চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় আবারো বেড়েছে চুরির ঘটনা: রিক্যাপের উদ্বেগ
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরসহ বাংলাদেশের জলসীমায় সাতটি 'চুরির' ঘটনা রেকর্ড করেছে রিজিওনাল কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট অন কম্বেটিং পাইরেসি অ্যান্ড আর্মড রবারি অ্যাগেইনস্ট শিপস ইন এশিয়া (রিক্যাপ)। একইসাথে ২১টি সদস্য দেশ নিয়ে গঠিত পাইরেসি ইনফরমেশন গ্রুপটি অঞ্চলটিতে গত পাঁচ মাসে দুইটি দস্যুতার চেষ্টার ঘটনার কথাও জানিয়েছে।
রিক্যাপের বিশেষ এই প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে পাইরেসির ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। কেননা গত বছর চুরির মাত্র একটি ঘটনার তথ্যই জানা গিয়েছিল।
এক্ষেত্রে রিক্যাপের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি শিপিং সেক্টরের স্টেকহোল্ডারদের জাহাজে বাড়তি সতর্কতা অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইসাথে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশের সময় বন্দর নিয়ন্ত্রণ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে ভিএইচএফ চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখতে জাহাজ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান করা হয়েছে।
এদিকে নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম টিবিএসকে বলেন, "রিক্যাপের রিপোর্ট করা ঘটনাগুলি জলদস্যুতার ঘটনা নয়। বরং সেগুলো ছোটখাটো চুরির ঘটনা।"
তিনি আরও বলেন, "যখনই এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তখনই কোস্টগার্ড ও সংশ্লিষ্ট থানা অপরাধীদের গ্রেপ্তারের করে। একইসাথে চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধার করে।"
সাম্প্রতিক চুরির ঘটনা সম্পর্কে কমোডর আলম জানান, মিয়ানমারের সাথে সাম্প্রতিক সীমান্ত উত্তেজনার সময় দেশটির আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সেখানে মনোনিবেশ করেছিল। ফলে দুর্বৃত্তরা এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে। তবে এসব ঘটনা সম্পূর্ণভাবে কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলে যোগ করেন তিনি।
রিক্যাপ দস্যুতার ঘটনাগুলোকে চারটি ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত করেছে। যেখানে নিম্ন ক্যাটাগরি আরও গুরুতর ঘটনা নির্দেশ করে। আর উচ্চতর ক্যাটাগরিগুলো কম গুরুতর ঘটনাকে নির্দেশ করে।
এর মধ্যে বাংলাদেশের জলসীমায় ২ নম্বর ক্যাটাগরির তিনটি, ৩ নম্বর ক্যাটাগরির তিনটি ও ৪ নম্বর ক্যাটাগরির তিনটি ঘটনা ঘটেছে। তবে দস্যুতা চেষ্টার ঘটনাগুলোকে কোনো ক্যাটাগরিভুক্ত করা হয়নি।
শিপিং খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের জলসীমায় বাণিজ্যিক জাহাজে সংগঠিত ঘটনাগুলো চুরির ঘটনা হলেও এগুলো রিক্যাপের প্রতিবেদনে দস্যুতা হিসেবে উঠে আসছে। বাংলাদেশে এসব ঘটনা বেড়ে যাওয়া মেরিটাইম সেক্টরের জন্য উদ্বেগজনক। এ ধরনের ঘটনা বাড়লে বাণিজ্যিক জাহাজগুলো বাংলাদেশের বন্দরে আসতে অনীহা প্রকাশ করবে। তখন জাহাজের ভাড়া বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ টিবিএসকে বলেন, "চট্টগ্রাম বন্দর ও দেশের জলসীমায় দস্যুতার ঘটনার সাথে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি জড়িত। সম্প্রতি দুটি বছর দস্যুতার ঘটনা শূণ্যের কোটায় এসেছে। তাই এই সংখ্যা আর বাড়তে দেওয়া উচিত নয়। এগুলো প্রতিরোধে কোস্টগার্ড ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে তৎপর হতে হবে।"
এদিকে কুতুবদিয়া থানার ওসি গোলাম কবির টিবিএসকে বলেন, "বঙ্গোপসাগরে জাহাজে ডাকাতির ঘটনায় সম্প্রতি (ছয় মাসের মধ্যে) জাহাজ কর্তৃপক্ষের একটি ডাকাতি ও একটি চুরির মামলা হয়েছে। ডাকাতি চেষ্টার ঘটনায় প্রায় ২০ জন আসামিকে গ্রেফতার ও মালামাল উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনার সঙ্গে সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত।"
ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর (আইএমবি) ২০০৬ সালের একটি প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম বন্দরকে জলদস্যু আক্রমণের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক বন্দর ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে দস্যুতার ঘটনা ঘটেছিল ৪৭টি।
তবে ২০১২ সালের জানুয়ারিতে আইএমবি ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে তাদের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জলদস্যুপ্রবণ দেশের তালিকা থেকে বাদ দেয়। নিরাপত্তা পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে কমতে থাকে জাহাজের ভাড়া ও ইনস্যুরেন্সের প্রিমিয়ামও।
এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরের সুরক্ষা বাড়াতে ২০১৩ সালে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সুইডেন থেকে আমদানি করা হয় ভিটিএমএস পদ্ধতি। মনিটরিংয়ের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের পুরো চ্যানেল ও তার আশপাশের এলাকা ঘিরে পতেঙ্গা, বন্দর ভবন, সদরঘাট, রুবি গেইট, আনোয়ারাসহ বিভিন্ন স্থানে ৪৬টি অতি-ক্ষমতাসম্পন্ন ভিডিও ক্যামেরা (আইআর) স্থাপন করা হয়।
এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর সীমানার ১০ নটিক্যাল মাইল অংশ ভিডিও মনিটরিংয়ের আওতায় চলে আসে। এরপর চট্টগ্রাম বন্দরে দস্যুতার ঘটনা কমে আসে।