মিয়ানমারে বিদ্রোহীরা আরও শক্তিশালী হচ্ছে, রোহিঙ্গারা কি ফিরতে পারবে?
মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইরত জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ১৪ জানুয়ারি দেশটির চিন রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর পালেতোয়া দখল করে নেয়। শহরটি বাংলাদেশ সীমান্তের পূর্বদিকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর এর উত্তরে রয়েছে ভারতীয় সীমান্ত।
পালেতোয়া দখলের পর উত্তর-পূর্ব অঞ্চলজুড়ে দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘুদের ৩টি সুসজ্জিত মিলিশিয়া বাহিনীজোট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একটি বড় সমন্বিত আক্রমণও পরিচালনা করে। অপারেশন ১০২৭ নামে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর এসব অভিযানের মুখে ক্রমেই সব রণাঙ্গনে পিছিয়ে পড়ছে দেশটির সামরিক বাহিনী।
১২ জানুয়ারি যুদ্ধরত আরাকান আর্মিসহ অন্যান্য পক্ষগুলোর মধ্যে চীনের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার মাত্র দুই দিন পরে পালেতোয়ার দখল হাতছাড়া হয় জান্তার। বলা বাহুল্য, চুক্তির প্রভাব কেবল চীন সীমান্তবর্তী এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকবে বলেই ধারণা করা হয়েছিল।
বিদ্রোহী তৎপরতা তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পরিস্থিতিতে আপাতত না পড়লেও মিয়ানমার বর্তমানে একটি দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বেসামরিক নাগরিক এবং আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক দ্বারা গঠিত সশস্ত্র প্রতিরোধের নতুন এ রূপ ইতোমধ্যেই অস্থির মিয়ানমারের জন্য নতুন করে বৃহত্তর অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে থাকা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য এর অর্থ কী দাঁড়াচ্ছে? তাদের ফেরার সম্ভাবনার কী হবে এখন?
মিয়ানমার-সংকট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান পরিস্থিতিতে শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে উঠছে।
অপারেশন ১০২৭ ও পিছুহটা সশস্ত্র বাহিনী
অপারেশন ১০২৭ চীনের সীমান্তবর্তী উত্তর শান রাজ্যে শুরু হয়। এমএনডিএএ, তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি ও আরাকান আর্মির থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের বিদ্রোহী সৈন্যরা দাবি করেছে, এ প্রদেশে এখন পর্যন্ত তারা শত শত সামরিক ফাঁড়ি এবং বেশ কয়েকটি শহর ও সীমান্ত প্রবেশদ্বার দখল করেছে।
এ মাসের শুরুতে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর ঠিক আগে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো জান্তা সৈন্যদের সঙ্গে কয়েক সপ্তাহের ভয়াবহ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। ওই সংঘাতের পর বিদ্রোহীরা সামরিক বাহিনীর আঞ্চলিক সদর দপ্তর দখল করে চীনা সীমান্তের কাছে অবস্থিত লাউকাই নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
যদিও যুদ্ধবিরতি চুক্তির অর্থ হচ্ছে চীনা সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় বিদ্রোহীদের অগ্রগতি বন্ধ হয়ে যাবে, তবে বিশেষজ্ঞরা এ যুদ্ধবিরতি কতদিন ধরে বহাল থাকবে তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন। কারণ অতীতে এ ধরনের কয়েক ডজন চুক্তি শেষ পর্যন্ত ভেঙে গিয়েছিল।
বিশ্বজুড়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে এখন নতুন প্রশ্ন, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি দেশটির জান্তার জন্য শেষের শুরু কি না। তবে এরকম কোনো সিদ্ধান্তে আসার সময় এখনো আসেনি।
'যুদ্ধবিরতি মূলত উত্তর-পূর্ব মিয়ানমারের চীন সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর জন্য প্রযোজ্য। এটা দেশের বাকি অংশে যেখানে বিদ্রোহ চলছে, সেখানকার জন্য খুব কমই প্রাসঙ্গিক,' দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অভ পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) এএনএম মুনিরুজ্জামান।
'ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স দাবি করছে, এটি ২৫টি সামরিক চৌকি, এক ডজন শহর এবং চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যের অংশ ৫টি প্রধান সীমান্ত ক্রসিং দখল করেছে,' তিনি বলেন।
'এই যুদ্ধবিরতি কতদিন বহাল থাকে সেটাই দেখার বিষয়। কারণ যুদ্ধবিরতির সম্মতি আগেও ছিল, কিন্তু বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। চীন বিশেষভাবে এই যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছে যাতে বাণিজ্য পথ খুলে দেওয়া হয় এবং সীমান্তের কাছে বসবাসকারী চীনা নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া যায়,' বলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) নামক একটি সরকারি থিংক ট্যাংকের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করা মুনিরুজ্জামান।
মুনিরুজ্জামান উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মায়ানমারের রাখাইন ও চিন রাজ্যে বিদ্রোহী দলগুলো আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তি অর্জন করেছে। সামরিক বাহিনীর তুলনায় তারা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
তবে এই পরিস্থিতিতে সামরিক জান্তা ভেঙে পড়বে বলেও বিশ্বাস করেন না তিনি।
