বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন হাতিশাবক
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর পাইরাং বন থেকে লোকালয়ে চলে আসা বাচ্চা হাতিটির স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটায় কক্সবাজারের চকরিয়ায় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম জানান, বাচ্চা হাতিটি তীব্র অপুষ্টির শিকার, তাকে এখানে নিয়ে এসে সাফারি পার্ক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে।
মাজহারুল ইসলাম জানান, এরকম এক বা দেড় মাস বয়সী শিশু হাতির প্রধান খাদ্য মায়ের দুধ। 'কিন্তু, দুঃখের বিষয় গত এক সপ্তাহ থেকে বাচ্চাটি তার পরিবার থেকে আলাদা রয়েছে, মা হাতির দুধে যেসব প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে, সেগুলো না পেয়েই শাবকটির স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে গেছে। বিকল্প হিসেবে পার্কের কর্মীরা তাকে ল্যাকটোজেন ফর্মুলা খাইয়েছে, কিন্তু বাচ্চাটি যথেষ্ট পরিমাণে খায়নি। এতে তার স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, শিশু হাতিটি তার বয়সের হিসেবে যেমন ছুটোছুটি, খেলাধুলা করা দরকার তা করছে না। এই ঘটনাও পরিচর্যাকারীদের উদ্বেগে ফেলেছে।
চিকিৎসা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মাজহারুল জানান, বাচ্চা হাতিটিকে হাসপাতালে তার জন্য একটি নির্দিষ্ট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেখানে দুজন দক্ষ পরিচর্যাকারী তাকে সার্বক্ষণিক সেবা দিচ্ছে। তাছাড়া, হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জনের নিবিড় তত্ত্বাবধান বাচ্চাটির চিকিৎসা চলছে।
নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে বাচ্চাটির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করাই আপাতত আমাদের প্রধান লক্ষ্য। একবার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলে, সিনিয়র কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে ওর বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
সাফারি পার্ক হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. জুলকারনাইন বলেন, পরিবার থেকে আলাদা হওয়া এবং স্থানান্তরের ঘটনায় বাচ্চা হাতিটির মধ্যে ট্রমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। 'কিন্তু, আমাদের প্রধান চিন্তার কারণ, দুর্বল স্বাস্থ্য এবং শরীরে দৃশ্যমান কিছু আঘাতের চিহ্ন। এখন আমরা ওকে দুধ ও পুষ্টির জন্য স্যালাইন দুইই দিচ্ছি, আর আঘাতের স্থানগুলোর পরিচর্যা করছি।'
তিনি আরও বলেন, 'সম্প্রতি হঠাৎ করে বাচ্চাটির উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়, এতে তার পক্ষে বেশিক্ষণ ধরে হাঁটাচলা করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। ওর সার্বিক শারীরিক অবস্থা বেশ জটিল।'
এক সপ্তাহ আগে পাইরাং বনে গভীর কাদায় আটকে পড়ে হাতির বাচ্চাটি। হাতির পাল বাচ্চাটিকে উদ্ধার করতে না পেরে তাকে রেখে চলে যায়। তখন স্থানীয় মানুষ গিয়ে বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে এবং বনে ছেড়ে দেয়। কিন্তু, বাচ্চাটি আবার লোকালয়ে ফিরে আসে।
বন বিভাগ বেশ কয়েকবার বাচ্চাটিকে হাতির পালের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করে। কিন্তু, মানুষের সংস্পর্শে আসার কারণে হাতির পাল বাচ্চাটিকে গ্রহণ করেনি।
এই অবস্থায়, মায়ের দুধের অভাবে বাচ্চাটির স্বাস্থ্যের গুরুতর অবনতি হতে থাকলে, গত বৃহস্পতিবার রাতে এটিকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে নিয়ে আসা হয়।