবার্নি এবং হ্যারি টেক্টর।
৯৮ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন এই দুজন। দলীয় ১১৪ রানের মাথায় বালবার্নি, ১৩৮ রানে টাকার আর ১৬৭ রানের মাথায় ক্যামফার বিদায় নিলেও টেক্টর ছিলেন অবিচল। ১৬৭ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে আবারো চাপে পড়ে আয়ারল্যান্ড।
কিন্তু এরপরের গল্পটা কেবলই টেক্টর আর জর্জ ডকরেলের। বাংলাদেশি বোলারদের হতাশ করে দুজনে গড়েন ১১৫ রানের জুটি। ষষ্ঠ উইকেটে এই জুটি গড়ার পথে টেক্টর তুলে নেন নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি। মাত্র ৩১ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন ডকরেল।
১১২ বলে ১৪০ রানের ইনিংস খেলে অবশেষে ফেরেন টেক্টর। ৭টি চার ও দশটি ছয় মারেন এই ২৩ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটসম্যান। শেষদিকে ডকরেল নিজের ইনিংসের গতি বজায় রাখেন। সাথে মার্ক এডায়ারের ৮ বলে ২০ রানের ইনিংস আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহকে নিয়ে যায় ৩১৯ রানে। ৩ ছয় আর ৪ চারে ডকরেল অপরাজিত থাকেন ৪৭ বলে ৭৪ রান করে।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে কেবল হাসান মাহমুদই একটু প্রতিরোধ গড়তে পেরেছেন। ৯ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন তিনি। খরুচে বোলিং করেছেন শরিফুল ইসলাম, ৯ ওভারে ২ উইকেট নিতে ৮৩ রান গুনেছেন এই বাঁহাতি পেসার। এবাদত ও তাইজুল নিয়েছেন একটি করে উইকেট।