'আমার মনে হয়না তা হবে। প্রথমত, মধ্য মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো এখনো জান্তার নিয়ন্ত্রণে। দ্বিতীয়ত, জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো মধ্য মিয়ানমার দখলে নিতে আগ্রহী নয়; তাদের স্বার্থ নিহিত রয়েছে তাদের রাজ্যের ক্ষমতা ও সম্পদের মধ্যে,' মুনিরুজ্জামান বলেন।
'সুতরাং, নতুন করে শক্তিশালী হলেও বিদ্রোহী গোষ্ঠীসমূহ খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে পারবে না,' বলেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের ভাগ্য অপরিবর্তিত
গত বছরের শেষের দিকে জানা যায়, ত্রিপক্ষীয় চুক্তির অধীনে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করা হবে। তবে তা আর পরে কখনও হয়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার সম্পর্কিত একটি সূত্র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থেকে টিবিএসকে বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন উদ্যোগ 'একটু মন্থর' হয়েছে।
'ডিসেম্বরের আগেই প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইন ফিরে যাওয়া নিরাপদ হবে না। আমরা খবর পাচ্ছি, রাখাইনের অন্তত ৬০ শতাংশ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে,' বলেন ওই কর্মকর্তা।
তিনি উল্লেখ করেন, মিয়ানমারে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকি বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারাও মিয়ানমারে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা করতে সমস্যায় পড়েছেন বলে জানান তিনি। বর্তমানে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশের একটি দূতাবাস এবং রাখাইনে একটি কনস্যুলার সার্ভিস রয়েছে।
'মিয়ানমারের যুদ্ধ পরিস্থিতি চীন, জাপান ও ভারতের মতো দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে। তাই তারাও সেখানে যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টা করছে,' সংঘাতের অবসান রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে পারে আভাস দিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর ঠিক একদিন আগে বলেছিলেন এ কর্মকর্তা।
কিন্তু রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যের কাছাকাছি অবস্থিত চিন রাজ্যের পালেতোয়া বিদ্রোহীদের দখলের পর যুদ্ধবিরতির সুবাদে প্রত্যাশিত স্থিতিশীল পরিস্থিতির আশা সামান্যই অবশিষ্ট থাকে। আরাকান আর্মি সাবেক আরাকান প্রদেশ নামে পরিচিত রাখাইনেও তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
তবে স্থিতিশীল পরিস্থিতিও রোহিঙ্গাদের জন্য তেমন কিছু করতে পারবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
'সামরিক জান্তার প্রত্যাবাসনে কোনো প্রকৃত আগ্রহ নেই। হয়তে তারা কিছু প্রতীকী প্রত্যাবাসন দেখাবে। সর্বোচ্চ এটুকুই তারা করতে পারে,' জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান টিবিএসকে বলেন। মিয়ানমারের সংঘাত খুব শীঘ্রই শেষ হবে না বলেও ধারণা তার।
বিদ্রোহের দীর্ঘ ইতিহাস
মিয়ানমারের স্বাধীনতার বছর ১৯৪৮ সাল থেকে দেশটিতে বিদ্রোহ চলছে। সংঘাতটি মূলত জাতিগত দ্বন্দ্ব থেকেই, যেখানে কয়েক ডজন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে।
কিন্তু ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চিকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ ও গ্রেপ্তার এবং পরবর্তীকালে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে সহিংসভাবে দমনপীড়ন চালানোর পর বিদ্রোহের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করা সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট, শান স্টেট আর্মি – সাউথ অ্যান্ড নর্থ, আরাকান আর্মি, কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স অর্গানাইজেশন, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স, চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট, কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন, তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি, ও মন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি।
প্রত্যাবাসন অগ্রাধিকারে নেই
'প্রত্যাবাসন নিয়ে বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে আগ্রহের অভাব রয়েছে — এটি তাদের জন্য এ মুহূর্তে অগ্রাধিকার নয়। এ দলের মধ্যে আরাকান আর্মি রয়েছে, যেটি ভবিষ্যতে প্রত্যাবাসন প্রশ্নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হবে,' বলেন শাহাব এনাম।
এ অধ্যাপক বলেন, ২০২১ সালের অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আইনপ্রণেতা এবং রাজনীতিবিদদের দ্বারা গঠিত নির্বাসিত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারের অংশ তার স্বীকৃতি দিতে শুরু করেছে। এ স্বীকৃতিকে উৎসাহব্যঞ্জক বলে মনে করেন তিনি।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রত্যাবাসন ইস্যুকে কেবল বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ভুল। 'প্রত্যাবাসনকে শুধু দ্বিপাক্ষিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায় না; এটিকে বহুস্তরী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া,' বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মনোযোগ কেবল সামরিক সরকারের দিকেই নয়, ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট তথা জাতীয় ঐক্য সরকার এবং আরাকান আর্মিসহ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর দিকেও থাকা উচিত।
