কেন আবার ‘আয়নাবাজি’!
২০১৬ সালে মুক্তি পায় বাংলা ছবি 'আয়নাবাজি'। অমিতাভ রেজা চৌধুরী পরিচালনায় ছবিটিতে অভিনয় করেন চঞ্চল চৌধুরী, মাসুমা রহমান নাবিলা, পার্থ বড়ুয়াসহ অনেকেই। ছবিটি দর্শকপ্রিয়তা ও বাণিজ্যিক সাফল্য পায়।
চার বছর পর আবারও ফিরে আসছে 'আয়নাবাজি'। মাঝে অবশ্য 'আয়নাবাজি অরিজিনাল সিরিজ' নামে সাতটি টেলিভিশন নাটক প্রচার হয়েছে। সেই 'আয়নাবাজি' আবার ফিরে আসছে নতুন আঙ্গিকে। পরিচালক, অভিনয় শিল্পী একই। তবে এবার সিনেমা বা নাটক নয়, ওয়েব সিরিজ হিসেবেই পর্দায় হাজির হচ্ছে এটি। নাম দেওয়া হয়েছে 'ঘরে বসে আয়নাবাজি'।
কেন এই নাম? কেনই-বা এ উদ্যোগ? ব্যাপারটা পরিষ্কার করেছেন 'আয়নাবাজি'র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টপ অব মাইন্ডের ফাউন্ডার চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন আদিল। তিনি বলেন, আমরা বেসরকারি সংস্থা ব্রাকের সঙ্গে কাজ করি। সেখান থেকেই আমাদের বলা হলো, সচেতনতামূলক ভিডিও বা কনটেন্ট নির্মাণের জন্য।
তিনি আরও বলেন, আমরা শুরুতে অন্য কয়েকটি গল্প নিয়ে ভেবেছিলাম। তারপর মাথায় এলো, 'আয়নাবাজি' তো মানুষের মনে গেথে আছে। সেটাকেই কাজে লাগাই। আমরা প্রপোজাল দিই। সেটা তাদেরও পছন্দ হয়ে যায়। তারপর ওয়েব সিরিজটির কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।
কাজের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আদিল বলেন, এই সময় তো বাইরে গিয়ে শুটিং করার অবস্থা নেই। তাই আমাদের শুরু থেকেই পরিকল্পনা ছিল এমনভাবে গল্পটা ভাবব, যেন ঘরে বসেই শুটিং করে ফেলা যায়। অমিতাভ সেভাবেই পুরো পরিকল্পনা সাজিয়েছেন। স্ক্রিপ্ট লেখা, শর্ট ডিভিশন, ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল সব কিছুই বিশদভাবে অনলাইনে ব্রিফ করা হয়েছে। এ কারণে নামটাও দেওয়া হয়েছে 'ঘরে বসে আয়নাবাজি'।
তিনি জানান, এবার সিজন ১ তৈরি হয়েছে তিন পর্ব দিয়ে। আগামীতে চরিত্রগুলি ঠিক রেখে 'ঘরে বসে আয়নাবাজি'র আরও সিজন চলে আসবে। যোগ হতে পারে নতুন চরিত্রও।
'আয়নাবাজি'র প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। চরিত্রের নাম ছিল আয়না। এবার সেই আয়নাকে শুটিং করতে হলো ঘরে বসেই। মূল 'আয়নাবাজি'তে ক্যামেরার পেছনে দক্ষ সিনেমাটোগ্রাফার রাশেদ জামান থাকলেও এবার চঞ্চল চৌধুরীর সামনে ছিল ছেলে শৈশব রৌদ্দুর শুদ্ধ। ১০ বছর বয়সী ছেলেই পরিচালকও হয়েছে চঞ্চলের। কেমন লাগল ছেলের সামনে আয়না চরিত্রে অভিনয় করতে?
চঞ্চল চৌধুরী বললেন, 'এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা আমার জন্য। করোনাকালে ছেলের ক্যামেরার সামনে অভিনয় করতে হবে ভাবিনি।'
জানালেন, শুরুতে পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী বেশ কিছু শট ডিভিশন বুঝিয়ে দিয়েছেন। এই সময় বাসার বিভিন্ন জায়গার ছবি তুলে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন চঞ্চল। সেখান থেকেই শট নেওয়ার জায়াগাটা চূড়ান্ত হয়েছে। তারপর ছেলেকে শুরুতে দাঁড় করিয়ে নিজে শট নিয়েছেন। সেটা পাঠিয়ে দিয়েছেন। তারপর আবার ছেলেকে দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে শট নিতে হবে। এরপর শুদ্ধ দাড়িয়েছে বাবা চঞ্চলের ক্যামেরার পেছনে। অবশ্য ক্যামেরা বলতে নিজের আইফোনটাই ব্যাবহার করেছেন চঞ্চল।
চঞ্চল বললেন, টানা তিনদিন বাসায় শুটিং করেছি। আমার ছেলে দারুণ উৎসাহ দিয়েছে। প্রতিদিন আমাকে বলত, বাবা দ্রুত ঘুম থেকে উঠতে হবে। দ্রুত শেষ করতে হবে।
'আয়নাবাজি'র অভিনেত্রী নাবিলারও একই রকম অভিজ্ঞতা। তবে তিনি প্রথমবার বাসায় শুটিং করছেন, এমন নয়। কদিন আগে গ্রামীণফোনের একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন বাসায় থেকেই। তাই অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছিল এবারের শুটিং। অবশ্য 'আয়নাবাজি' বলে চেষ্টাটা আলাদা ছিল। আর এটা সহজ হয়ে গেছে অমিতাভ রেজার কল্যাণে। অনলাইনে ভিডিও কলের মাধ্যমে ব্রিফিং করা, শট ডিভিশন করে দেওয়া... সবই দেখিয়ে দিয়েছেন অমিতাভ।
নাবিলা বললেন, আবার 'আয়নাবাজি' ফিরে আসছে- এটাই আমার জন্য আনন্দের খবর। তবে এবারের গল্পটাও বেশ ভালো। সবাই খুব উপভোগ করবে। করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করার গল্প।
প্রযোজক আদিল আরও জানান, 'আয়নাবাজি' ওয়েব সিরিজের পর্বগুলো থাকছে সবার জন্য উন্মুক্ত। এক সপ্তাহের মধ্যে এগুলো উন্মুক্ত হবে ইউটিউব ও ফেসবুকে। এরইমধ্যে শুটিং প্রক্রিয়ার একটা ভিডিও এসেছে। সাড়াও পড়েছে বেশ।
পরিচালক অমিতাভ জানান জানান, চলমান করোনাকালের কথা বিবেচনা করেই তাদের এই উদ্যোগ। যার সঙ্গে রয়েছে এনজিও ব্র্যাক ও অস্ট্রেলিয়া সরকার। মূলত, 'আয়নাবাজি' সিনেমার তিনটি প্রধান চরিত্রকে নিয়ে মানুষকে সচেতন ও সাহস জোগানোর পরিকল্পনা থেকে এই ওয়েব সিরিজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।