মেলানিয়ার জ্যাকেট এবং ট্রাম্পের তাৎপর্যপূর্ণ আরও নয় ছবি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী ২০শে জানুয়ারি। শপথ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন রাষ্ট্রপ্রধানকে বরণ করে নিতে চলেছে।
প্রেসিডেন্সির আর একদিন বাকি থাকতে বিবিসি বাছাই করে নিয়েছে ট্রাম্পের সময়ের আলোচিত-সমালোচিত দশটি ছবি। এখানে যেমন বিশ্বনেতাদের সাথে ট্রাম্পের সাক্ষাতের ছবি রয়েছে তেমনি হোয়াইট হাউসের ভেতরে তারকা অতিথিদের সাথে কাটানো মুহূর্তও স্থান পেয়েছে।
এ গণজমায়েতের ছবিটি ঠিক চার বছর আগের ২০ জানুয়ারিতে তোলা; ট্রাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আগত মানুষের ভিড়।
অনুষ্ঠানের পরের দিন, প্রেসিডেন্ট গণমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন, টিভি ফুটেজ এবং ফটোগুলোতে লোক জমায়েতের উপস্থিতি সম্পর্কে মিডিয়া প্রকৃত তথ্য ফুটিয়ে তোলেনি। লোকের ভিড় তুলনামূলক কম দেখানো হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি শন স্পাইসার গণমাধ্যমের সামনে সেসময় দাবি করে বলেন, "এটি কোন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখা সবচেয়ে বড় দর্শক সমাগম"।
সেদিনের ছবিকে আবার ২০০৯ সালে বারাক ওবামার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ছবির সাথে তুলনা করায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন । ওবামার অনুষ্ঠানে আগত জনসমাগমকে নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে বড় করে দেখানো হয়েছিল মিডিয়াতে!
ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলের ডানপন্থী এবং শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের এই মিছিলের ছবিটি ২০১৭ এর আগস্টে তোলা।
শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলের রাস্তায় নেমে আসেন শত শত বিক্ষোভকারী। শার্লটসভিলের সহিংসতার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের বর্ণবাদী আচরণকে দায়ী করা হয়।
র্যালিতে প্রতিবাদকারীদের ভিড়ের মধ্যে অতর্কিতে একটি গাড়ি ঢুকে পড়লে এক মহিলা নিহত ও ১৯ জন আহত হয়।
শার্লটসভিলের ঘটনার নিন্দা জানাতে গিয়ে 'সবপক্ষকে' দোষারোপ করায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নানা সময় আমেরিকার মিত্রদের সাথে তর্কাতর্কি করে খবরের শিরোনাম হয়েছেন ; জুন ২০১৮ তে কানাডার জি-৭ সামিটের এ ছবিটি তার উল্লেখযোগ্য একটি প্রমাণ।
সম্মেলনের ঠিক আগ দিয়ে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মেক্সিকো এবং কানাডার থেকে আমদানিকৃত স্টিল এবং এলুমিনিয়ামের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেন।
ফলে নেতাদের মাঝে এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং সামিটের আগেই রাষ্ট্রনেতাদের মাঝে মতবিভেদ স্পষ্ট ওঠে।
মি ট্রাম্প সবার আগে সম্মেলন ত্যাগ করেন এবং মন্তব্য করেন যে, "আমেরিকা হচ্ছে সেই পিগি ব্যাঙ্ক যাকে সবাই লুটে যাচ্ছে"।
২০১৮ সালের জুনে তোলা এ ছবিতে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে একটি জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে, যাতে লেখা, "আমি সত্যিই পরোয়া করি না, আপনি করেন কি?", এই জ্যাকেটটি তিনি পরেন অধিবাসী শিশুদের ডিটেনশান সেন্টার পরিদর্শনের সময়।
আহামরি না হলেও সে জ্যাকেটটি পরে ফার্স্ট লেডি এমন এক সময়ে ক্যামেরায় ধরা পড়েন যখন মেক্সিকো সীমান্তে শিশুদেরকে তাদের অভিভাবকের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দেবার জন্য ট্রাম্প সমালোচিত হচ্ছেন।
অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের 'জিরো টলারেন্স' নীতির অংশ হিসেবে শিশুদেরকে তাদের বাবা মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে ওই কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল।
মিসেস ট্রাম্পের একজন মুখপাত্র জানান, জ্যাকেটের এ লেখার পেছনে কোন লুকায়িত বার্তা ছিল না।
যদিও পরে মেলানিয়া নিজেই স্বীকার করেন যে, "এটা ছিল সেসব মানুষ এবং বামপন্থী গণমাধ্যমের জন্য যারা আমাকে সমালোচনার তীরে বারবার বিদ্ধ করেন। তাদের আমি দেখাতে চাই যে, আমি এসবের পরোয়া করি না। আপনার যা ইচ্ছা বলতে পারেন তবে আমার যা সঠিক মনে হবে আমি তা করতেই থাকব।"
