যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় যেতে প্রশাসন সাজাচ্ছে আ.লীগ: ফখরুল
যেকোনো উপায়ে আবারও ক্ষমতায় যেতে আওয়ামী লীগ প্রশাসন ঢেলে সাজাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ যেনতেন ভাবে, যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। এজন্য তারা প্রশাসনকে সাজাচ্ছে। নির্বাচনে যাদের হাতে ক্ষমতা থাকে, সেই ডিসিদের পরিবর্তন করা হচ্ছে। ৩০টির উপরে জেলায় ডিসি পরিবর্তন করা হয়েছে। এসপি-ইউএনও পরিবর্তন করা হচ্ছে।'
আজ রোববার (১৬ জুলাই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিকদল আয়োজিত 'মেহনতী শ্রমিক জনতার মহাসমাবেশ' এ প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ অভিযোগ করেন। কাজীর দেউড়ী নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে নুর আহম্মেদ সড়কে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিএনপি কোনো আলোচনায় যাবে না জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'নির্বাচন কমিশনারের হাতে কিছু নেই। উনি কিছুই পারেন না। নির্বাচন কমিশন চাইলেও ফলাফল ঘোষণা করার পর- কোনো অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও পুরো আসনের (সংসদীয়) ফলাফল স্থগিত বা ভোট বাতিল করতে পারবে না ইসি। তাই যার কোনো ক্ষমতা নেই, তার সঙ্গে কিসের কথা?'
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, 'সকল দলের চাহিদার কারণে বেগম খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার এই ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে, বাংলাদেশে চিরস্থায়ী অস্থিরতা তৈরি করেছে। তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও, ভেতরে ভেতরে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারছে না, তারা সেলফ সেন্সরশিপ করছে।'
চড়া দ্রব্যমূল্যের কারণে মানুষ দুঃসহ জীবনযাপন করছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আওয়ামী লীগ ১০ টাকায় চাল দেওয়ার কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিল। এখন চালের কেজি ৯০ টাকা। কৃষকরা সার পাচ্ছে না। ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিল, এখন যুবকরা চাকরির জন্য আন্দোলন করছে। বিরোধী দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে তাকে চাকরি দেওয়া হচ্ছে না।'
'এসব জুলুম থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য তারেক রহমান ৩১ দফা ঘোষণা করেছেন। যেখানে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের কথা বলা হয়েছে'- বলেন মির্জা ফখরুল।
বিকাল দুইটায় সমাবেশ শুরু হলেও, দুপুর ১২টার পর থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা সমাবেশ স্থলে আসতে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকসমাগম উত্তরে কাজীর দেউড়ি মোড়, দক্ষিণে নুর আহমেদ সড়কের লাভলেইন, পশ্চিমে সিআরবি পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে।
এসময় চট্টগ্রাম মহানগর ছাড়াও রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার ও ফেনীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদের 'ভোট আমার সাংবিধানিক অধিকার' 'টেকব্যাক বাংলাদেশ' 'খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই'-সহ নানান স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার প্রদর্শন করতে দেখা যায়।
বিএনপির শ্রম-বিষয়ক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সভাপতি এ.এম নাজিম উদ্দিনের দাবি, আজকের সমাবেশে অন্তত ৩০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'আওয়ামী লীগের খেলা শেষ। এবার বাংলােদেশের মানুষ তাদের সরকার নির্বাচিত করবে। এর বাইরে হবার সুযোগ নেই।'
বিদেশিদের সমর্থনের উপর বাংলাদেশের ক্ষমতা নির্ভর করে না মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, 'বিদেশিরা বাংলাদেশে এসেছে ভোট চোরের আস্তানা ভেঙ্গে দিতে। তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চায়। আওয়ামী লীগ এটা ভালো করেই জানে। কিন্তু, নেতা-কর্মীদের মনোবল ঠিক রাখতে নানান কথা বলছে।'
র্যাবকে দিয়ে যারা গুম-খুন করিয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় আনার হুশিঁয়ারি উচ্চারণ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, 'আমেরিকা র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আর যারা র্যাবকে দিয়ে এসব করিয়েছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে।'
তিনি বলেন, 'জনগণকে ক্ষমতার বাইরে রেখে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য শেখ হাসিনাকে গণভবনের ভাড়া দিতে হবে। নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য মানুষকে প্রস্তুতি নিতে হবে।'
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, এস.এম ফজলুল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, নগর বিএনপির আহবায়ক শাহদাত হোসেন চৌধুরী ও সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর প্রমুখ।