সাফারি পার্কে থাকা দলছুট হাতিশাবকের শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত
চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকার পাইরাং বন থেকে দলছুট হয়ে লোকালয়ে চলে আসা হাতিশাবকটিকে কক্সবাজারের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে নিয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তার শারীরিক অবস্থার তেমন কোন উন্নতি হয়নি।
সাফারি পার্ক হাসপাতালের একটি কক্ষে রেখে তাকে চিকিৎসা ও নিবিড় পরিচর্যা করা হচ্ছে। আগের তুলনায় দৌড়ঝাঁপ একটু বাড়লেও অপুষ্টিতে ভোগা হাতির বাচ্চাটির শারীরিক দুর্বলতা কমেনি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. জুলকারনাইন।
তিনি বলেন, "আমরা বাচ্চাটিকে দিনে ৮-১০ বার ল্যাকটোজেন ফর্মুলা খাওয়ানোর পাশাপাশি দুর্বলতা কমাতে ওরাল স্যালাইন খাওয়ানোর চেষ্টা করছি। তবে সে কখনো খাচ্ছে, আবার কখনো খাচ্ছে না। যে কারণে তার শারীরিক দুর্বলতা কমছে না।"
তার দুর্বলতা সারাতে বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে, ডা. জুলকারনাইন বলেন, "সে এখনো হাঁটাচলা করছে। এ অবস্থায় তাকে আইভি স্যালাইন দেয়া হলে সে রাখবে না। তবে তার অবস্থার অবনতি হলে শেষ বিকল্প হিসেবে স্যালাইন দেয়ার ব্যবস্থা আমাদের আছে। আশা করছি তার প্রয়োজন হবে না।"
এদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সাফারি পার্কের বন্য পরিবেশে রেখে অভিজ্ঞ একজন মাহুতের (যারা হাতি লালনপালন করে) মাধ্যমে বাচ্চাটির সেবাশুশ্রূষা করা হলে তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি হতে পারে।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বিবেক চন্দ্র সূত্রধর টিবিএসকে বলেন, "একটি দেড় মাস বয়সী হাতির বাচ্চা ও মানুষের বাচ্চার মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। দু'জনেরই মায়ের পরম যত্ন ও বুকের দুধের প্রয়োজন হয়। বাচ্চাটি যেহেতু মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সে একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।"
তিনি বলেন, তাকে এই ট্রমা বা ভয়ভীতি থেকে বের করে আনতে প্রথমে যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে হাসপাতালের কক্ষ থেকে বের করে তাকে সাফারি পার্কের বন্য পরিবেশে নির্জন কোন জায়গায় ছেড়ে দেয়া যেখানে কোন লোকসমাগম হয় না।
বন্য পরিবেশে তাকে অবমুক্ত করা হলে তার দুধ খাওয়ার প্রবণতা বাড়বে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ প্রাণী চিকিৎসক।
এরপর যেটা প্রয়োজন তা হলো একজন অভিজ্ঞ মাহুত নিয়োগ দিয়ে তার সেবাশুশ্রূষা করা। কারণ মা হাতির পর একজন মাহুতই ভালো জানে এই বয়সী হাতিশাবকের কি ধরণের যত্নের প্রয়োজন, তিনি যোগ করেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, "কৃত্রিম উপায়ে হাতির বাচ্চা লালনপালন করা বেশ কষ্টসাধ্য। অপুষ্টিতে ভোগা বাচ্চাটিকে সারিয়ে তুলতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি।"
এর আগে গত ১৬ অক্টোবর, পাইরাং বনে পাহাড় থেকে পড়ে কাদায় আটকে পড়া শাবকটিকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে তাকে ফেলে চলে যায় হাতির পাল। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বনে রেখে আসলেও সে পরে লোকালয়ে চলে আসে। বন বিভাগের কর্মীরা শাবকটিকে হাতির পালের কাছে ফিরিয়ে দিতে কয়েক দফা চেষ্টা করে। তবে মানুষের সংস্পর্শে আসায় হাতির পাল শাবকটিকে না নিয়ে চলে যায়।
দীর্ঘসময় মায়ের দুধের অভাবে শাবকটি দুর্বল হতে থাকায় জীবন রক্ষায় গত ২০ অক্টোবর রাতে তাকে চকোরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে পাঠানো হয়। সেখানে হাসপাতালের একটি কক্ষে রেখে দুইজন দক্ষ কর্মীর হাতে অভিজ্ঞ ভেটেরিনারি সার্জনের তত্ত্বাবধানে তার নিবিড় পরিচর্যা ও চিকিৎসা চলছে গত একসপ্তাহ ধরে।