জিডিপি’র লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সন্দিহান বিরোধীদলীয় সাংসদরা
জিডিপি'র লক্ষ্যমাত্রা যথারীতি অতিরঞ্জিত মনে হচ্ছে বলে উল্লেখ করে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সন্দেহ প্রকাশ করেছে বিরোধীদলীয় নীতিনির্ধারকেরা।
সোমবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারক মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, "বর্তমান বিশ্বে যে প্রেক্ষাপট তাতে জিডিপি'র ৭.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতি যেখানে টালমাটাল, আমদানি কমাতে হবে, বিনিয়োগ বাড়বে না, সেখানে কিভাবে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে?"
"এছাড়া অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতির হার ৫.৬ শতাংশের মধ্যে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারের কোনো দৃঢ় পদক্ষেপ দেখা যায় না। মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো দিকনির্দেশনা নেই বাজেটে," যোগ করেন তিনি।
মাসুদ উদ্দিন আরো বলেন, প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের বড় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় কিন্তু তা অর্জন হয় না।
তার অভিযোগ, অর্থ পাচারের খবর মিডিয়াতে দেখা যায়। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে এর কোনো সদুত্তর জনগণ কোনদিন পায় না। হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থলুটসহ একাধিক বড় বড় ঘটনার কোনো সুরাহা হয়নি।
পিপলস লিজিং কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে হাজার হাজার গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করেছে উল্লেখ করে এ ব্যাপারে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের অর্থ ফেরত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান তিনি।
"বাজেটের সবথেকে অনৈতিক দিক হচ্ছে পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগ করে দেওয়া। এই বিষয়টি বাংলাদেশে বিদ্যমান দুটি আইনের--দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২—সাথে সাংঘর্ষিক। এটা সংবিধানের সাথেও সাংঘর্ষিক," বলেন তিনি।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান মাসুদ উদ্দিন।
"প্রস্তাবিত বাজেটে বেশকিছু অনিশ্চয়তা আছে। মূল্যস্ফীতির চাপ ও সরকারের অভ্যন্তরীণ ব্যাংক নির্ভরতা বেসরকারি খাতকে ভোগাবে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয় আছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনে সন্দেহ আছে। ভর্তুকির বরাদ্দ স্পষ্ট না," যোগ করেন এই নেতা।
এদিকে সরকারের রাজস্ব বাড়াতে ও তামাক কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমাতে তামাকের ওপর কর বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল।
তিনি বলেন, "রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ব এখনও সামলে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে দেশের পোশাক রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপও বাড়বে। রেমিটেন্সও কমবে," বলেন তিনি।
রানা মোহাম্মদ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে আরও শক্তিশালী করতে বরাদ্দ বাড়ানোরও দাবি জানান।
বিকল্প ধারা বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, গত অর্থবছরের শেষ ১০ মাসে এডিপির ৫০ শতাংশ বাস্তবায়নে তিনি হতাশ।
মান্নান আরো বলেন, গত দুই মাসে তাড়াহুড়ো করে ব্যয়ের কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের মান নিশ্চিত করা যায়নি।
তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে বলেন, এ মন্ত্রণালয়ে এডিপি বাস্তবায়নের চিত্র সবচেয়ে খারাপ।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে তিনি বলেন, "এই ভঙ্গুর বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ৭.৫ শতাংশ জিডিপি এবং ৫.৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য নির্ধারণ করা এই বাজেটের পূর্ণ বাস্তবায়ন নিয়ে আমি সন্দিহান।"