ড্যাপের ৩০-৩৫% বাস্তবায়ন করতে পারলেও ঢাকাকে বাসযোগ্য করা সম্ভব: বিশেষজ্ঞরা
ঢাকা মহানগরের উন্নয়নে গেজেট হওয়া ডিটেইল এরিয়া প্লান (ড্যাপ ২০২২-২০৩৫) এর ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পারলেও ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তোলা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
শনিবার (১২ নভেম্বর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজিত 'পরিকল্পিত জনঘনত্ব, বাসযোগ্য নগর ও আগামীর বাংলাদেশ' শীর্ষক এক সেমিনার বক্তারা এ মন্তব্য করেন।
বিআইপি'র সভাপতি ফজলে রেজা সুমন বলেন, "ড্যাপের ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ বাস্তবায়ন করতে পারলেও ঢাকাকে বাসযোগ্য করা সম্ভব। রাজশাহীর জন্য যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তার মাত্র ৩০ ভাগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আর তাতেই বদলে গেছে রাজশাহী শহর। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। রাজশাহীকে এখন সবুজ ও পায়ে হাঁটার নগরী বলা হচ্ছে।"
ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তোলার জন্য ড্যাপের বেশকিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন- ডেন্সিটি জোনিং (এলাকা-ভিত্তিক ফ্লোর এরিয়া অনুপাত), ব্লক-ভিত্তিক উন্নয়ন, নগরজীবন (৩,২০৭ কিমি), ট্রানজিট-ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি), গণপরিবহনকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং নন-মোটরাইজড ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা (৬টি মেট্রো, ২টি বাস র্যাপিড ট্রানজিট, ৬টি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ২টি রিং রোড, এবং সার্কুলার ওয়াটারওয়ে), সাইকেল লেনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা (২২২ কিমি), নিম্ন আয়ের আবাসন (৫৮টি জায়গায়), জেলা-ভিত্তিক স্কুল (৬২৭টি স্কুল, ২৮৫টি কলেজ এবং ২৮৭টি হাসপাতাল), আঞ্চলিক পার্ক (৫টি আঞ্চলিক পার্ক, ৫৫টি ওয়াটার পার্ক, ১৪টি ইকো-পার্ক)।
ফজলে রেজা বলেছেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি।
উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেহ করেন, এলজিইডি কর্তৃক ২৪৫ টি উপজেলা প্রনয়ণ করা হলেও গেজেটেড হয়েছে মাত্র ৫টি।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর সভা করে অগ্রাধিকার অনুযায়ী ড্যাপ বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া, স্থানীয় পরিকল্পনার সঙ্গে নগর পরিকল্পনার সমন্বয় না হলে পরিকল্পনা সাফল্য পাবেনা। তাই পুরো দেশকেই পরিকল্পনার আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শহরে অভিবাসন ঠেকাতে গ্রামীণ এলাকায় শহুরে সুযোগ-সুবিধা সরবরাহের ওপরেই তিনি জোর দেন।
বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান সেমিনারের মূল বক্তব্যে উল্লেখ করেন, স্বাধীনতার পর মাথাপিছু আবাদযোগ্য জমি সাড়ে ৬২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৩৭০ বর্গকিলোমিটার, যেখানে মাথাপিছু আবাদযোগ্য জমি ছিল ৩২ ডেসিমাল। ২০১৮ সালে ৪৮ বছর পর বাংলাদেশের মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল দাঁড়ায় ৭৭ হাজার ৭২৩ বর্গ কিলোমিটার, যেখানে মাথাপিছু আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ হয় মাত্র ১২ ডেসিমাল।
মেহেদী আহসান বলেন, জনসংখ্যার ঘনত্বে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। প্রতি কিলোমিটারে এখানে ১ হাজার ২৬৫ জন মানুষ বসবাস করে।
ঢাকা শহরে গাছপালার পরিমাণ ৬ শতাংশ, বিল্ট-আপ এলাকা ৬৬ শতাংশ, খোলা জায়গা মাত্র ০.৯ শতাংশ এবং জলাভূমি ৫ শতাংশ। এই হিসাবই প্রমাণ করে, ঢাকা বাসযোগ্য শহর নয়।
পুরো দেশের জন্য বিস্তৃত একটি পরিকল্পনা ছাড়া, খণ্ড খণ্ড পরিকল্পনা দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয় নয়; এতে উন্নয়নের পরিবর্তে আরও জনদুর্ভোগ বাড়বে।
তিনি বলেন, "অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নাগরিক সুবিধার অভাবে, শহরটি আজ বসবাসের অযোগ্য তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। ৮০ শতাংশ নগরায়নের স্বপ্ন শুধু পরিকল্পিত ঢাকা দিয়েই পূরণ করা সম্ভব নয়।"