রোহিঙ্গা ও রাখাইন জনগণের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনার দিকে ইঙ্গিত করে শাহাব এনাম বলেন, প্রত্যাবাসন অর্থবহ হওয়ার জন্য এই ব্যবধান কমাতে হবে। 'রাখাইন-রোহিঙ্গা সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আরেকটি প্রভাবক যা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে,' তিনি ব্যাখ্যা করেন।
মিয়ানমারে চলমান বিদ্রোহী তৎপরতা জান্তাকে দুর্বল করতে যাচ্ছে এবং দীর্ঘমেয়াদে একটি অর্থবহ গণতান্ত্রিক সরকার আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুটির প্রতিটি স্তরের সঙ্গে জড়িত থাকতে হবে, অধ্যাপক শাহাব এনাম বলেন।
চীন, ভারত এবং রাশিয়ার সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাতমাদোর সম্পর্কের সুবাদে উদ্ভূত শক্তি-ভারসাম্যের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সুবিধাজনক অবস্থান বিবেচনা করে বিআইপিএসএসের সভাপতি মুনিরুজ্জামানও নিকট ভবিষ্যতে কোনো অর্থবহ প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা দেখছেন না। তিনি মনে করেন না, বাংলাদেশ সরকার এ মুহূর্তে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বিদ্রোহী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে।
এর আগে শরণার্থী বিশেষজ্ঞ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দীন গত বছরের কার্যকর না হওয়া প্রত্যাবাসন পরিকল্পনাটিকে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করেননি।
'এমনকি যদি প্রতি বছর পাঁচ হাজার রোহিঙ্গাও প্রত্যাবাসন করা হয়, তবে এক মিলিয়নেরও বেশি শরণার্থীর মিয়ানমারে ফিরে যেতে ২০০ বছরেরও বেশি সময় লাগবে,' তিনি উল্লেখ করেন।
ফিরতে নিরাপদ বোধ করছে না রোহিঙ্গারা
অধ্যাপক নাসির উদ্দীন টিবিএসকে আরও বলেন, শরণার্থীদের জন্য বিদেশি অনুদান ও রেশন কমার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা সম্প্রতি মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য বেশ আগ্রহী ছিল। কিন্তু মিয়ানমারে তীব্র সংঘাতের অর্থ হচ্ছে তারা ফেরত যাওয়া নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাববে।
এ অধ্যাপক বলেন, 'নিরাপত্তার দিক থেকে মিয়ানমার এখন ২০১৭ সালের তুলনায় অনেক বেশি অস্থিতিশীল। তাই আমি মনে করি না রোহিঙ্গারা এই পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে বেশি উৎসাহী হবে।'
পরিস্থিতি সম্পর্কে অধ্যাপক নাসির উদ্দীনের ধারণার মতো রোহিঙ্গা নেতারাও একই মত পোষণ করছেন।
টেকনাফ শালবাগান ক্যাম্পের একজন কমিউনিটি নেতা (মাঝি) নূর হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'আমার এক ভাগ্নে, এক চাচাতো ভাই এবং কিছু বন্ধু এখনও আরাকানে (রাখাইনে) অবস্থান করছে। তাদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলি। তারা আমাদের সবসময় বলে যে, সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি মোটেও ভালো নয়।
'তারা বলছে, আমরা যদি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিয়ে সেখানে ফিরতে না পারি, তাহলে আরাকানে বসবাস করা খুবই কঠিন হবে। বর্তমানে সেখানে নিরাপত্তা শূন্য শতাংশ।
'বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়দের পরামর্শ হলো, কেবল যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমার সরকারকে আমাদের নাগরিকত্ব দিতে এবং পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজি করাতে পারে, তাহলেই যেন দেশে ফিরি।'
রোহিঙ্গাদের অভিবাসনের ঝুঁকি বাড়ছে
এদিকে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা, ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় সম্প্রদায়ের ওপর চাপ, রোহিঙ্গাদের স্থানীয় চাকরি নেওয়া এবং সমুদ্রপথে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করার মতো চ্যালেঞ্জ সামনে বাড়বে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা আশঙ্কা করেন।
শরণার্থীদের জন্য মানবিক অনুদান কমে যাওয়ায় ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর এই প্রথমবারের মতো শরণার্থী এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের উন্নয়ন প্রচেষ্টার সমর্থনে সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ।
বিআইপিএসএসের সভাপতি মুনিরুজ্জামান বলেন, শরণার্থী কার্যক্রমের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড় করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তবে তার ভাষায় 'মানবিক ক্লান্তি' এবং ইউক্রেন ও গাজায় নতুন মানবিক সংকটের উত্থানের কারণে বিদেশি অনুদান বৃদ্ধির সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপ শরণার্থী কার্যক্রমের মূল দাতা ছিল উল্লেখ করে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক টানাপোড়েন করা উচিত নয়।
অনেক বিশেষজ্ঞের অভিমত, রোহিঙ্গাদের সীমিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করার জন্য অস্থায়ী কাজের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে যাতে তারা সম্পূর্ণরূপে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভর না করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।
'কিন্তু এটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও বিতর্কের বিষয়। এ বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট আলোচনা হয়নি,' বলেন মুনিরুজ্জামান।