'পেলোসির করতালি' শীর্ষক এই ছবিটি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি ২০১৯ এ ট্রাম্পের স্টেট অফ ইউনিয়ন ভাষণের এক পর্যায়ে ট্রাম্পের পেছনে থাকা পেলোসিকে উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দিতে দেখা যায়।
ডেমোক্র্যাট স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্টের মধ্যে আগে থেকেই শীতলাবস্থা বিরাজ করছিল; এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প ও পেলোসির দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ভিডিওতে দেখা যায় ৮২ মিনিটের সেই ভাষণের এক পর্যায়ে পেলোসি তালি বাজান এবং বেশ তীর্যক ভঙ্গিতেই ট্রাম্পের দিকে তাকান। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সেই তালির অংশটুকু।
জুন ২০১৯ এর ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়াকে পৃথক করা সীমান্তরেখায় পা রাখছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনিই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি এই রেখা অতিক্রম করলেন।
দুই কোরিয়ার সীমান্তে অবস্থিত 'ডি-মিলিটারাইজড জোন' (ডিএমজেড)-এ ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের দেখা হয়।
এরপরে আরও একাধিকবার এ দুই বিশ্বনেতার সাক্ষাত হলেও তাদের বৈঠকগুলো উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচী নিয়ে কোন আশার আলো জাগাতে পারে নি।
হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে কয়েদি আইন সংস্কার নিয়ে কথা বলছেন কিম কার্দাশিয়ান ওয়েস্ট।
কিম কার্দাশিয়ান ওয়েস্টের আবেদনে এক দাদিমার সাজা মওকুফ করে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ড্রাগ সংক্রান্ত অহিংস অপরাধের জন্য অ্যালিস মেরি জনসন নামক সে নারীর যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা হয়েছিল।
ইতিমধ্যে ট্রাম্প ৯৮ জনকে ক্ষমা করেছেন এবং ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হবার আগে আরও ১০০ জনকে ক্ষমা করার কথা।
গির্জার সামনে বাইবেল হাতে নিয়ে তোলা ট্রাম্পের এ ছবিটি গত বছরের জুনে তোলা।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের শহর মিনিয়াপোলিসে পুলিশের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন জর্জ ফ্লয়েড নামে একজন কৃষ্ণাঙ্গ। এরপরই বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে।
সেদিন হোয়াইট হাউসের বাইরে বিক্ষোভকারীদের জোরপূর্বক সরিয়ে চার্চে গিয়ে বাইবেল হাতে ছবি তুলেন প্রেসিডেন্ট।
তবে তার এই আচরণ তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়; ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগ এনে অনেকেই তার উপর ক্ষুদ্ধ হয়।
জো বাইডেনের সাথে ট্রাম্পের প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের দৃশ্য এটি। গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ওহাইও'র ক্লিভল্যান্ডে সেদিন উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের পরিবারের সদস্যবৃন্দ।
উপস্থিত সবার ওপর মাস্ক পরার নির্দেশ থাকলেও ট্রাম্প পরিবার তা মানেন নি। ট্রাম্প যেভাবে প্রথম থেকেই করোনাভাইরাসকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে গেছেন, তার পরিবারের সদস্যবৃন্দ যেন তার প্রতি সমর্থন থেকেই এভাবে মাস্ক ছাড়া জনসম্মুখে আসেন।
এই বিতর্কের কিছুদিন পর ট্রাম্প নিজে কোভিড 'পজিটিভ' সনাক্ত হন।
মার্কিন ক্যাপিটল বিল্ডিং এ অবস্থানরত ট্রাম্প সমর্থকদের এ ছবি ছাপিয়ে গেছে গত চার বছর তার উপর আসা সকল অভিযোগের তীরকে।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে হোয়াইট হাউসের বাইরে ট্রাম্পের দেয়া ৭০ মিনিটের একটি ভাষণ শেষে তার উগ্র সমর্থকেরা মার্কিন কংগ্রেস ভবনে হামলা চালায়।
এ দাঙ্গায় একজন পুলিশ অফিসারসহ ৫ জন নিহত হন।
দাঙ্গায় উসকানির অভিযোগে ইতিহাসের প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে দুইবার অভিশংসনের লজ্জা মাথা পেতে নিতে হয়।